|
|
|
|
সাকলিনের পাল্টা, বেদী জানেন চাকার কাকে বলে? |
বেদীর মিসাইল, ছেলেটা তো স্রেফ ছুড়ে উইকেট পেল
রাজীব ঘোষ • কলকাতা |
ইডেনের বাইশ গজে তাঁর প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীকে আউট করে ফিরে এসেও স্বস্তিতে থাকার উপায় নেই শেন শিলিংফোর্ডের। কারণ মাঠের বাইরে আরও এক প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীকে এ বার সামলাতে হবে ক্যারিবিয়ান অফ স্পিনারকে।
যাঁর নাম বিষেণ সিংহ বেদী। যিনি বৃহস্পতিবার টিভি-তে শিলিংফোর্ডের বোলিং দেখার পর পরিষ্কার বলে দিচ্ছেন, “এই ছেলেটা তো চাকার।”
এ দিনের সচিন-ঘাতক অবশ্য নতুন এই লড়াইয়ে পাশে পেয়ে যাচ্ছেন তাঁর ‘গুরু’-কে। যাঁর কাছে কিছু দিন আগেই দুসরার পাঠ নিয়ে এসেছেন শিলিংফোর্ড। বেদীর অভিযোগ শোনার পর আনন্দবাজারকে লন্ডন থেকে সাকলিন মুস্তাক পাল্টা প্রশ্ন করলেন, “উনি কি জানেন চাকার কাকে বলে?”
|
ইডেনকে স্তব্ধ করে দেওয়া সেই দৃশ্য। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
এক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান স্পিনারকে নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের এই অভূতপূর্ব লড়াই নতুন মাত্রা দিচ্ছে শিলিংফোর্ড বিতর্ককে। শিলিংফোর্ডের বিরুদ্ধে এর আগেও চাকিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। আইসিসি অতীতে তাঁকে সাসপেন্ডও করে। এ দিন খেলা শেষে ভারতের কিংবদন্তি স্পিনারকে মোবাইলে ধরা হলে বেদী স্পষ্ট বলে দেন, “সচিনের আউটের ঘটনায় আসল খলনায়ক আম্পায়ার নাইজেল লং নন, বরং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওই শিলিংফোর্ড। ও তো আসলে ‘চাকার’। সমানে ছুড়ে ছুড়ে বল করে গেল ছেলেটা এবং উইকেট তুলে নিল। ওর মতো বোলারের বলে সচিনের মতো কিংবদন্তির আউট হওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।”
স্যর গ্যারি সোবার্সের দেশের নতুন স্পিন প্রতিভাকে নিয়ে ওঠা এই অভিযোগে হতভম্ব শিলিংফোর্ডের শিক্ষাগুরু সাকলিন। বেদীর এই অভিযোগ শুনে প্রায় আকাশ থেকে পড়লেন প্রাক্তন পাক স্পিনার। ফোনে যথেষ্ট উত্তেজিত শোনাল তাঁকে, “বেদীসাবকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করি। উনি স্পিনের কিংবদন্তি। কিন্তু উনি বরং একটু ভাল করে জেনে নিন কাকে সত্যি চাকার বলে।” |
|
বেদীর অভিযোগ, “শিলিংফোর্ডের প্রতিটা বলে ওর কনুই ভেঙে যাচ্ছে।” ভারত সফরের আগে ক্যারিবিয়ান অফিকে বার্বেডোজে গিয়ে তিন সপ্তাহ ধরে ‘দুসরা’ শিখিয়ে আসা সাকলিনের কথায়, “কনুই ভাঙলেই ছুড়ে বল করা হয়! কনুই ভাঙার একটা সীমা বেঁধে দিয়েছে আইসিসি। সেই সীমা লঙ্ঘন করলে তবেই তাকে ‘চাকার’ বলা যায়। এই সীমার কথাটা বোধহয় জানেন না বেদীসাব। তাই এত বড় অভিযোগ করলেন। আমি শেনকে টানা তিন সপ্তাহ ধরে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আমার এক দিনের জন্যও মনে হয়নি ও ছুড়ে বল করে।”
