স্মৃতিভ্রংশের জন্য দায়ী হতে পারে ভুঁড়িও
ল্পেতেই হাঁসফাঁস আর গলদঘর্ম। বিপুল কলেবরের সুবাদে এমন বিবিধ অসুবিধে ওঁদের নিত্যসঙ্গী। এখন তার সঙ্গে জুড়ল দ্রুত স্মৃতি লোপের আশঙ্কাও।
এক বিজ্ঞান-পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধে মোটা ভুঁড়িওয়ালা মানুষদের জন্য এমনই সতর্ক-বার্তা দিয়েছেন এক দল গবেষক, যাঁদের তিন জন বাঙালি। শিকাগোর রাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষকদের দাবি, শরীরের মধ্যপ্রদেশের আকারবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যে স্মৃতিভ্রংশের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়, প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তাঁরা সেই ইঙ্গিত পেয়েছেন।
কীসের ভিত্তিতে ওঁরা এ কথা বলছেন?
সেল প্রেস জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধটির অন্যতম লেখক কালীপদ পাহানের ব্যাখ্যা: মস্তিষ্কের স্মৃতিনিয়ন্ত্রক যে অংশটি, অর্থাৎ হিপোক্যাম্পাসে ‘পিপিআর আলফা’ নামে এক ধরনের প্রোটিন থাকে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, স্মৃতিনিয়ন্ত্রক জিনের বৃদ্ধি ঘটায় এই প্রোটিন, যার উৎস হল যকৃৎ অর্থাৎ লিভার। ইঁদুর-বাঁদরের উপরে পরীক্ষা চালিয়ে এ-ও নজরে এসেছে যে, মোটা হলে ও তলপেটের ওজন বাড়তে থাকলে লিভারে পিপিআর-আলফা’র নিঃসরণ দ্রুত হ্রাস পায়।
এবং এই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতেই কালীপদবাবুদের দাবি: চর্বি ও ভুঁড়ি বাড়লে মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাসেও পিপিআর প্রোটিনের জোগানে টান পড়া স্বাভাবিক। ফলে স্মৃতিরক্ষার প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটার সমূহ আশঙ্কা। কালীপদবাবুর কথায়, “পিপিআর-আলফা প্রোটিনের এ হেন স্মৃতিবর্ধক ক্ষমতার কথা আগে জানা ছিল না। এই আবিষ্কারের ফলে দেহের জটিল রহস্যের নতুন দিক খুলে যাবে।” ওঁদের বক্তব্য: বয়সের সঙ্গে তলপেটের ওজনবৃদ্ধি ও লিভারে পিপিআর-আলফা প্রোটিনের মাত্রাহ্রাসকে একটা সূচক বলা যেতে পারে। এটা ইঙ্গিত দেয়, মস্তিষ্কেও প্রোটিনটির পরিমাণ কমতে পারে। “গবেষণার ফলাফল দেখে আমরা মনে করছি, স্থূলকায় ব্যক্তিদের স্মৃতি লোপ পাওয়ার আশঙ্কা শীর্ণকায়দের তুলনায় বেশি” লিখেছেন কালীপদবাবু।
তাই গবেষকদলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, মস্তিষ্কে স্মৃতিরক্ষক প্রোটিনটির উপস্থিতির মাত্রা বাড়ানোর উপায় খুঁজে বার করা। পরিকল্পনা সফল হলে মোটা মানুষদের স্মৃতি লোপের ভয় অতটা থাকবে না বলে ওঁরা আশা করছেন। মনুষ্যেতর জীবের উপরে পরীক্ষা সম্পূর্ণ হওয়ার পরে মানুষের উপরে পরীক্ষা চালানো হবে।
শিকাগোর গবেষকদের কাজে স্নায়ু-রোগ বিশেষজ্ঞ কিংবা স্নায়ু-বিজ্ঞানীরা কি কোনও আশার আলো দেখছেন?
কলকাতার স্নায়ুরোগ-বিশেষজ্ঞ জি কে প্রুস্তির মন্তব্য, “ইদানীং কলকাতায় অ্যালঝাইমার্স রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সকলের ক্ষেত্রে কারণটা জিনঘটিত নয়। সম্প্রতি আমিও শুনেছি, যুবক বয়সে ভুঁড়ি বাড়ার জন্য অ্যালঝাইমার্স হতে পারে। যদিও তার স্পষ্ট প্রমাণ এখনও হাতে-কলমে পাইনি।” কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিদ্যা বিভাগের স্নায়ু-বিজ্ঞানী তুষার ঘোষের প্রতিক্রিয়া, “স্মৃতিভ্রংশের অনেক কারণ থাকে। সব এখনও জানা যায়নি। হতেই পারে, ভুঁড়িবৃদ্ধিও তার অন্যতম।” তবে ভুঁড়ি বাড়লেই স্মৃতি লোপ পাবে এমন তত্ত্বে এই মুহূর্তে তিনি সায় দিতে পারছেন না। “স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের বিশাল ভুঁড়ি ছিল। অথচ শেষ দিন পর্যন্ত ওঁর স্মৃতি ছিল প্রখর। এ রকম অনেকেই আছেন। তাই অতি সরলীকরণ করে কিছু বলা ঠিক হবে না।” মন্তব্য তুষারবাবুর।
কালীপদবাবু ছাড়া রাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষকদের দলে রয়েছেন আরও দুই বাঙালি বিজ্ঞানী মালবেন্দু জানা ও অভীক রায়। মালবেন্দুবাবুর বক্তব্য, “আমরা এখনই একশো শতাংশ নিশ্চিত হয়ে কিছু বলছি না। তবে স্মৃতিরক্ষার সঙ্গে পিপিআর-আলফা প্রোটিনের যে সম্পর্ক রয়েছে, সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত। এ-ও জেনেছি, দেহে চর্বি জমলে ওই প্রোটিন কমে যায়। দুইয়ের প্রেক্ষাপটে আমরা একটা সূত্র পেয়েছি বলা যায়। তা ধরে আমরা কাজ আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।” কালীপদবাবু বলেন, “চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে আমাদের
আরও অনেকটা পথ এগোতে হবে। মানুষের উপরে পরীক্ষায় কী পাওয়া যাবে, তারই উপরে নির্ভর করছে চূড়ান্ত সাফল্য।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.