রাজনীতির রশিতে আটকে রায়গঞ্জে প্রস্তাবিত এইমস (অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস)-এর ভবিষ্যৎ আজও অনিশ্চিত! এই অবস্থায় উত্তরবঙ্গে আধুনিক স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ বাড়াতে দু’টি মেডিক্যাল কলেজের মানোন্নয়নের সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে মনমোহন সিংহ সরকার। সেই সঙ্গে মাওবাদী অধ্যুষিত বাঁকুড়ার একটি মেডিক্যাল কলেজেরও মানোন্নয়নে আগ্রহী কেন্দ্র। আগামিকাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অর্থ বিষয়ক কমিটির বৈঠকে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এই সংক্রান্ত প্রস্তাবে চূড়ান্ত সম্মতি দেওয়া হতে পারে।
ক্যাবিনেট সচিবালয়-সূত্রে বলা হচ্ছে, হিসেবমতো প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজের আধুনিকীকরণে খরচ হবে ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে কেন্দ্র ১২০ কোটি টাকা করে দেবে, রাজ্যকে দিতে হবে বাকি ৩০ কোটি। অর্থাৎ তিনটি মেডিক্যাল কলেজের জন্য বরাদ্দ হবে মোট সাড়ে চারশো কোটি টাকা।
প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষা যোজনার তৃতীয় পর্যায়ে এই তিনটি কলেজের মানোন্নয়নের প্রস্তাব রয়েছে বলে ক্যাবিনেট সচিবালয়-সূত্রের বক্তব্য। ওই যোজনারই দ্বিতীয় পর্যায়ে দেশে দু’টি নতুন এইমস গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। একটি সনিয়া গাঁধীর নির্বাচন কেন্দ্র রায়বরেলীতে, অন্যটি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির নির্বাচন কেন্দ্র রায়গঞ্জে। কিন্তু রায়বরেলীতে এইমস নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে গেলেও রায়গঞ্জে এখনও জমিই পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক অফিসার জানান, রায়গঞ্জে এইমস গড়ে তোলার প্রস্তাবের মূল কারণই ছিল উত্তরবঙ্গে আধুনিক স্বাস্থ্য পরিষেবার অভাব। জটিল ও আধুনিক চিকিৎসার জন্য সেখানকার মানুষকে কলকাতায় যেতে হয়। কিন্তু রায়গঞ্জে এইমস গড়ার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণেই মালদহের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ এবং দার্জিলিং জেলার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজকে দ্রুত ‘টার্সিয়ারি কেয়ার ইনস্টিটিউট’ (অত্যাধুনিক চিকিৎসা ও গবেষণা কেন্দ্র) হিসেবে গড়ে তোলার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীন উচ্চ পর্যায়ের ওয়ার্কিং গ্রুপ। সে ক্ষেত্রে আধুনিক পঠনপাঠন ও চিকিৎসা পরিষেবা ছাড়াও একাধিক বিষয়ে দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী তৈরির বিষয়টিতেও জোর দেওয়া হবে।
একই কারণে মানোন্নয়নের সুপারিশ করা হয়েছে বাঁকুড়ার সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজটিরও।
আগামিকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ ব্যাপারে আলোচনার জন্য যে ক্যাবিনেট নোট প্রস্তুত করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, বরাদ্দ অর্থে এই তিন মেডিক্যাল কলেজে ‘সুপার স্পেশালিটি ব্লক’ ও ‘ট্রমা সেন্টার’ গড়ে তোলা হবে। সেই সঙ্গে প্রয়োজন অনুযায়ী অঙ্কোলজি, নেফ্রোলজি, কার্ডিওলজি, এন্ডোক্রিনোলজি, সিটিভিএস, নিউরোসার্জারি ইত্যাদি বিভাগের উৎকর্ষ কেন্দ্র তৈরি করা হবে। বসানো হবে এমআরআই বা সিটি স্ক্যানের যন্ত্র-সহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম। আধুনিকীকরণের এই প্রক্রিয়া চলবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিবের অধীনে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটির তত্ত্বাবধানে।
সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের তিনটি হাসপাতাল-সহ কাল মন্ত্রিসভার অর্থ বিষয়ক কমিটির বৈঠকে ১৮টি রাজ্যের মোট ৩৯টি মেডিক্যাল কলেজের মান বাড়ানোর প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। এ জন্য কেন্দ্রকে মোট বরাদ্দ করতে হবে ৫০৭১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের মেয়াদ শেষের মুহূর্তে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে তৎপরতার নেপথ্যে অনেকে অবশ্য রাজনৈতিক কারণও দেখছেন। তাঁদের মতে, লোকসভা ভোটের আগে সরকারের এই পদক্ষেপকে ভোট-অস্ত্র করার চেষ্টা করবে কংগ্রেস। তা ছাড়া রাহুল গাঁধী ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন, ফের ক্ষমতায় এলে সাধারণ মানুষকে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করবে কংগ্রেস। মেডিক্যাল কলেজগুলির মানোন্নয়নের প্রস্তাব সেই প্রতিশ্রুতির সহায়ক হতে পারে বলেই কেউ কেউ মনে করছেন। |
হাসপাতাল নিয়ে কড়া মন্ত্রী
নিজস্ব সংবাদদাতা • কৃষ্ণনগর |
কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতাল ও শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের চৌহদ্দিতে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের বাড়বাড়ন্ত রুখতে কড়া মনোভাব নিলেন রোগী কল্যাণ সমনিতির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের প্রতিমন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা। বুধবার কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠক শেষে মন্ত্রী বলেন, “হাসপাতাল চত্বরে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। রোগীদের তা ব্যবহারের জন্য জোরও করা হয়। পুলিশ প্রশাসনকে ওই বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” বৈঠকে হাজির ছিলেন কৃষ্ণনগরের আইসি রাজকুমার মালাকার। তিনি বলেন, “জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছ থেকে অ্যাম্বুলেন্স সরানোর নির্দেশ এলেই আমরা তা সরিয়ে দেব।” |