টানা তিন দিন ধরে পুরুলিয়ার বাজারে আলুর সঙ্কট চলার পরে বুধবার বিকেলে স্বস্তির খবর শোনাল জেলা প্রশাসন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে ১০ ট্রাক আলু নিয়ে আসা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া শহর-সহ বিভিন্ন বড় বাজার-হাটে সেই আলু বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। এ দিনই বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতিও পুরুলিয়া জেলায় তুলনামূলক কম দামে দৈনিক ১৫০ টন আলু পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সঙ্গে বাঁকুড়ার ব্লকে ব্লকে সরকারি মূল্যে (কেজি প্রতি ১৩ টাকা) আলু বিক্রির শিবির করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পুরুলিয়া জেলায় কার্যত আলুর চাষ হয় না। এই জেলায় আলুর জোগান দেয় বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা। কিন্তু ওই জেলা থেকে আলু কিনে পরিবহণ খরচ দিয়ে সরকার নির্ধারিত মূল্যে পুরুলিয়ায় আলু বিক্রি করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছিলেন জেলার আলু বিক্রেতারা। সোমবার থেকে জেলার বাজার-হাট থেকে আলু উধাও হয়ে যায়। বিপাকে পড়ে যান গৃহস্থেরা। রাঁচি থেকে নিয়ে আসা নতুন আলু বেশ চড়া দরে কিছু এলাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু তা কেনার সাধ্য অনেকের নেই। এ দিকে জেলা আলু ব্যবসায়ী সমিতি পুরুলিয়ায় সরকারি মূল্যে আলু বিক্রির একটি শিবির খুললেও সেখানে অল্পক্ষণের মধ্যেই সব আলু বিক্রি হয়ে যাচ্ছিল। |
বুধবার বাঁকুড়ায় প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি ও হিমঘর মালিকদের সংগঠন বাঁকুড়া ডিস্ট্রিক্ট কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে বসেন জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী ও জেলাশাসক বিজয় ভারতী। পরে জেলাশাসক বলেন, “বাঁকুড়া থেকে পুরুলিয়ায় প্রতিদিন ১৫০ টন আলু পাঠানো হবে। হিমঘর থেকে এই আলু সাড়ে ১০ টাকা কেজি দরে কিনতে পারবেন বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার ব্যবসায়ীরা।” পুরুলিয়া জেলা আলু ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক প্রবীরকুমার সেন জানিয়েছেন, তাঁরা বাঁকুড়া জেলা থেকে ওই দামে আলু নিয়ে আসতে রাজি।
এ দিন পুরুলিয়ায় জেলার মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো, জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী, সব্জির মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য গঠিত জেলা টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সবুজবরণ সরকার, পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার, কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিক সুধীর মাঝি এবং পুরুলিয়া জেলা আলু ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসেন। জেলাশাসক আশ্বাস দেন, “বুধবার রাতের মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে ১০ ট্রাক আলু নিয়ে আসা হচ্ছে। আলুর জোগান ঠিক রাখতে বাঁকুড়ার সঙ্গে বর্ধমান জেলা প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলা হবে।” মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘ওই ১০ ট্রাক আলু যাতে ঠিক ভাবে ক্রেতাদের হাতে পৌঁছয় তা কৃষি বিপণন দফতরকে দেখতে বলা হয়েছে।’’ তাঁর আশ্বাস, দু’- একদিনের মধ্যে বাজারে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। |
গত দু’দিনের মতোই এ দিনও জেলার প্রায় সব বাজারেই আলুর চাহিদা ছিল তুঙ্গে। ঝালদার বাজারে অল্প পরিমাণে ছোট আলু বিক্রি করতে দেখা গিয়েছে। পুরুলিয়া শহরের বাজারে আলুর দেখা প্রায় ছিলই না। আলু ব্যবসায়ী সমিতি সকালে ১৩ টাকা কেজি দরে কিছু পরিমাণ আলু খুচরো ক্রেতাদের বিক্রি করে। কিন্তু তাতে শহরের কিছু ক্রেতার চাহিদা মিটলেও অন্য ব্লকগুলিতে আলুর অভাব মেটেনি। পুরুলিয়া ২ ব্লকের চেপড়া গ্রামের তপন মাজি, পুরুলিয়া ১ ব্লকের মাগুড়িয়ার স্বপন মাহাতো বা পুরুলিয়া শহরের মুন্সেফডাঙার সুকুমার গোপের ক্ষোভ, “কোথাও আলু নেই। সব্জির দামও আগুন। আলু সিদ্ধ, ভাতও খাওয়ার জো নেই।” আলু না মেলায় রঘুনাথপুরে বিক্ষোভ দেখিয়ে মহকুমাশাসককে স্মারকলিপি দেয় এসইউসি।
বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরে আলু বিক্রির শিবির হলেও বাকি এলাকায় শিবির না হওয়ায় ক্ষোভ ছিল। জেলাশাসক বলেন, “জেলার প্রত্যেকটি ব্লকেই হিমঘর মালিক সমিতি ও আলু ব্যবসায়ীদের যৌথ ভাবে শিবির করে সরকারি মূল্যে আলু বিক্রি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকেই ব্লকে ব্লকে এই শিবির হবে।” প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির জেলা সম্পাদক বিভাস দে ও বাঁকুড়া জেলা হিমঘর মালিক সমিতির সভাপতি দিলীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মতো এ বার প্রতি ব্লকেই আলু বিক্রির শিবির করব।” জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বাঁকুড়া জেলায় প্রতিদিন আলুর চাহিদা প্রায় ২০ হাজার বস্তা। এই মুহূর্তে জেলায় মোট ৪০টি হিমঘরে প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ বস্তা আলু মজুত রয়েছে। তার পরেও কেন সঙ্কট, তা নিয়েও আলোচনা হয়। |