পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর থেকে ডিভিসি-র নির্মীয়মাণ তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় ঝাড়খণ্ডে চলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতেই নড়েচড়ে বসল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। ডিভিসি-র ওই প্রকল্পের জটিলতা কাটাতে বুধবার পুরুলিয়ায় জেলাশাসকের কার্যালয়ে জেলাশাসক, জেলা সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো এবং রঘুনাথপুরের বিধায়ককে নিয়ে বৈঠক করলেন রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো।
বৈঠকের শেষে শান্তিরামবাবুর আশ্বাস, সাত দিনের মধ্যে থমকে থাকা কাজ শুরু হবে। এ দিনের বৈঠকে অবশ্য ডাকা হয়নি ডিভিসি-র রঘুনাথপুরের প্রকল্পের কোনও আধিকারিককে। বৈঠকের শেষে ফের আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যা মেটাতে জোর দিয়েছেন মন্ত্রী থেকে জেলাশাসক। শান্তিরামবাবুর ব্যাখ্যা, “আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যা মিটবে।” তবে, ডিভিসি-র মুখ্য বাস্তুকার দেবাশিস মিত্র বলেন, “আগেও বহুবার আলোচনা করেছি। প্রশাসন বললে ফের বসব। কিন্তু, অভিজ্ঞতা বলছে, প্রশাসনিক স্তরে আরও সক্রিয় হস্তক্ষেপ না করা হলে কাজ করা সম্ভব নয়।”
‘সক্রিয় হস্তক্ষেপ’ বলতে ডিভিসি মূলত ‘ওয়াটার করিডর’ এবং ছাইপুকুরের কাজে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে প্রয়োজনে ১৪৪ ধারা জারি করে কাজ করানোর কথাই বলছে। কারণ, আগেও ‘ওয়াটার করিডর’ ও ছাইপুকুর নির্মাণে বাধা পেয়ে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে কাজ চালু রাখার নজির রয়েছে। দেবাশিসবাবুর কথায়, “আমরা ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট রেখে কাজ করতে অনুরোধ করেছি।” শান্তিরামবাবুর মন্তব্য, “আলোচনায় যে সিদ্ধান্ত উঠে আসবে তা ভেঙে কেউ বাধা দিলে প্রয়োজনে পুলিশ সেখানে হস্তক্ষেপ করবে।”
স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে ‘সক্রিয় সহযোগিতা’ না মেলায় প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ রূপায়ণ করা যে সম্ভব হচ্ছে না, তা সোমবার চিঠি দিয়ে জেলাশাসককে জানান দেবাশিসবাবু। সোমবারই সমস্যা মেটাতে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করতে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎসচিবকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন ডিভিসি-র চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ সেন। মঙ্গলবার দিল্লিতে বিদ্যুৎসচিব প্রদীপকুমার সিন্হার সঙ্গে তাঁর কথাও হয়। তিনিও জানান, প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ অন্যত্র সরিয়ে দিলে আপত্তি নেই বিদ্যুৎ মন্ত্রকের। সব মিলিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল জেলা প্রশাসন।
রঘুনাথপুরের তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি জানান, এ দিন থেকেই তাঁরা রঘুনাথপুর ১ ও ২ এবং নিতুড়িয়া ব্লকের (এখানেই প্রকল্প হওয়ার কথা) বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে দলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। কাজ শুরু করতে ডিভিসি-র সমস্যা হবে না বলে আশ্বাস বিধায়কেরও। জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী ডিভিসি-র চিঠির উত্তরে বলেন, “আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যা মিটবে। প্রশাসনের যেমন দায়বদ্ধতা রয়েছে, তেমন ডিভিসি-কেও এগিয়ে আসতে হবে।” |