হাসপাতালেই মুখেভাত ময়ূখের
ন্নপ্রাশন বলে কথা!
সকাল সকাল স্নান করিয়ে নতুন ধুতি-পাঞ্জাবি পরানো হয়েছিল। কপালে চন্দনের ফোঁটা। বেলুন, রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো হয়েছিল আশপাশ। পঞ্চব্যঞ্জন সাজিয়ে ‘বড়মামা’ ময়ূখের মুখে প্রথম বার ভাত দিলেন। তার আগে মাথায় দুর্বাঘাস ছুঁইয়ে আশীর্বাদ করলেন বাকি মামা-মাসিরা। সব মিলিয়ে বুধবার সকাল থেকে হইহই রইরই কাণ্ড চলল আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের এসএনসিইউ ইউনিটে। গত মাস ছ’য়েক ধরে এই হাসপাতালই তার বাড়ি-ঘর। ডাক্তার, নার্সরাই পরমাত্মীয়। বড়মামার ভূমিকায় এ দিন দিব্যি মানিয়েছিল হাসপাতাল সুপার নির্মাল্য রায়কে। যে শিশুর জীবন নিয়েই এক সময়ে সংশয়ে ছিলেন চিকিৎসকেরা, তাকে পরম যত্নে পালন করতে পেরে সকলেই আপ্লুত।
কী অবস্থায় ময়ূখ এসেছিল হাসপাতালে?
মাস ছ’য়েক আগে এক রাতে কুকুরের মুখ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া পুঁটলি থেকে পাওয়া গিয়েছিল সদ্যোজাত শিশুটিকে। গোঘাট থানার পুলিশ আরামবাগ-বাঁকুড়া সীমান্ত এলাকা থেকে পরিত্যক্ত শিশুটিকে উদ্ধার করে আনেন আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে।
ময়ূখকে কোলে নিয়ে আদর করতে দেখা গেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ সুব্রত ঘোষকে। তাঁর অধীনেই ভর্তি করা হয়েছিল ময়ূখকে। সুব্রতবাবুর কথায়, “শিশুটিকে যে দিন আনা হয়েছিল, বয়স ছিল মেরেকেটে এক দিন। পোকামাকড়ের কামড়ের দাগ ছিল শরীরে। তার উপরে শরীরে জল কমে গিয়ে মৃতপ্রায় অবস্থা। তবে বিশেষ পরিচর্যায় ও এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।”

অন্নপ্রাশনে কমতি পড়েনি আদর-যত্নের। —নিজস্ব চিত্র।
নির্মাল্যবাবু জানালেন, ময়ূখের রক্ষণাবেক্ষণ খুব সহজ কাজ ছিল না। হাসপাতালের অন্য প্রসূতিরা অনুরোধে ময়ূখকেও বুকের দুধ খাইয়েছেন। ক্রমশ সুস্থ হয়ে ওঠে ময়ূখ। নামও রাখা হয়। চিকিৎসক-নার্স-হাসপাতাল কর্মী, সকলেরই মায়া পড়ে গিয়েছে ওর উপরে। সুপারের কথায়, “সিস্টাররাই মুখেভাতের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। ঠিক হয়, চাঁদা তুলে ধুমধাম করেই তা পালন করা হবে। আমরাই তো এখন ওর অভিভাবক।”
এই উপলক্ষে সকাল থেকে ভীষণ ব্যস্ত ছিলেন পম্পা ঘোষ, রঞ্জনা নন্দী, অর্চনা কুণ্ডুদের মতো নার্সরা। ময়ূখের জন্য রান্নাবান্নার আয়োজন ছিল অঢেল। অতিথিদের জন্য ছিল মিষ্টি। নিমন্ত্রিতদের মধ্যে ছিলেন গোঘাট থানার উদ্ধারকারী পুলিশ মামারা। যে মায়েরা কোনও না কোনও সময়ে বুকের দুধ খাইয়েছেন ময়ূখকে, তাঁদেরও নিমন্ত্রণ জানাতে ভোলেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পুলিশের তরফে কেউ হাজির হতে না পারলেও তাঁরা পাঠিয়ে দিয়েছেন নানা রকম খেলনা, উপহার। যাঁরা এসেছেন, সকলেই ময়ূখের জন্য হাতে করে এনেছেন কিছু না কিছু।
শিশুটির পালক নির্দিষ্ট না হওয়া পর্যন্ত সে হাসপাতালেই থাকবে বলে জানিয়েছেন সুপার। মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় বলেন, “শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য একটি আবেদন পাওয়া গিয়েছে। সেটি নিজে তদন্ত করে জেলা প্রশাসনে পাঠিয়েছি। সরকারি নিয়মনীতি অনুযায়ী এজেন্সির মাধ্যমে দত্তক প্রক্রিয়া চলে। উত্তরপাড়ার একটি এজেন্সি বিষয়টি দেখছে।”
অন্নপ্রাশনের নিয়ম মেনেই এ দিন ময়ূখের সামনে বড় থালা সাজিয়ে রাখা হয়েছিল পেন-খাতা-মাটি এবং পয়সা। ময়ূখ পয়সার দিকে হাত বাড়াতেই তাকে ঘিরে থাকা ভিড়টা হইহই করে উঠল, “বড় হয়ে অনেক টাকা হবে ওর।”
অর্থ না বিদ্যা বড় হয়ে কোনটা জুটবে ময়ূখের কপালে, তা সময়ই বলবে। কিন্তু আর যাই হোক, ভালবাসায় যে কমতি পড়বে না, তা হয় তো জন্মলগ্নেই স্থির হয়ে গিয়েছে।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.