জমিজটে প্রকল্প সরাতে চায় ডিভিসি, রাজি কেন্দ্র
বার সেই জমিজট। আড়াইশো একরেরও কম জমি অধিগ্রহণে বারবার বাধা আসায় পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুত্‌ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় ঝাড়খণ্ডে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)। এই প্রকল্পের সমস্যা নিয়ে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় বিদ্যুত্‌ মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন ডিভিসি-র চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ সেন। কেন্দ্রীয় বিদ্যুত্‌সচিব প্রদীপকুমার সিন্‌হা এ দিন বলেন, “ডিভিসি চাইলে এই প্রকল্প অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তাতে বিদ্যুত্‌ মন্ত্রকের আপত্তি নেই।”
রাজ্যের বিনিয়োগ আনতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বারবার শিল্পপতিদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন, তখন ডিভিসি যদি শেষ পর্যন্ত সত্যিই প্রকল্প সরিয়ে নিয়ে যায়, তা হলে রাজ্যের ভাবমূর্তি বড়সড় ধাক্কা খাবে। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এ দিন বলেছেন, “রাজ্য থেকে এই প্রকল্প কখনওই সরে যেতে দেওয়া যাবে না। আমরা আশাবাদী, সমস্যার সমাধান হবে।”
রঘুনাথপুরে ৮৮১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট চারটি তাপবিদ্যুত্‌ ইউনিট গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে ডিভিসি। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দু’টি ইউনিট তৈরির কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণ কাজের বরাত দিয়েও হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। কারণ, মূল প্রকল্পের জন্য ১০০০ একর জমি পেলেও কয়লা আনার জন্য রেল করিডর তৈরির জমি পেতে অসুবিধা হচ্ছে। রেল লাইন পাততে জমি দরকার ৩২৪ একর। এখনও পর্যন্ত ডিভিসি ৮৩ একর জমি হাতে পেয়েছে। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া অত্যন্ত শ্লথ বলে তাদের অভিযোগ।
সমস্যা রয়েছে অন্যত্রও। ওয়াটার করিডরের জন্য অধিগৃহীত জমির মালিকদের একাংশ এখনও ক্ষতিপূরণের চেক না-নেওয়ায় জট পাকিয়েছে। তাঁরা স্থায়ী চাকরি ও বর্তমান বাজার দরে জমির দাম চেয়ে কাজে বাধা দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে পার্থবাবুর বক্তব্য, “কম ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন বলে ক্ষোভ থাকা অল্প কিছু লোককে ওস্কানো হচ্ছে।” ছাইপুকুর (অ্যাশ পন্ড) তৈরির কাজেও স্থানীয়দের বেশি সংখ্যায় নেওয়ার দাবি উঠেছে। ফলে সেই কাজও আটকে।
এই অবস্থায় গত সোমবার প্রকল্পের মুখ্য বাস্তুকার দেবাশিস মিত্র ডিভিসি-র ডিরেক্টর অব প্রোজেক্টকে চিঠি দিয়ে জানান, প্রকল্পের কাজে নানা সমস্যা আসছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে সক্রিয় সহযোগিতা মিলছে না। এই অবস্থায় রঘুনাথপুরে প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ রূপায়ণ করা সম্ভব নয়। জেলা প্রশাসনকেও তিনি চিঠি দিয়ে সমস্যাগুলি বিশদে জানিয়ে দ্বিতীয় প্রকল্পের কাজ সরানো ছাড়া বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন। সোমবারই সমস্যা মেটানোর জন্য রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করতে কেন্দ্রীয় বিদ্যুত্‌সচিবকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথবাবু। এর পর মঙ্গলবার দিল্লির ‘রিভিউ মিটিং’-এ মুখোমুখি এ বিষয়ে কথা হল।
