কলকাতা টেস্টে জাঁকিয়ে বসতে শুরু করেছে ভারত। রোহিত শর্মার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধোনি-অশ্বিনদের লড়াই তিরাশি রানে পাঁচ উইকেট খুইয়ে বসা টিমকে দুর্দান্ত ভাবে ম্যাচে ফিরিয়ে আনল এ দিন। আমার মতে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এই টেস্টে কর্তৃত্ব করার সেরা সুযোগটা হাতছাড়া করে ফেলেছে।
দ্বিতীয় দিনের প্রথম দেড় ঘণ্টায় যদিও ইডেনে দাপট ছিল ডারেন স্যামি বাহিনীরই। ওই রকম একটা উচ্চতা থেকে শেন শিলিংফোর্ডের অফ স্পিন আর দুসরার আক্রমণে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের দিশাহারা অবস্থা ছিল। এর মধ্যে সচিন তেন্ডুলকরের ট্র্যাজিক আউটে পরিস্থিতি আরও করুণ হয়ে ওঠে ভারতের জন্য। বলতেই হচ্ছে, আম্পায়ার নাইজেল লং যথেষ্ট অবিচারই করলেন সচিনের প্রতি।
এর পরই কিন্তু পাশা পাল্টে গেল। পাল্টা চাপে পড়তে শুরু করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিং। প্রতিটা ইঞ্চিতে, প্রতিটা বলে। ক্যাপ্টেন ধোনি তো আক্রমণাত্মক শট আর খুচরো রানের জোড়া ধাক্কায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফিল্ডিংয়ের দফা রফা করে ছেড়েছিল। অন্য প্রান্তে রোহিত তখন একেবারে মাটি কামড়ে পড়ে। দেশের হয়ে এই টেস্ট অভিষেকের অপেক্ষায় ওকে প্রায় ছ’বছর সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। এত দীর্ঘ তপস্যার পর পাওয়া সুযোগটা ও মোটেই তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বাজে শটে নষ্ট করে আসতে রাজি ছিল না।
অবশ্য নড়বড়ে শুরুর ধাক্কা সামলে ভারতীয় ইনিংসকে ধোনি যদি মজবুত জমিতে দাঁড় করিয়ে থাকে, তা হলে ইনিংস গড়ার কাজটা করল রবি অশ্বিন। নিখুঁত খেলল ছেলেটা। খারাপ শট প্রায় মারেইনি। রোহিতকেও মারতে দেয়নি। আর তাতেই দিনের শেষে এই দু’জন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কোণঠাসা করে ফেলতে পেরেছে।
রোহিত যে ব্যাটিংটা করল, এক কথায় অনবদ্য! সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ল ওর সংযমটা। আগ বাড়িয়ে শট মারার চেষ্টা প্রায় করেইনি। শুধু উইকেটে টিকে থাকার চেষ্টা করে গিয়েছে। যাতে দিনের শেষে ভারতের ইনিংসকে ও একটা ভাল জায়গায় পৌঁছে দিতে পারে। এমনিতে ওয়ান ডে ক্রিকেটে রোহিত অসাধারণ। তবে এ দিন ও দেখিয়ে দিল, টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পরীক্ষাতেও সসম্মানে উত্তীর্ণ হওয়ার ধৈর্য আর মানসিকতাও ওর রয়েছে।
আক্রমণ সাজানো আর পরিস্থিতি অনুযায়ী রণকৌশল পাল্টানোর ক্ষেত্রে খামতি ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। মার্লন স্যামুয়েলস বা ক্রিস গেইলকে দিয়ে কয়েকটা ওভার অবশ্যই করানো উচিত ছিল স্যামির।
তৃতীয় দিন নিশ্চিত ভাবেই ভারত যতক্ষণ সম্ভব ব্যাট করতে চাইবে। বৃহস্পতিবার কঠিন পরিস্থিতি থেকে যে ভাবে ভারত ঘুরে দাঁড়াল সেটা কিন্তু একটা দলের আত্মবিশ্বাসের লক্ষণ। সব মিলিয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে এখন লম্বা লড়াই। |