বছর ঘুরে গেলেও ব্যঙ্গচিত্র-কাণ্ডে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ মানেনি তৃণমূল সরকার। তাই এ বার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অম্বিকেশ মহাপাত্র এবং তাঁর প্রতিবেশী সুব্রত সেনগুপ্ত। হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার তাঁদের আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে। আগামী মঙ্গলবার ওই আবেদনের শুনানি হতে পারে বলে হাইকোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জড়িয়ে একটি ব্যঙ্গচিত্র ঘিরে ২০১২ সালের ১২-১৩ এপ্রিল অম্বিকেশবাবু ও সুব্রতবাবুর উপরে হামলা হয়। শেষ পর্যন্ত পুলিশ গ্রেফতার করায় লক-আপে রাত কাটাতেও হয় তাঁদের। বাংলায় তো বটেই, অন্যান্য রাজ্যে, এমনকী বিদেশেও এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হতে থাকে।
গত বছরের ১৩ অগস্ট রাজ্য মানবাধিকার কমিশন সুপারিশ করে, সরকার অম্বিকেশবাবু ও সুব্রতবাবুকে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিক। সেই সঙ্গে ওই ঘটনায় পূর্ব যাদবপুর থানার অতিরিক্ত ওসি মিলনকুমার দাস এবং সাব-ইনস্পেক্টর সঞ্জয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের সুপারিশও করেছিল কমিশন। ছ’সপ্তাহের মধ্যে সুপারিশ রূপায়ণ করে দু’মাসের মধ্যে কমিশনকে জানাতে বলা হয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকার সেই সুপারিশ কার্যকর করেনি এবং এই বিষয়ে কমিশনকেও কিছু জানায়নি।
ওই সুপারিশ রূপায়ণে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, কমিশন তা জানতে চেয়েছিল রাজ্য সরকারের কাছে। সরকার তখন কমিশনের কাছে আরও ছ’সপ্তাহ সময় চায়। কমিশন তা মঞ্জুরও করে। সেই মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরে রাজ্য ফের ছ’সপ্তাহ সময় চায়। কমিশন তখন আরও দু’সপ্তাহ সময় দেয় তাদের। কিন্তু সেই বাড়তি সময়ের মধ্যেও রাজ্য সরকার ওই সুপারিশ কার্যকর করেনি।
এ বছরের ৩ মে সরকার অবশেষে কমিশনকে জানিয়ে দেয়, অম্বিকেশবাবু ও সুব্রতবাবুকে কোনও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না এবং যে-দুই পুলিশ অফিসারকে কমিশন দোষী সাব্যস্ত করেছে, তাঁদের বিরুদ্ধেও কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। সরকারের যুক্তি, ওই দুই অফিসার জনরোষের হাত থেকে অম্বিকেশবাবুদের উদ্ধার করেছিলেন।
অম্বিকেশবাবুরা তার পরেই কমিশনের সুপারিশ রূপায়ণের আজির্র্ জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। কেন তাঁরা উচ্চ আদালতে যেতে বাধ্য হলেন, অম্বিকেশবাবু এ দিন লিখিত ভাবে তা জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, তাঁদের উপর থেকে ফৌজদারি মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মহল আর্জি জানিয়েছে। কিন্তু সেই মামলা তোলা হয়নি। মানা হয়নি কমিশনের সুপারিশও। তাই সুবিচার চেয়ে তাঁরা হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছেন।
|