সরকারি দামে আলুর আকাল বাজারে
হিমঘরে পর্যাপ্ত আলু রয়েছে। তবু বাজারে আলুর দেখা নেই। অন্তত সরকারি দামে নেই।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জেলা জুড়ে এই ছবি। আলু কিনতে হলে ফিসফিস করে দোকানিকে বলতে হচ্ছে। তিনি ব্যাগ নিয়ে চলে যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর ব্যাগে আলু ভরে ক্রেতার হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন। তবে সরকার নির্ধারিত ১৩ টাকা দরে নয়। কেজি প্রতি ১৫-১৬ টাকায়। কোথাও আর বেশি দামে।
মেদিনীপুর শহরে আলু বিক্রির সরকারি দু’টি কাউন্টার খোলা হয়েছে। তবে সেখানে লম্বা লাইন। অনেকের হাতেই অত সময় নেই। তাই লুকিয়ে-চুরিয়ে বেশি দাম দিয়েই আলু কিনতে হচ্ছে। সমস্যা মোকাবিলায় বুধবার মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠক হয়। সেখানে এডিজি (অপরাধ দমন শাখা) জয়ন্ত বসু, আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত, জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের সঙ্গে জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি, অতিরিক্ত জেলাশাসকেরা ও কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিকেরাও উপস্থিত ছিলেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে তিনটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
১) বেআইনিভাবে কোনও ব্যবসায়ী যাতে ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠাতে না পারেন, সে জন্য কড়া নজরদারি চালানো হবে। কোনও গাড়ি ধরা পড়লে সেই আলু পাঠিয়ে দেওয়া হবে সরকারি কাউন্টারে।
২) হিমঘর থেকে আলু বের করার ব্যবস্থা করা হবে। এক্ষেত্রে হিমঘর মালিকেরা শ্রমিক সঙ্কটের কথা জানিয়েছেন। দ্রুত সেই সঙ্কট মেটাতে প্রশাসন পদক্ষেপ করবে।
৩) আজ, বৃহস্পতিবার আলু ব্যবসায়ী সংগঠন ও হিমঘর মালিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করবেন জেলাশাসক।
সেখানে জেলার প্রকৃত চিত্র জানার পরই পরবর্তী রূপরেখা তৈরি হবে। জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি বলেন, “আলু যাতে বাইরে না যায় তার জন্য নজরদারি রয়েছে। যাতে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, সাধারণ মানুষ সরকার নির্ধারিত দামে তা পেতে পারেন সে জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”

আলু বিক্রেতাদের সঙ্গে নিয়ে খড়্গপুর এসডিও অফিসের সামনে ডেপুটেশন বামদের। —নিজস্ব চিত্র।
সরকারি দামের থেকে বেশি দামে আলু বিক্রির জন্য জেলায় ধরপাকড় চলছে। বুধবারও ২০-২২টি আলুর লরি আটক করা হয়েছে। অভিযোগ, ভিন্ রাজ্যে আলু নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তাতে। ২টি গাড়িকে মেদিনীপুরে, ২টি গাড়ি বেলদায়, ৩টি গাড়ি খড়্গপুরে ও ১০টি গাড়ি পুরুলিয়ায় পাঠানো হয়েছে। বাকি গাড়িগুলি পাঠানো হয়েছে কলকাতায়। পশ্চিম মেদিনীপুর আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বরেন মণ্ডল বলেন, “আমরা তো চাইছি যে, সরকার সব আলু কিনে নিক। তাহলে আমাদের আপত্তি নেই। নাহলে অন্য রাজ্যে পাঠানোর অনুমতি দিক। নতুবা ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়ে যাবে।”
হিমঘর থেকে আলু বের না করার যে সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীরা নিয়েছিলেন তা-ও এদিন প্রত্যাহার করা হয়েছে। বরেনবাবু জানান, এ বার প্রায় ২ কোটি ৬০ লক্ষ বস্তা আলু (প্রতি বস্তা ৫০ কেজি) জেলার ৭৬টি হিমঘরে রাখা হয়েছিল। এখনও হিমঘরে ৭৫ লক্ষ বস্তা আলু রয়েছে। বরেনবাবুর কথায়, “এই আলুর ৫ লক্ষ বস্তা বীজ হিসাবে ব্যবহার হবে। ১০ লক্ষ বস্তা খাবারের জন্য লাগবে। বাকি ৬০ লক্ষ বস্তা আলুর কী হবে? আর তো বড় জোর দেড় মাস। তার মধ্যেই তো নতুন আলু সব বাজারেই এসে যাবে। তারপর তো ওই আলু ফেলে দিতে হবে। তাই আমরা চাই সরকার সমস্ত আলু কিনে নিক।” সমস্যা সমাধানে কৃষি বিপণন মন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছেন সবংয়ের বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। তাঁর কথায়, “আমি সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি, আলু নিয়ে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে তা যে দ্রুত কাটিয়ে দেওয়া হয়।”
বাজারে আলুর জোগান বাড়ানোর দাবিতে বুধবার বিকেলে খড়্গপুর মহকুমাশাসকের কাছে আলুর খুচরো বিক্রেতাদের নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় সিপিএম। নেতৃত্বে ছিলেন সিপিএমের খড়্গপুর জোনাল সম্পাদক মনোজ ধর, নেতা অনিল দাস, নান্টু মণ্ডল প্রমুখ। তাঁদের বক্তব্য, হিমঘরে আলু মজুত থাকলেও তা বাজারে আসছে না। ফলে কৃত্রিম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হলে সব আগে বাজারে আলু আনতে হবে। মনোজবাবু বলেন, “যা আলু হিমঘরে আছে, তা বাজারে এলে আলুর দাম এমনিতেই ১৩ টাকা হয়ে যাবে। সেই চেষ্টা না করে ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে হয়রানি বাড়াচ্ছে সরকার।” মহকুমাশাসককে এই মর্মে এ দিন স্মারকলিপিও দিয়েছে সিপিএম।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.