প্রবীরবাবুর পিচ বাঁচাচ্ছে ‘ব্রাত্য’ রোহিতের ব্যাট
রাচির ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে এক শীতে যে দিন সচিন রমেশ তেন্ডুলকর নামের ঝাঁকড়া চুলো এক কিশোরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ‘জন্ম’ হয়েছিল, রোহিত শর্মা তখন ঠিক করে হাঁটতেও শেখেননি।
ক্রিকেট কিট দূরের ব্যাপার, স্কুল-ব্যাগটাও পিঠে ওঠেনি। বয়স তো মোটে দুই। একটু বড় হওয়ার পর যখন বুঝতে শিখলেন ক্রিকেট কাকে বলে, ইচ্ছে হত কোনও না কোনও দিন সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে ক্রিজের উল্টো দিকে দাঁড়াবেন। নিদেনপক্ষে একটা রঞ্জি ম্যাচে।
কাকতালীয় মনে হতে পারে। কিন্তু বৃহস্পতিবারের ইডেন যদি ভারতীয় ক্রিকেটের এক মহাপরাক্রমী মরাঠির বিদায়ের প্রথম ইনিংস দেখে থাকে, তা হলে এক নতুন মরাঠির আবির্ভাবের প্রথম ইনিংসও দেখে রাখল। সচিন তেন্ডুলকরের জায়গা কোনও দিন রোহিত শর্মা নিতে পারবেন কি না, এখনই বলা কঠিন। কিন্তু মুম্বইয়ের রঞ্জি অধিনায়ক এটা অন্তত বুঝিয়ে গেলেন সচিন-বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটিং লাইন আপে মহাশূন্যতা সৃষ্টি নিয়ে যে এত আশঙ্কা, ততটাও বোধহয় দরকার নেই। ক্রিকেটমহলে এত দিন সম্ভাব্য পরিবর্ত হিসেবে ঘোরাঘুরি করছিল বিরাট কোহলির নাম। কিন্তু এ দিনের পর রোহিতকেও সমপংক্তিতে বসিয়ে ফেলতে হবে।
কত স্মৃতিই না একে একে মনে পড়িয়ে দিলেন রোহিত। কলকাতা আজ পর্যন্ত কখনও তাঁকে ফেরায়নি। ইডেনেই রোহিতের রঞ্জি অভিষেক। ইডেনেই মুম্বই ইন্ডিয়ান্স অধিনায়ক হিসেবে নামা এবং কাপ জেতা। আবার ইডেনেই তাঁর টেস্ট অভিষেক। এবং সেঞ্চুরি। যে সেঞ্চুরি ইডেনে বহু দিন পর ফিরিয়ে আনল কোনও এক মহম্মদ আজহারউদ্দিনকে। যিনি প্রায় তিন দশক আগে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিষেকে এমনই এক রোমাঞ্চকর সেঞ্চুরি কলকাতাকে দিয়ে গিয়েছিলেন। কখনও আবার অনসাইড স্ট্রোকের সময় রোহিতের কব্জির মোচড়ে ধরা দিচ্ছিলেন কোনও এক ভিভিএস লক্ষ্মণ। রোহিতের গ্লান্স, ফিল্ডারকে দৃশ্যত স্তব্ধ করে দেওয়া কভার ড্রাইভ যেন এমসিসি ম্যানুয়্যাল থেকে ছিঁড়ে নেওয়া এক-একটা পাতা। যেখানে শক্তির আগে শিল্প। যেখানে স্কোরবোর্ডে ৮৩-৫ দেখে আতঙ্কের আগে সংকল্পের খোঁজ। যার সম্মানে সেঞ্চুরির পর গুনে গুনে সাত জন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান এসে নায়কের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গেলেন!
