পুরভোটে ঝাড়গ্রাম
অনুন্নয়নের অস্বস্তি ঢাকতে কৌশলে প্রচার
“হ্যালো, আমি বাবু বলছি। বৌদির রেশন কার্ড হয়েছে?” ফোনের অপর প্রান্তে পেশায় শিক্ষক যুবাটি রীতিমতো হতবাক। সাত সকালে এ আবার কী বিটকেল প্রশ্ন! যিনি ফোন করেছেন তিনি ঝাড়গ্রাম পুরশহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী সৌমেন মাহাতো। এলাকায় অবশ্য ‘বাবু’ নামেই তাঁর পরিচিতি বেশি। কুশল বিনিময় করে সৌমেন তাঁর ভোটারদের জানাচ্ছেন, ‘যে কোনও সমস্যা হলে আমি আছি।’ বাড়ি-বাড়ি প্রচারে গিয়েও সৌমেন যেন ‘মুস্কিল আসান বনমালী’। রঘুনাথপুরের এক গৃহস্থের বাড়িতে সটান ঢুকে গিয়ে ধাঁই করে ধুলো-উঠোনে বসে সৌমেনের সাফ কথা, “ভোটে না জিতলেও আগামী পাঁচ বছর আমি আপনাদেরই পাশে থাকব।” বাড়ির হতবাক গিন্নির প্রশ্ন, “না জিতলেও পাশে থাকবে, তা আবার হয় নাকি!” সৌমেন তখন পাল্টা বলছেন, “২০০৩ সালে এই ওয়ার্ডে কংগ্রেসের হাত চিহ্নে জিতে পাঁচ বছর এলাকার কাউন্সিলর ছিলেন দুর্গেশ মল্লদেব। এলাকার মানুষ কিন্তু ওই সময় প্রয়োজনে তাঁকে কাছে পাননি। ফের ২০০৮ সালে কংগ্রেসের বিজয়প্রকাশ মাহাতো নির্বাচনে জিতে এলাকার কাউন্সিলর হন। ওয়ার্ডবাসীর সমস্যার সুরাহা হয়নি। জিতলেও পাশে পাওয়া যায় না অনেককে।”
তৃণমূলের বর্তমান জেলা সাধারণ সম্পাদক দুর্গেশবাবু এ বার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলপ্রার্থী। দল দুর্গেশবাবুকে পুরপ্রধান হিসেবে তুলে ধরেছে। বিজয়প্রকাশবাবু তৃণমূলে যোগ দিয়ে টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এই প্রেক্ষিতে প্রচারের অভিনবত্বে বিপক্ষের প্রার্থীদের গোল দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রাক্তন ফুটবলার তথা প্রাক্তন এসএফআই নেতা সৌমেন। প্রাক্তন এই ছাত্র নেতার সমর্থনে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটারের বাড়িতে গিয়ে দীপাবলির শুভেচ্ছা-কার্ড দিয়ে প্রচার পর্ব সেরে ফেলেছেন এসএফআইয়ের সদস্য-সদস্যারা। ৩১ বছর ক্ষমতায় থেকেও অনুন্নয়নের কাঁটায় জেরবার বামেরা। অভিযোগের আঁচ টের পাচ্ছেন সিপিএমের এই তরুণ প্রার্থীও। কিন্তু নির্বিকার সৌমেনের দাবি, “আমার ওয়ার্ডে গত দশ বছর কোনও কাজ হয়নি। এর জন্য দায়ী দুর্গেশবাবু ও বিজয়প্রকাশবাবু।” দুর্গেশবাবু ও বিজয়প্রকাশবাবুর পাল্টা জবাব, “বিরোধী ওয়ার্ডে কোনও বরাদ্দ দিত না বাম পুর-কর্তৃপক্ষ। তাহলে কাজ হবে কী ভাবে!” ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী দুর্গেশবাবুও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন। দুর্গেশবাবুর কথায়, পাহাড় প্রমাণ অনুন্নয়ন। প্রতিটি মানুষের কাছে গিয়ে জানতে চাইছি তাঁরা কী চান। কারণ রাজ্যের শাসক দল হিসেবে আমরা মানুষের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ।”
পুরসভার বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের আনন্দমোহন পণ্ডা এবার ওয়ার্ড বদল করেছেন। আনন্দমোহনবাবুর পুরনো ১৬ নম্বর (নতুন ৯ নম্বর) ওয়ার্ডটি এ বার মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় এবার তিনি নতুন ১৬ নম্বর (পুরনো ১৫ নম্বর) ওয়ার্ডে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু তাঁর পূর্বতন ওয়ার্ডে উন্নয়নের ‘ট্র্যাক-রেকর্ড’ ভাল নয়। আনন্দমোহনবাবুর অবশ্য দাবি, “বাম পুরবোর্ড টাকা দেয়নি বলেই তো আমার ওয়ার্ডে কাজ হয়নি।” এবার নতুন ওয়ার্ডে দাঁড়িয়ে তাই অনুন্নয়নকেই হাতিয়ার করেছেন আনন্দমোহনবাবু। নতুন ১৬ নম্বর (পুরনো ১৫ নম্বর) ওয়ার্ডটি দীর্ঘ দিন সিপিএমের দখলে রয়েছে। ফলে এবার সুবিধেই হয়েছে আনন্দমোহনবাবুর। নতুন ১৬ নম্বর ওয়ার্ডটিতে গরিব খেটে খাওয়া মানুষের সংখ্যা বেশি। বুধবার বেনাগেড়িয়ায় প্রচারে গিয়ে আনন্দমোহনবাবুকে শুনতে হয়েছে সিপিএমের বিরুদ্ধে অনুন্নয়নের হাজারো অভিযোগ।
স্থানীয় মাছ বিক্রেতা রাজু দাসের বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে আনন্দমোহনবাবুর আশ্বাস, “এতদিন বিরোধী ছিলাম রে। তাই হাত খুলে মানুষের জন্য কাজ করতে পারিনি। এ বার তোদের ওয়ার্ডে আমায় জেতা, পুরবোর্ডে আমরাই আসছি। তোদের সব হবে।” করজোড়ে রাজুবাবু ও তাঁর স্ত্রী সুপ্রিয়াদেবী বললেন, “জ্যাঠামশাই, তবে তাই হোক...!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.