|
|
|
|
|
পুরভোটে মেদিনীপুর |
প্রচারে ‘হট-কেক’ কবিতা কার্ড
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
|
কারও লিফলেটে লেখা, ‘ছিলাম-আছি-থাকব, সব কথাই রাখব।’ কেউ লিখেছেন, ‘বিগত দিনে না কাজের জন্য দুঃখ পুষবেন না, আর জেনে বুঝে অবুঝ হয়ে মনকে দুষবেন না।’ কারও কার্ডে আবার আহ্বান, ‘নতুন সকাল আনতে দিন। পরিবর্তনের ডাক দিন।’
পুরভোটের মুখে এমনই সব লিফলেট, কার্ড পৌঁছে যাচ্ছে ভোটারদের বাড়িতে বাড়ি। সঙ্গে ভোটপ্রার্থীদের আবেদন, ‘কাজ করার সুযোগ দিন।’ একটা সময় রং-তুলিতে লেখা পোস্টারই ছিল প্রচারের মাধ্যম। চতুর্দিকে দেওয়াল লিখনও হত। দিন বদলেছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রচারের মাধ্যমও বদলেছে। হাতে লেখা পোস্টারের সংখ্যা কমে এখন মেশিনে ছাপানো ফ্লেক্স-পোস্টারের রমরমা। কবিতা লিখে, কাজের খতিয়ান দিয়ে এমন কার্ড, লিফলেট বিলির চলও এ বার মেদিনীপুরে নজরে পড়ার মতো বেড়েছে।
মেদিনীপুরের মতো শহরে পুরভোটের ময়দানে রীতিমতো অভিজ্ঞ আশিস চক্রবর্তী। তৃণমূলের এই নেতা এ বার প্রার্থী হয়েছেন ২১ নম্বর ওয়ার্ডে। ভোটারদের কাছে লিফলেট এবং কার্ড পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। কার্ডের এক দিকে ২০১৪ সালের ক্যালেন্ডার। অন্য দিকে প্রার্থীর নাম। সঙ্গে লেখা, ‘স্বাগত ২০১৪।’ আর লিফলেটটি ইস্তেহারের মতো। আশিসবাবুর কথায়, “মানুষের আশীর্বাদ চাইতে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি। এই কার্ড আর লিফলেট দিচ্ছি। দলের বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে এই উদ্যোগ।” লিফলেট বিলি করছেন ২২ নম্বর ওয়ার্ডের আরএসপি প্রার্থী চৈতালী দে-ও। তাঁর লিফলেটটি একটু আলাদা। একদিকে প্রার্থীর নাম-পরিচয়, অন্যদিকে জরুরি কিছু ফোন নম্বর। যেমন, দমকল-থানা-হাসপাতাল। কবিতার ছন্দে চৈতালীদেবীর আবেদন,
‘আগমার্কা গালভরা প্রতিশ্রুতি নয়
আমাদের আচরণ-বিচরণ-আদর্শ ও কাজই হোক আমাদের পরিচয়।’ |
পুর-প্রচারে রকমারি লিফলেট। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
পুরভোটের ময়দানে যাঁরা নতুন মুখ, তাঁদের একজন সুদেষ্ণা নন্দী। ছাত্র পরিষদের এই নেত্রী এ বার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেসের প্রার্থী। প্রচারে বেরিয়ে তিনিও লিফলেট বিলি করছেন। এখানেও কবিতা। প্রার্থী লিখেছেন, ‘জানতে শিখতে নেইকো লাজ
সবার জন্য করব কাজ।
আছে শিক্ষা, আছে দীক্ষা, আছে উদার মন
সুযোগ পেলেই করব প্রমাণ, করে উন্নয়ন।’
৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী শিপ্রা মণ্ডলও প্রচারে বেরিয়ে কার্ড বিলি করছেন। সঙ্গে লিফলেট। কার্ডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি রয়েছে। পাশে লেখা, ‘২২ নভেম্বর আসছে দিন। সকাল সকাল ভোট দিন।’ আর লিফলেটে রয়েছে বুথ ভিত্তিক কাজের খতিয়ান। বিদায়ী কাউন্সিলর শিপ্রাদেবী বলেন, “গত ৫ বছরে কোন এলাকায় কী কী কাজ হয়েছে, তা মানুষকে জানানোর দরকার। লিফলেটে সেটাই জানাচ্ছি।” প্রচারে বেরিয়ে লিফলেট বিলি করছেন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী উত্তম গোপও। তাঁর আবেদন, ‘দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ পুরবোর্ড গড়তে, এলাকার বঞ্চনার জবাব দিতে ভোট দিন।’ মেদিনীপুরের ২৫টি ওয়ার্ডে এ বার সবমিলিয়ে ১১৩ জন প্রার্থী রয়েছেন। কমবেশি সকলে প্রচারে বেরিয়ে ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে এমন লিফলেট-কার্ড পৌঁছে দিচ্ছেন।
আগামী ২২ নভেম্বর মেদিনীপুর পুরসভা নির্বাচন। শহর জুড়ে এখন জোরকদমে চলছে প্রচার। প্রচারে কিছুটা এগিয়ে তৃণমূলই। শহরের সর্বত্র জোড়া ফুল চিহ্নের পতাকা পতপত করে উড়ছে। একই খুঁটিতে দু’-তিনটি করে পতাকা বাঁধা হয়েছে। সঙ্গে প্রচুর পোস্টার-ফেস্টুন-ব্যানার। তৃণমূলের শহর সভাপতি সুকুমার পড়্যার কথায়, “আগামী দিনে প্রচার তুঙ্গে উঠবে। মানুষের উপর আমাদের আস্থা আছে। আমরা একক ভাবে পুরসভা দখল করব।” সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক কীর্তি দে বক্সীর মন্তব্য, “এটা ঠিক, পোস্টার-ফেস্টুনে আমরা শহর ছয়লাপ করতে পারিনি। কারণ, আমাদের সামর্থ্য সীমিত। তবে, আমরা মানুষের মনের মধ্যে আছি। আমরা যাঁদের প্রার্থী করেছি, তাঁরা মানুষের সঙ্গেই থাকেন।” |
|
|
|
|
|