সরকারি বিজ্ঞাপনে মুখ কি কানুর, জোর বিতর্ক
রকারি বিজ্ঞাপনে প্রয়াত নকশাল নেতা কানু সান্যালের ছবি প্রকাশের অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কেন এই ছবি প্রকাশিত হল, তাই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কানুবাবুর পরিবারের লোকেরা। এই ঘটনার নিন্দা করেছে বিভিন্ন নকশালপন্থী রাজনৈতিক দলও। তবে সরকারের দাবি, মুখের মিল থাকলেও ওটা কানু সান্যালের ছবি নয়।
প্রশাসনের একটি সূত্রের বক্তব্য, বিজ্ঞাপনটি তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল একটি বেসরকারি সংস্থাকে। তারা ইন্টারনেটে খেটে খাওয়া মানুষের ছবির সন্ধান করতে গিয়ে ওই মুখটি দেখে তা বিজ্ঞাপনের কাজে ব্যবহার করেছে। এটা ভুলবশত হয়েছে। এর পিছনে অন্য কোনও অভিপ্রায় নেই। সরকারি সূত্রের খবর, বিজ্ঞাপনটি ছিল অর্থ দফতরের। বিজ্ঞাপনের ‘আর্ট ওয়ার্কটি’ অর্থ দফতরই অনুমোদন করেছিল। পরে তা প্রকাশ করে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজ্য সরকার অবশ্য বিজ্ঞাপনের ওই মুখ আদৌ কানুবাবুর নয় বলে দাবি করেছে।
রাজ্য সরকারের ‘আর্থিক সুরক্ষা প্রকল্প’-এর সূচনা উপলক্ষে বুধবার বিতর্কিত বিজ্ঞাপনটি প্রকাশিত হয়েছে আনন্দবাজার-সহ বিভিন্ন সংবাদপত্রে। টাউন হলে প্রকল্পের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজ্ঞাপনে সব বয়সের ‘আম-আদমি’-র মুখ দেখানোর জন্য মোট ছ’টি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে একটি প্রয়াত নকশাল নেতার বলে অভিযোগ। শুধু বিজ্ঞাপন নয়, অনুষ্ঠান উপলক্ষে টাউন হলের সামনে তৈরি একটি তোরণ এবং মঞ্চের পিছনে যে ব্যানার টাঙানো হয়েছিল, সেখানে ওই ছবিটি স্থান পেয়েছে।
‘আর্থিক সুরক্ষা প্রকল্প’-এর সূচনা উপলক্ষে মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী। পিছনের ব্যানারে সেই বিতর্কিত মুখ। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
বিজ্ঞাপনটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে জানতে পেরে টাউন হলের সভায় মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য বলেন, “কোনও কোনও লোককে দেখতে এক রকম। কিন্তু আসলে এক লোক নয়! শুনলাম, গুগ্ল সার্চ করে ছবি বার করা হয়েছে।” একই দাবি তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সচিব অত্রি ভট্টাচার্যেরও। তাঁর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, “ছবিটি কানু সান্যালের নয়।”
কিন্তু সংবাদপত্রে সরকারি বিজ্ঞাপনটি দেখে চমকে ওঠেন কানুবাবুর ভাইপো অরিন্দম সান্যাল। শিলিগুড়ির ক্ষুদিরামপল্লির বাসিন্দা অরিন্দমবাবু বলেন, “প্রথমে বিশ্বাসই হচ্ছিল না। ভাল করে ছবিটি দেখে স্তম্ভিত হয়ে যাই। আমরা নিশ্চিত, এটা কাকারই ছবি। বিনা অনুমতিতে প্রয়াত কাকার ছবি সরকারি বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা একেবারেই অনৈতিক কাজ। উপরন্তু, এমন একটা বিষয়ের উপরে বিজ্ঞাপন, যা কি না কাকার জীবনযাপন ও চরিত্রের সঙ্গে একেবারেই বেমানান।” অরিন্দমবাবুর সংযোজন, “সরকার তো এখন অস্বীকার করছে। দাবি করছে, ছবিটা আমার কাকার নয়। তা হলে আর কী বলার থাকে! এ টুকু বলতে পারি, এমন ঘটনা যাতে আগামী দিনে না ঘটে, সেই ব্যাপারে রাজ্য সরকার মনোযোগী হোক।”
সরকারি বিজ্ঞাপনে কানুবাবুর ছবি ব্যবহারের ‘রাজনৈতিক’ ভাবেই প্রতিবাদ করেছে নকশালপন্থী দলগুলি। সিপিআই (এম-এল) রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে সুব্রত বসু যেমন বলেছেন, “তৃণমূল, কংগ্রেস বা বিজেপি-র মতো শাসক শ্রেণির দলের নীতি ও কর্মসূচির বিরোধী আমাদের দল। কানুবাবুর সময়েই দলের এই আদর্শগত ও রাজনৈতিক অবস্থান গৃহীত হয়েছিল। তৃণমূল এবং তাদের পরিচালিত সরকার রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্যই কানুবাবুর ছবি ব্যবহার করেছে। যাতে তাঁর গরিব-দরদি ভাবমূর্তি কাজে লাগিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করা যায়!” ওই বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়ে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষও অভিযোগ করেছেন, “সারদা-কাণ্ড ও অন্যান্য চিট ফান্ড নিয়ে বিতর্ক ধামাচাপা দিতেই মুখ্যমন্ত্রী সুচারু ভাবে এই বিজ্ঞাপন ব্যবহার করেছেন!” লিবারেশনের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদারের বক্তব্য, “ছবিটি কানুবাবুর নয় বলে সরকার দাবি করছে। কিন্তু আমরা যাঁরা কাছ থেকে দেখেছি এবং ওঁর পরিচিতরা সকলেই বলছেন, ছবিটি তাঁরই। সরকারের যুক্তি দুর্বল। তাদের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়া উচিত।”
সিপিএমের দার্জিলিং জেলার কার্যকরী সম্পাদক জীবেশ সরকারের দাবি, “কানুবাবুর মতো এক জন কমিউনিস্ট নেতার ছবি বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করার ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.