হুগলি জেলাশাসকের দফতরে বুধবার আলু নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। ছিলেন জেলাশাসক মনমীত নন্দা, এডিজি (ইবি) মৃত্যুঞ্জয়কুমার সিংহ, সারা বাংলা প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি, হিমঘর মালিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা। এ ছাড়াও পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকেরাও এসেছিলেন। বৈঠকের পরে মৃত্যুঞ্জয়বাবু জানান, আলুর ফলনের দিক থেকে হুগলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জেলা। সে কারণেই রাজ্যস্তরের বৈঠক এখানেই ডাকা হয়েছিল। তাঁর কথায়, “কিছু দিন ধরেই আলুর কৃত্রিম অভাব তৈরি করা হচ্ছিল। তা ছাড়া, পুজোর মরসুমে শ্রমিকের অভাবও থাকে। সব মিলিয়ে বাজারে আলুর জোগানে সংকট দেখা দেয়। তবে এ বার তা কেটে যাবে। এই জেলার হিমঘরগুলি থেকে প্রতি দিন যাতে ৬০ হাজার প্যাকেট আলু বাজারে আনা যায়, তা দেখা হচ্ছে। পুলিশ এ ব্যাপারে তদারকি করছে। বিশেষ কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে।” |
প্রশাসনিক বৈঠক চুঁচুড়ায়। |
মঙ্গলবার রাতেই প্রশাসন ও থানাস্তরে সরকারি নির্দেশিকা আসে। সেখানে বলা হয়, হিমঘরগুলিতে মজুত আলুর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে তা বাইরে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই মতো, বুধবার সকাল থেকে আরামবাগের পুলিশ কয়েকটি হিমঘরে যায়। সব মিলিয়ে এ দিন বিভিন্ন হিমঘর থেকে প্রায় ৬০ হাজার বস্তা আলু বের করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। হিমঘর থেকে পুলিশি নিরাপত্তায় গাড়িগুলি পাঠানো হচ্ছে নানা দিকে। কোথায় কত প্যাকেট পাঠানো হচ্ছে, তার খুঁটিনাটি হিসেব রাখা হচ্ছে। জেলাশাসক জানান, প্রশাসন চেষ্টা করছে সংকট কাটিয়ে উঠতে। বৃহস্পতিবার থেকেই বাজারে এর প্রভাব বোঝা যাবে।
হিমঘর মালিকেরা অনেকেই দাবি করেছেন, শ্রমিক সমস্যার ফলেই আলু বের করতে অসুবিধা হচ্ছে। তা ছাড়া, গত কয়েক দিনে আলু ব্যবসায়ীরাও আলু বের করতে চাননি। উৎসবের মরসুমে শ্রমিক সমস্যার কথা অস্বীকার করেনি প্রশাসন। সে জন্য একশো দিনের কাজের প্রকল্পে শ্রমিক নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। হুগলি জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, বিডিওদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে পুরো বিষয়টি দেখভাল করবে পুলিশ। |
কৃষি আধিকারিকদের উপস্থিতিতে আলু বেরোচ্ছে কামারকুণ্ডুর একটি হিমঘর থেকে। |
বুধবার সকালে আরামবাগের কাবলের একটি হিমঘরে হানা দেয় পুলিশ। প্রচুর আলু মজুত থাকা সত্ত্বেও তা বের করা হচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্ন করা হয়। শ্রমিক না পাওয়াতেই এই পরিস্থিতি বলে দাবি করেন কর্তৃপক্ষ। পুলিশ মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগীকে বিষয়টি জানায়। মহকুমাশাসক বিডিওদের শ্রমিক জোগাড়ের ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন। একশো দিনের প্রকল্পে সেই কাজ শুরুও করেন শ্রমিকেরা। পুড়শুড়াতেও পুলিশি হানা চলে।
আলু ব্যবসায়ীরা এর আগে জানিয়েছিলেন, সরকার নির্ধারিত ১৩ টাকা কিলো দরে আলু বিক্রি করা অসম্ভব। সমস্ত খরচ এবং নষ্ট আলুর হিসেব বাদ দিয়ে এই দামে লাভ করা যায় না। সারা বাংলা প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির কর্তা স্বপন সামন্ত অবশ্য এ দিন বৈঠকের পরে বলেন, “লভ্যাংশ কম থাকলেও ১৩ টাকায় বিক্রি করেও লাভ থাকছে। কিন্তু এক শ্রেণির ব্যবসায়ী অতিরিক্ত লাভ করতে চাইছেন বলেই সমস্যা হচ্ছে।” হিমঘর থেকে আলু বেরোতে শুরু করায় পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনিও।
|
বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |