তিনি নিজে সরব কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাঁর জন্য সেই পরিবারতন্ত্রেই ভরসা করতে হচ্ছে রাজ্য বিজেপি-কে!
এ পরিবারতন্ত্র অবশ্য ক্ষমতার ভাগ নেওয়ার জন্য নয়। নেহাতই ভিড় বাড়াতে! হাজার হোক নরেন্দ্র মোদী বলে কথা!
গোটা দেশে প্রচারের ঝড় তুলেছেন বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। অ-বিজেপি রাজ্যেও তাঁর সমাবেশে ভিড় উপচে পড়ছে। সেই মোদী যখন পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে আসবেন, তখন রাজ্যের বিজেপি নেতাদের একটাই চিন্তা। সভার ভিড় যেন অন্য রাজ্যের সঙ্গে পাল্লা
দিতে পারে। সেটা রাজ্য দলের
মান-সম্মানের প্রশ্ন! তাই অভিনব কৌশল হাতে নিয়েছেন রাজ্য নেতারা। বিজেপি সদস্যদের বলা হচ্ছে, তাঁরা নিজেরা তো ওই সভায় আসবেনই, সঙ্গে যেন পরিবারের বাকিদেরও নিয়ে আসেন।
ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে এ রাজ্যে দু’টি সভা করবেন মোদী। তার একটি হবে ব্রিগেড ময়দানে, অন্যটি উত্তরবঙ্গে। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল ব্রিগেডে সমাবেশ করবে ৩০ জানুয়ারি। বিরোধী বামফ্রন্টও ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ব্রিগেডে একটি সভা করতে চায়। রাজ্য বিজেপি চাইছে, ১২ বা ১৩ জানুয়ারি, বিবেকানন্দের জন্মদিনকে উপলক্ষ করে মোদীর সভা হোক ব্রিগেডে। শেষ পর্যন্ত তারিখ যা-ই হোক, তৃণমূল এবং বামেদের সঙ্গে পিঠোপিঠি সমাবেশে ব্রিগেড ভরানোর চ্যালেঞ্জ মাথায় রাখতে হচ্ছে মোদীর দলকে। এবং এই কড়া চ্যালেঞ্জ সামলাতে তাঁদের বড় ভরসা কর্মীদের পরিবারও।
বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, শেষ হিসেব পাওয়া পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে তাদের প্রাথমিক সদস্য ২ লক্ষ ৬৮ হাজার ৬০৮ জন। এঁদের মধ্যে ৭০ হাজার এমন সদস্য আছেন, যাঁদের পরিবারের কেউ বিজেপি করেন না। এঁদের প্রত্যেককেই বলা হচ্ছে, বাড়ির সকলকে নিয়ে নিশ্চিত ভাবে মোদী-দর্শনে আসতে হবে!
এক জন কর্মীও যাতে মোদীর সভা ‘মিস’ না করেন, তা নিশ্চিত করতে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ নিজে দলের ৩৬টি সাংগঠনিক জেলায় যাচ্ছেন। এখনও পর্যন্ত ২৮টা সাংগঠনিক জেলায় বৈঠক হয়ে গিয়েছে। উত্তরবঙ্গের ৮টি জেলা বাকি। তা ছাড়া, রাজ্যের ১৫০ জন নেতার উপরে দায়িত্ব পড়ছে বুথ কমিটি স্তর পর্যন্ত লোক আনার বিষয়টি নিশ্চিত করার। মোদীর সফরের আগেই রাজ্যের ৪২টা লোকসভা কেন্দ্রে ৪২টা সম্মেলন করতে চায় বিজেপি। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের আনা হবে সেখানে, যার ঘোষিত উদ্দেশ্য লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি। কিন্তু সেখান থেকেও মোদীর জন্য ভিড় বাড়ানোর বার্তা যাবে। রাজ্য বিজেপি-র সব পদাধিকারী, সমস্ত মোর্চা ও সেলের নেতাকে নিয়ে মহাজাতি সদনের অ্যানেক্সে ১১ নভেম্বর বিজেপি-র একটি বৈঠক বসছে। সেখানেও মোদীর সফরে লোক আনা নিয়ে কথা হবে।
এর বাইরে প্রকাশ্যে ঘোষণা না-করলেও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং আরএসএস-ও প্রচার করছে মোদীর জন্য। জরুরি অবস্থার সময়ে সঙ্ঘ পরিবার যে ভাবে প্রচার চালিয়েছিল, সে ভাবেই মোদীকে প্রধামন্ত্রী করার লক্ষ্যে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। মোদীর বঙ্গ সফরও তারই অঙ্গ।
রাহুল সিংহ আপাতত শুধু বলছেন, “আমরা একটা ঐতিহাসিক সমাবেশ করব! কত লোক আনতে চাই, সংখ্যাটা এখনই বলছি না।” তাঁর আরও বক্তব্য, “মোদীকে কেন্দ্র করে গোটা দেশেই উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। তার প্রতিফলন ব্রিগেডে পড়বে বলেই আমার আশা।” তবে আরও কিছু রাজ্যের মতো এখানে টিকিট কেটে মোদী-দর্শনের ব্যবস্থার পরিকল্পনা নেই বলেই বিজেপি সূত্রের খবর।
দর্শনার্থী পাওয়াই যে বিজেপি-র আগে দরকার! |