জরুরি কাজে যেতে হবে দুবরাজপুর। তাই দূরপাল্লার বাসের সময়সূচি জানতে ধর্মতলার সরকারি বাসস্ট্যান্ডে ফোন করেছিলেন শতদল চট্টরাজ। টানা দু’দিন বহু বার চেষ্টার পরে তাঁর ফোন ধরেন পরিবহণ নিগমের এক কর্মী। লোকে ফোন করে করে হয়রান হয়ে যাচ্ছে। নিগমের তরফে কেউ ফোন ধরছেন না কেন? ক্ষুব্ধ শতদলবাবুর এই প্রশ্নের জবাবে ওই নিগম-কর্মী বলেন, ‘‘কী করব বলুন! ফোন ধরার লোক নেই যে। তাই ইচ্ছে থাকলেও যাত্রীদের প্রয়োজন মেটাতে পারি না।’’
বাসের সময়সূচি জানতে না-পেরে সাতসকালে সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলেন যাদবপুরের অজিত বসুও। ঠিক ক’টায় বাস, ফোনে জানতে না-পেরে সকালে বাড়ি থেকে রওনা দেন তিনি। ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে জানতে পারেন, তাঁর গন্তব্যের বাস সকাল ৭টা নয়, ছাড়বে বেলা ১০টার পরে।
এ রাজ্যে সরকারি বাসের মতোই বেহাল সরকারি পরিবহণের তথ্য-পরিষেবা ব্যবস্থা। ভাড়া বাড়াবে না বলে সরকার গোঁ ধরে বসে থাকায় রাস্তা থেকে প্রায় রোজই বেসরকারি বাস উঠে যাচ্ছে। বেহাল দশা সরকারি পরিবহণেরও। দূরপাল্লার রুটে, এক জেলা থেকে অন্য জেলার মধ্যে এখনও যে-সব সরকারি বাস চলে, সারা দিনে তার সময়সূচি জানানোর পরিষেবা কার্যত নেই। এক পরিবহণ-কর্তা বলেন, “টার্মিনাসে ফোন হয়তো আছে। কিন্তু হয় ধরার লোক নেই অথবা সেটা অচল হয়ে পড়ে থাকলেও সারানোর কোনও উদ্যোগ নেই।”
এই না-থাকার বিষয়টা প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়েছেন পরিবহণ দফতরের কর্তারা। কিন্তু ফোন এলে বাস ছাড়ার সময়সূচি জানানোর মতো পরিকাঠামো এত দিনেও অন্তত তৈরি করা গেল না কেন, তার কোনও উত্তর দিতে পারেননি কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, এই পরিষেবা চালু না-হওয়ার অন্যতম কারণ পেশাদারিত্বের অভাব। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা জানান, অনেক বারই এই নিয়ে কথা হয়েছে। তবে হাল্কা চালে। বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনামাফিক আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, “ওয়েবসাইট আছে সিএসটিসি-র। কিন্তু তাতে যাত্রীদের তথ্য জানানো বা অনলাইন বুকিংয়ের কোনও ব্যবস্থাই নেই!” অথচ এ রাজ্যেই বেশ কয়েকটি বেসরকারি পরিবহণ সংস্থা অনলাইন বুকিং থেকে শুরু করে মোবাইলে বাস ছাড়ার তথ্য জানানোর ব্যবস্থা অনেক আগেই চালু করেছে বলে জানান ওই কর্তা।
সরকারি উদ্যোগেই বিমান ও রেল পরিষেবার যাবতীয় তথ্য আমজনতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে দেশ জুড়ে। মোবাইল থেকে একটি ফোন অথবা ইন্টারনেটের সাহায্য নিলে রেল ও বিমানের যে-কোনও তথ্য চলে আসবে হাতের মুঠোয়। রাজ্যের পরিবহণকর্তারাই জানাচ্ছেন, অধিকাংশ রাজ্যে অনলাইন এবং ফোনে সরকারি ও বেসরকারি দূরপাল্লার বাসের গন্তব্য ও ছাড়ার সময় সহজেই জানা যায়। এমনকী কেউ চাইলে দূরপাল্লার বাসের অনলাইন বুকিংও করে ফেলতে পারেন। সে-ক্ষেত্রে বাস ছাড়ার সময় এসএমএসে জানিয়ে দেওয়া হয় যাত্রীকে। অথচ এ রাজ্যে সরকারি বাস টার্মিনাস থেকে তথ্য-পরিষেবা দেওয়া তো দূরের কথা, বেশির ভাগ সময় ফোন ধরার লোক পর্যন্ত নেই! কেন?
পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র পুরো দায়টাই চাপিয়ে দিয়েছেন বাম আমলের উপরে। তিনি বলেন, “৩৪ বছরের বাম জমানা পরিবহণ ব্যবস্থাটাই শেষ করে দিয়েছে। সব কিছু গুছিয়ে উঠতে সময় লাগবে। পরিষেবা কী ভাবে বাড়ানো যায়, পরিবহণ ব্যবস্থার সংস্কার কী করে করা যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছি।” পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়েরও দাবি, “বিভিন্ন পরিবহণ নিগম থেকে অনলাইন তথ্য জানানো এবং বুকিং ব্যবস্থা চালু করার প্রস্তাব এসেছে। আমরা তার সবিস্তার রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ দিয়েছি।” |