ছোড়ার অভিযোগ যে শিলিংফোর্ডের বিরুদ্ধে এই প্রথম, তা কিন্তু নয়। ২০১০-এ দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টেই গ্রেম স্মিথ, আলভিরো পিটারসেন, জাক কালিস এবং হাসিম আমলাকে আউট করে হইচই ফেলে দেওয়ার পর শ্রীলঙ্কা টেস্টের সময় তাঁর বিরুদ্ধে ‘সাসপেক্ট অ্যাকশন’-এর অভিযোগ ওঠে। তার পরই সাত মাসের জন্য আইসিসি সাসপেন্ড করে দেয় এই স্পিনারকে। অ্যাকশন শুধরে ফিরে এসে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে দুই টেস্টে ১৯ উইকেট নেন ৩০ বছর বয়সি এই ডমিনিকান।
ইডেনে তাঁর ১১তম টেস্ট। এর মধ্যেই ৫২টি উইকেট নিয়ে ফেলেছেন। বৃহস্পতিবার সচিনকে ভুল আউট করার পরও যে অনুতপ্ত, তা বিকেলে ইডেনে খেলার পর তাঁকে দেখে একেবারেই মনে হল না। ওই বলটায় আবেদন করা উচিত হয়েছিল কি না, প্রশ্নের জবাবে বললেন, “ওই অবস্থায় যে কোনও বোলারেরই আউটের আবেদন করা উচিত। আমিও তা-ই করেছি। ড্রেসিংরুমে ফিরে এসে রিপ্লে-টা দেখলাম। আমার কাজ যেমন আমি করেছি, তেমন আম্পায়ারও তাঁর কাজ করেছেন।” |
বার্বেডোজে সাকলিনের শিবিরে |
সাকলিনের দুসরা-শিক্ষা নিয়ে শিলিংফোর্ড বলেন, “সাকি আমায় শুধু যে দুসরাটা শিখিয়েছেন, তা নয়। টেস্টের আগে নিজেকে মানসিকভাবে তৈরি হতেও শিখিয়েছেন।” ভারত সফরে আসার আগে বার্বেডোজের স্পিন শিবিরে চলে সাকলিনের ক্লাস। সেখানে আর এক স্পিনার বীরাস্বামী পেরমলও ছিলেন। শিলিংফোর্ড সেই ক্লিনিকের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, “সাকির হাতের জয়েন্ট ও গড়ন সম্পূর্ণ অন্য ধরণের। আমার সঙ্গে একেবারেই মেলে না। উনি যে ভাবে গ্রিপ করেন, সে ভাবে গ্রিপ করা তাই আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। কিন্তু আমার হাতের গড়ন অনুযায়ীই চমৎকার ভাবে ‘দুসরা’-টা করতে শিখিয়ে দেন আমাকে। দারুণ শিক্ষক উনি।”
আর ছাত্র সম্পর্কে সাকলিনের মন্তব্য, “দেখে নেবেন, ও ব্যাটসম্যানদের ত্রাস হয়ে উঠবে। সত্যিকারের প্রতিভা আছে ছেলেটার।” এ দিন ইডেনে শিলিংফোর্ডের বোলিং দেখে সুনীল গাওস্কর মন্তব্য করেন, “টেস্ট ক্রিকেটে বিপক্ষকে একাই চাপে ফেলে দেওয়ার মতো স্পিনার পেয়ে গিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শিলিংফোর্ড সেই স্পিনার।” সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও বলেন, “ছেলেটা সারাক্ষণ ভাল বল করে গেল। যেমন লাইন-লেংথ, তেমন স্পিন।”
বিষেণ সিংহ বেদী অবশ্য একমত হতে পারছেন না। |
বিতর্ক ২: শিলিংফোর্ডের অ্যাকশন |
|
আনন্দবাজারকে যা বললেন |
বিষেণ সিংহ বেদী
“সচিনের আউটের ঘটনায় আসল
খলনায়ক
আম্পায়ার নাইজেল লং নন,
বরং ওয়েস্ট ইন্ডিজের
ওই শিলিংফোর্ড।
ও তো আসলে চাকার।”
|
সাকলিন মুস্তাক
“শেনকে টানা তিন সপ্তাহ ধরে
প্রশিক্ষণ
দিয়েছি। আমার এক দিনের
জন্যও মনে হয়নি
ও ছুড়ে বল করে।
ও ব্যাটসম্যানদের ত্রাস হয়ে উঠবে।”
|
|
|
|
|
|
|