অথচ এই মুম্বইকরেরই এত দিন টেস্ট ক্যাপ অধরা ছিল।
আসলে রোহিত শর্মার জীবনে দুটো অধ্যায় আছে। একটা ২০১১ বিশ্বকাপের আগের জীবন, অন্যটা পরের। মুম্বই ক্রিকেটমহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ২০০৭-এ ওয়ান ডে অভিষেকের পর একটা সময় অনেকটাই বেহিসেবি হয়ে পড়েন রোহিত। প্র্যাকটিসে অনিয়ম শুরু করেন। ওজন বেড়ে যায়। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন নিয়ে মিডিয়ায় নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে। এর পরপরই রোহিতের জীবনে আসে বড়সড় একটা ধাক্কা। বিশ্বকাপের দল নির্বাচন ও রোহিত শর্মা বাদ।
ইডেনে বৃহস্পতিবার সচিনের ৪১ মিনিট। ছবি: উৎপল সরকার।
ইডেনে সেঞ্চুরির পর রোহিতের কোথাও গিয়ে সেটাও মনে পড়ে গেল। অজান্তে এক বার বলেও ফেললেন, “মাইক হাসির কথা তখন ভাবতাম।” ভাবতেন, যদি হাসি তিরিশ বছর বয়সে ক্রিকেটজীবন শুরু করতে পারেন, তা হলে তেইশেই ক্রিকেটার রোহিতের মৃত্যু হয়ে গেল, এমন ভাবার কিছু হয়নি। রোহিত শুধু ভাবেননি। বিশ্বকাপ-পরবর্তী অধ্যায়ে একটা সময়ে তাঁকে নাকি রোজ সাত-আট ঘণ্টা করে নেটে পড়ে থাকতে দেখা যেত। দেখা যেত, টি-টোয়েন্টির ধুমধাড়াক্কা শট বিসর্জন দিয়ে সাবেকি কপিবুক ক্রিকেটের প্র্যাকটিসে।
তাই নতুন এই রোহিত শর্মার সঙ্গে পুরনোর অনেক তফাত। তাই এই রোহিতের মাথায় টেস্ট ক্যাপ ওঠে। তাই কমেন্ট্রি বক্সে বসা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলে ফেলেন, “সচিনের অবসরের পরে চিন্তায় পড়ার কিছু নেই। ভারতীয় ক্রিকেটের সম্পদরক্ষার দায়িত্ব বেশ কিছু নিরাপদ হাতেই পড়ছে।”
সৌরভ এতটুকু ভুল নন। বাউন্ডারি মেরে ইনিংস শুরু, বাউন্ডারিতে সেঞ্চুরি-লাভ। মাঝে ধোনির সঙ্গে হাফসেঞ্চুরি পার্টনারশিপ। রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে (৯২ ব্যাটিং) নিয়ে আপাতত ১৯৮। গত ডিসেম্বরে অশ্বিনের ব্যাট ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইনিংস হার বাঁচিয়ে দিয়েছিল। আর এ দিন যে অনামী ক্যারিবিয়ান বোলিংয়ের বিরুদ্ধে ভারতীয় ব্যাটিং এখনও ধসে পড়েনি, তার এক নম্বর কারণ রোহিত হলে দু’নম্বরটা অবশ্যই অশ্বিন।
সঙ্গে তাঁদের অবস্থাটাও বুঝতে হবে। রোহিত দেশকে এমন একটা জায়গা থেকে টেনে তুললেন, যখন টিম বিপন্ন। যখন শেন শিলিংফোর্ড নামের এক অখ্যাত অফস্পিনারকেও মনে হচ্ছে সাকলিন মুস্তাক! মুরলী বিজয়, শিখর ধবন, সচিন তেন্ডুলকর, বিরাট কোহলি ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপের শিরদাঁড়া ততক্ষণে টুকরো টুকরো করে দিয়েছেন শিলিংফোর্ড। তার উপর খেলতে হচ্ছে এমন এক পিচে, যেখানে দ্বিতীয় দিনের সকাল থেকেই দেড় হাত করে বল টার্ন করছে। ভারত যদি শেষ পর্যন্ত টেস্টটা জিতে যায়, তা হলে কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু যদি গড়বড় কিছু হয়, প্রবীরবাবুর পিচ আবার জাতীয় সমালোচনার বিষয় হয়ে পড়বে। বলা হবে, কেন ‘ভার্জিন’ পিচে এ ভাবে ছেড়ে দেওয়া হল ১৯৯তম টেস্টের ভাগ্য?
রোহিত বলছিলেন, অসম্ভব কঠিন পিচে আজ তাঁকে খেলে উঠতে হল। রীতিমতো লড়ে সেঞ্চুরিটা পেতে হল। ম্যাচ যে দিকে যাচ্ছে, তাতে মারাত্মক অঘটন না ঘটলে ভারতের জেতা উচিত। আর সেটা হলে পিচ নিয়ে যাবতীয় বিতর্ক প্রবীরবাবু গঙ্গায় ছুড়ে ফেলতে পারবেন এমন একজনের হাত ধরে, যাকে তিনি প্রথম দিন পিচ থেকেই বের করে দিয়েছিলেন।
তিনি রোহিত শর্মা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ
প্রথম ইনিংস: ২৩৪

ভারত
প্রথম ইনিংস: (গত দিন ৩৭-০)
ধবন বো শিলিংফোর্ড ২৩
বিজয় স্টাঃ রামদিন বো শিলিংফোর্ড ২৬
পূজারা ক রামদিন বো কটারেল ১৭
সচিন এলবিডব্লিউ বো শিলিংফোর্ড ১০
কোহলি ক পাওয়েল বো শিলিংফোর্ড ৩
রোহিত নঃআঃ ১২৭
ধোনি ক রামদিন বো বেস্ট ৪২
অশ্বিন নঃআঃ ৯২
অতিরিক্ত ১৪।
মোট ৩৫৪-৬ (১০২ ওভারে)।
পতন: ৪২, ৫৭, ৭৯, ৮২, ৮৩, ১৫৬।
বোলিং: বেস্ট ১৪-০-৫৩-১, কটারেল ১৫-৩-৫৩-১,
শিলিংফোর্ড ৪১-৮-১৩০-৪, পেরমল ২১-১-৫৪-০, স্যামি ১২-১-৫২-০।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.