ডিভিসি-সূত্রে খবর, রঘুনাথপুর প্রসঙ্গে মন্ত্রকের সাফ কথা হল, ডিভিসি কোথায় লগ্নি করবে, আর কোথা থেকে বিনিয়োগ তুলে নেবে, তা একান্ত ভাবেই তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। ডিভিসি যদি মনে করে যে রঘুনাথপুরে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে, তা হলে তারা দ্বিতীয় পর্যায়ের ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দু’টি ইউনিট অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতেই পারে। মন্ত্রক এ নিয়ে কিছু চাপিয়ে দেবে না।
কেন রঘুনাথপুর থেকে সরে আসতে হতে পারে, তার বিস্তারিত কারণ বিদ্যুত্‌সচিবকে ব্যাখ্যা করেছেন ডিভিসি-র চেয়ারম্যান। রবীন্দ্রনাথবাবুর বক্তব্য, ইতিমধ্যেই সেখানে ৪৫০ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। যার জন্য ব্যাঙ্কগুলিকে ১২ শতাংশ হারে সুুদ গুনতে হবে। জমির প্রশ্নে প্রকল্পই যদি বানচাল হওয়ার উপক্রম হয়, তা হলে এত টাকা লগ্নির ঝুঁকি কেন নেওয়া হবে? ডিভিসি সূত্রে বলা হচ্ছে, রঘুনাথপুরের প্রকল্পের জন্য সুদ-আসল মিলিয়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা শোধ করতে হবে। এখন কাজ বন্ধ থাকার জন্য প্রতিদিন ৩ কোটি ৮০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এমনিতেই নিগমের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ কোনও বিনিয়োগে যাওয়া হবে না।
ডিভিসি-র অভিযোগ, রাজ্য সরকার জমির প্রশ্নে কোনও দায়িত্ব নিতে চাইছে না। অনেক আগেই খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে ওয়াটার করিডর এবং রেল করিডর-এর জমির ব্যাপারে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও সদুত্তর আসেনি। চিঠি দেওয়া হয়েছে মুখ্যসচিবকেও। তাতেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা মেলেনি বলে ডিভিসি-কর্তাদের ক্ষোভ। তাঁদের দাবি, শিল্পমন্ত্রী উল্টে ডিভিসি-কেই চাষিদের সঙ্গে নতুন করে কথাবার্তা শুরু করার পরামর্শ দিয়েছেন।
শিল্পমন্ত্রী অবশ্য এই পরিস্থিতির জন্য প্রকল্পের মুখ্য বাস্তুকারকেই দায়ী করছেন। তাঁর কথায় “উনি (দেবাশিসবাবু) নিজে সমস্যা মেটাতে পারছেন না। উপরতলায় সাহায্য চাইতে পারতেন।” রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “আমরা রাজ্য সরকারের সঙ্গে, প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।”
ডিভিসি সূত্রে বলা হচ্ছে, ওয়াটার করিডর এবং রেল করিডর তৈরি করা না-গেলে যে শুধু প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ই অন্যত্র চলে যাবে তা নয়, অনিশ্চিত হয়ে পড়বে প্রথম পর্যায়ও। আপাতত প্রথম দু’টি ইউনিটের কর্মক্ষমতা দেখার জন্য প্রকল্প এলাকা থেকে ৩০ কিমি দূরে নিতুড়িয়া ব্লকের চৌরাশি পর্যন্ত রেলে করে কয়লা আনছে ডিভিসি। সেখান থেকে কয়লা আনা হবে সড়ক পথে। কিন্তু এটা নেহাতই সাময়িক বন্দোবস্ত। কারণ, এ ভাবে কয়লা আনলে পড়তায় পোষাবে না। জলের ক্ষেত্রেও একই কথা। ইউনিট চালুর জন্য প্রকল্প এলাকায় ১০ লক্ষ ঘন মিটার জল করা হলেও পাকাপাকি ব্যবস্থা ছাড়া স্থায়ী ভাবে বিদ্যুত্‌ উত্‌পাদন সম্ভব নয়।
ফলে, রাজ্য এখনই জমির ব্যাপারে সক্রিয় না-হলে হয়তো অধরাই থেকে যাবে রঘুনাথপুর।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.