|
|
|
|
‘ইডেনে আমি কিন্তু মনে রাখব বোলার সচিনকে’
রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় • কলকাতা |
কলকাতায় এলে রাহুল দ্রাবিড়ের দু’টো জিনিস মনে পড়বেই পড়বে। প্রথমটা অবশ্যই ইডেন এবং তার সঙ্গে জড়িত নিজের কয়েকটা ইনিংস, যা বহু দিন ধরে লোকগাথার পর্যায়ে। দ্বিতীয়টা বাঙালির বড় প্রিয় রসনামাছ ও মিষ্টি দই।
কলকাতায় এলে রাহুল দ্রাবিড়ের ঠিক দু’টো ঘটনা দিয়ে সচিন তেন্ডুলকরকে মনে পড়বে। প্রথমটা, ২০০১-এর ইডেনে ঐতিহাসিক ভারত-অস্ট্রেলিয়া যুদ্ধ এবং গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে বোলার সচিনের দু’টো মোক্ষম উইকেট। স্মৃতির সরণি ধরে আরও একটু পিছোলে মনে পড়ে দ্বিতীয় ঘটনা সাল ১৯৯৪। চ্যালেঞ্জার ট্রফির ম্যাচ। নিজের গায়ে তখনও ভারতীয় দলের জার্সি ওঠেনি। কিন্তু ইডেনের গ্যালারিতে রাহুল সে দিন দেখে গিয়েছিলেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে সচিনের বোলার-সংহার কাকে বলে!
বৃহস্পতিবার কলকাতায় এসে রাহুল দ্রাবিড় নিজেও একটা ব্যাপার দেখে গেলেন। আজও এই শহরটার তাঁকে ততটাই মনে পড়ে, যতটা পড়ত ধ্রুপদী কর্নাটকীর ব্যাট-প্যাড-গ্লাভস সমেত ইডেনের ‘ইন্ডিয়া’ ড্রেসিংরুম থেকে বেরনোর দিনগুলোয়। তিনি আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেন না। আইপিএল-পৃথিবী থেকেও চিরবিদায় নিয়েছেন। তবু এ দিন দুপুর-দুপুর কমেন্ট্রি বক্সে ঢুকে পড়ার পর যে ভাবে তাঁকে নিয়ে রিপোর্টারদের ছুটোছুটি চলল, যে ভাবে সচিনকে নিয়ে সিএবি-র ছবি প্রদর্শনীতে ঢুকে মিনিটখানেকের মধ্যে ঘেরাও হয়ে গেলেন রাহুল শরদ দ্রাবিড়, সেটা দেখলে মনে হবে বঙ্গবাসী বোধহয় তাঁকে আজও সেই মর্যাদাটা দেয়, যা তারা প্রাপ্য রাখে এক বাঁ-হাতি বঙ্গসন্তানের জন্য। তা সে রাহুল ক্রিকেট ছেড়ে দিন, সচিন-ঘোরের মধ্যে এসে সিএবি-র ছবি প্রদর্শনীতে এসে আবির্ভূত হন— কিছু যায় আসে না।
|
ইডেনের অন্য পিচে রাহুল দ্রাবিড়। বৃহস্পতিবার। ছবি: উৎপল সরকার। |
“ইডেন তো আমাকে কম কিছু দেয়ওনি। কর্নাটকের অনূর্ধ্ব-উনিশের হয়ে খেলতে এসেও এখানে সেঞ্চুরি করেছিলাম,” এ দিন সন্ধেয় বলছিলেন দ্রাবিড়। তাঁর এখনও মনে হয়, ইডেন তাঁকে কখনও আশ্চর্য করেনি, এমন হয়নি। “প্রচুর মনে রাখার মতো ইনিংস আমার আছে ইডেনে। ভিভিএসের সঙ্গে ওই সেঞ্চুরিটা ছাড়াও পাকিস্তানের সঙ্গে দু’ইনিংসে সেঞ্চুরি আছে,” আচ্ছন্ন গলায় বলে ফেলেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক।
আর সচিন? ইডেনে তাঁর কোন ইনিংসটা দ্রাবিড়ের মনে পড়ে প্রথমে? “যে সচিনকে আমরা বুধবার দেখলাম, তাকে আমার বেশি মনে পড়ে। মানে, বোলার সচিনকে। ২০০১-এর টেস্ট যেমন। ওই টেস্টে আমাদের দুটো দুর্দান্ত ব্রেক থ্রু দিয়েছিল সচিন। গিলক্রিস্ট আর হেডেনকে তুলে।” একটু থেমে সংযোজন, “সচিনকে নিয়ে আমার কেন, সবার মধ্যেই আবেগ কাজ করে। ওর এই শেষ দু’টো টেস্টে তো আরও করবে। সচিনের কেরিয়ারের একটা অংশে আমি নিজেও ছিলাম। দেখেছি, সচিন কিছু করলে তার প্রভাবটা বাকিদের উপর কী ভাবে পড়ে।” ইডেনে বসে রোহিত শর্মার রাজকীয় টেস্ট অভিষেক দেখার পর মুম্বই ক্রিকেটের বর্তমান পরবর্তীকালে সচিনের ছেড়ে যাওয়া চার নম্বরের চেয়ারে বসতে পারবেন কি না, দ্রাবিড় সে সবে ঢুকতে চান না। বলে দেন, “একটা ইনিংস দেখে সচিন বনাম রোহিত, এ সব বলার মানে হয় না। কিন্তু এখন যারা এসেছে, যেমন পূজারা, বিরাট, রোহিত এরা প্রত্যেকে ভাল ক্রিকেটার। প্রচুর রান করে তবে এরা ঢুকেছে। কিন্তু আমরা মিডল অর্ডারে যে নির্ভরতাটা এনেছিলাম, সেটা এ বার আনা বিরাট, রোহিতদের দায়িত্ব।”
দ্রাবিড়ের ‘আমরা’ অর্থাৎ— ভারতীয় ক্রিকেটের এক সময়ের পঞ্চপাণ্ডব। সচিন, সৌরভ, কুম্বলে, লক্ষ্মণ এবং তিনি নিজে। দ্রাবিড়ের কথায় যাঁরা মাঝে মাঝে সফল হতেন। কখনও ব্যর্থ। কিন্তু সব সময় তাঁদের চেষ্টাটা একশো শতাংশ সৎ থাকত।
যে ইচ্ছে দ্রাবিড় এখন বিরাট-রোহিতদের মধ্যেও দেখতে পাচ্ছেন। |
|
|
|
|
|