পরিদর্শনে কমিশনার
বন্যায় চাষের ক্ষতিপূরণ দেবে কেন্দ্র
ন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেবে কৃষিমন্ত্রক। বুধবার নবান্নে রাজ্যের কৃষি দফতরের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এই কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় কৃষি কমিশনার জে এস সাঁধু।
কৃষি দফতরের কর্তাদের দাবি, বন্যার জেরে কয়েকটি জেলায় প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। চাষিদের ক্ষতির বিস্তারিত হিসেব দিয়ে প্রকল্প তৈরি করে দিল্লিতে পাঠাতে বলেছেন কৃষি কমিশনার। সেই প্রকল্প পাওয়ার পরে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। রাজ্য কৃষি দফতরের অধিকর্তা পরিতোষ ভট্টাচার্য বলেন, “বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রকল্প পাঠাতে বলেছেন। দ্রুত পাঠানো হবে।”
তবে রাজ্য কৃষি দফতরের ধান প্রদর্শনী ক্ষেত্র নিয়ে খুশি হতে পারেননি সাঁধু। তিনি বিষয়টি বৈঠকে জানিয়েছেন। নবান্নে বৈঠকের আগে সকালে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর সদর এবং কেশপুর ব্লকের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখেন কৃষি কমিশনার। কেন্দ্রীয় সাহায্যে তৈরি ধান প্রদর্শনী ক্ষেত্র এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন পরিতোষবাবু। প্রদর্শনী ক্ষেত্র কী ভাবে চলছে, কত জন কৃষক উপকৃত হচ্ছেন তার খোঁজ নেন সাঁধু।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে চাষ করে ফলন বাড়ানোর জন্য ধান প্রদর্শনী ক্ষেত্র করা হয়। দফতরের উদ্যোগে কয়েক বছর ধরে এই প্রকল্প চলছে। দু’টি তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ হয় বিজিআরইআই এবং এনএফএসএম। ব্লকের এক বা একাধিক জায়গা চিহ্নিত করা হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য কমপক্ষে ১০০ হেক্টর জমি দরকার। জমির কৃষকদের বিনামূল্যে ধানের বীজ এবং অধিকাংশ সারও দেওয়া হয়। শেখানো হয় উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার।

মেদিনীপুর সদর ব্লকের ধেড়ুয়ায় কৃষিজমি পরিদর্শনে
কেন্দ্রীয় কৃষি কমিশনার জে এস সাঁধু। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
এ দিন সকালে প্রথমে মেদিনীপুর সদর ব্লকের ধেড়ুয়ায় যান কমিশনার। ধেড়ুয়া এবং কুকুড়মুড়ি এই দু’টি মৌজায় প্রদর্শনী ক্ষেত্র রয়েছে। উপকৃত কৃষকের সংখ্যা ২৬২ জন। ধেড়ুয়া থেকে চাঁদড়ার দেউলডাঙা এবং খড়িকাবাঁধি মৌজা পরিদর্শন করেন তাঁরা। এখানে উপকৃত কৃষক ২২৪ জন। পরে কেশপুরের বুড়াপাটে গিয়েও প্রদর্শনী ক্ষেত্র দেখেন কমিশনার। এখানে উপকৃত কৃষক ২৮৪ জন। সেখান থেকে ঝলকায় গিয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষ এলাকা সরেজমিনে দেখেন তিনি।
কমিশনারের সঙ্গে থাকা জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিকের দাবি, “আসলে সরকার চাইছে, হেক্টর পিছু ধানের ফলন বাড়াতে। অন্যথায় আগামী দিনে সমস্যা হবে। আর ফলন বাড়াতে গেলে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া দরকার। ধান প্রদর্শনী ক্ষেত্রের জন্য কমপক্ষে ১০০ হেক্টর জমি চিহ্নিত করা হয়। এক সঙ্গে ১০০ হেক্টর জমি জুড়ে চাষ হলে কৃষকেরাও ভালমন্দ বুঝতে পারেন। তাঁরা দেখতে পারেন, অন্য জমিতে কেমন ফলন হয়েছে আর প্রদর্শনী ক্ষেত্রের জমিতে কেমন ফলন হয়েছে। তাতে উৎসাহিত হয়ে অনেকেই উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে চাষ করতে পারেন। যে বীজে এত দিন চাষ করে এসেছেন, তা ছেড়ে নতুন বীজে চাষ শুরু করতে পারেন। কৃষকদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।”
কৃষি দফতরের হিসেবে, বন্যায় পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় ৪৯ হাজার ৫৮৮ হেক্টর জমির ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার ফলে ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৯৫৫ মেট্রিক টন ধান কম হবে। তা থেকে ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৯৭০ মেট্রিক টন চাল মেলার কথা ছিল। বন্যায় অন্তত ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ধান চাষে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দাসপুর ১ ব্লকে। প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। কেশপুর এবং দাসপুর ২ ব্লকে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর করে জমির ফসল ডুবেছে। দাঁতন ১ ব্লকে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ভেসেছে বন্যার জলে।
মাস দুয়েক আগে, অগস্ট মাসেই পশ্চিম মেদিনীপুরে এক বার বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। টানা বৃষ্টিতে জেলার ৬৮৪টি মৌজার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রায় ৩০ হাজার ৫২৭ হেক্টর জমির চাষ নষ্ট হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হন অন্তত ১ লক্ষ ৭ হাজার কৃষক। অক্টোবরে সেখানেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ১৮৫টি মৌজা। তার মধ্যে আগের মৌজাগুলিও রয়েছে। অর্থাৎ, ওই সব এলাকায় খুব কম সময়ের মধ্যে দু’বার বিপর্যয় হল। কৃষিক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৮৫ কোটি টাকা। উদ্যানপালনে ১০৮ কোটি টাকা। অধীর আগ্রহে তাই কেন্দ্রের ক্ষতিপূরণের অপেক্ষায় রয়েছেন চাষিরা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.