বেসরকারি অংশীদারের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ সরকারের
পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) গড়ে ওঠা রাজ্যের একমাত্র মেডিক্যাল কলেজ ঘিরে গড়ে ওঠা বিতর্কের জেরে রাজ্য সরকার বেসরকারি অংশীদার, কেরলের গ্লোবাল এডুকেশন নেট (জিনেট) সংস্থার বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত থানায় অভিযোগ দায়ের করল। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তপন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জিনেটের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে। বিষয়টি খুবই জটিল। রাজ্য সরকারকে তাই কর্পোরেট আইনজীবীদের পরামর্শ নিতে হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ হিসেব করতে সময়ও লেগেছে অনেক। এরপরেই থানায় জিনেটের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করি।’’
উল্লেখ্য, ত্রিপুরার হাঁপানিয়ায় ‘পিপিপি’ মডেলে মেডিক্যাল কলেজটি তৈরি করা এবং পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে ২০০৪ সালে চুক্তি করে তখনকার বামশাসিত কেরলের সংস্থাটি। কলেজটি চালু হয় ২০০৬ সালে। পরবর্তী কালে অভিযোগ ওঠে, রাজ্য সরকারের সঙ্গে জিনেটের চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সংস্থাটি কাজ না করে, বহু টাকা লুঠ করে রাজ্য ছেড়ে চলে যায় ২০০৯ সালে। ২০০৯ এর সেপ্টেম্বরে ত্রিপুরা সরকার একটি ‘সোসাইটি’ গড়ে তাদের হাতেই মেডিক্যাল কলেজ পরিচালনার দায়িত্ব ছেড়ে দেয়। অক্টোবরের শেষে জিনেটের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার নানা অভিযোগ দায়ের করেছে শহরের আমতলি থানায়। পুলিশ অফিসার প্রাণজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে রাজ্য সরকারের পক্ষে যে এফআইআর করা হয়েছে, তাতে জিনেটের বিরুদ্ধে প্রতারণা, চুরি-সহ বিভিন্ন অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।’’ স্বাস্থ্য দফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্তা, অমলেন্দু সিন্হা জানান, ‘‘রাজ্য সরকারের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৮২ কোটি টাকা। ক্ষতিপূরণ চেয়ে জিনেট-এর কাছে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশের কোনও উত্তর জিনেট না দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত এফআইআর দায়ের করা হয়।’’ এফআইআরে আর্থিক হিসেবের গরমিল, সরকারি টাকার নয়ছয় ইত্যাদির কথা উল্লেখ করা হলেও ক্ষতিপূরণের কথা জানানো হয়নি।
২০০৯ সাল থেকেই রাজ্যের প্রধান বিরোধী কংগ্রেস জিনেটের বিরুদ্ধে সরকারের কাছে অভিযোগ জানাতে থাকে। কংগ্রেস নেতা রতনলাল নাথের কথায়, ‘‘এই নিয়ে বহু বার বিধানসভায় রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। বলেছি, জিনেট চুক্তি খেলাপ করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে গিয়েছে। অথচ রাজ্য সরকার উদাসীন। কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’’ শেষ পর্যন্ত সরকার জিনেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে কংগ্রেসের বক্তব্যকেই মেনে নিল। কংগ্রেসের পক্ষে অভিযোগ করা হয়েছে, কেরলের বামনেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জেরেই জিনেট-এর চেয়ারম্যান কে বালচন্দ্রণ নায়ারকে ত্রিপুরার বাম সরকার বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দিয়ে পরে রাজ্য ত্যাগ করতে সাহায্য করেছে। আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে রাজ্যের প্রাক্তন সিপিএম নেতা, যিনি পরে দল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেন, সেই প্রবীর চক্রবর্তীর সরাসরি আঙুল তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের বিরুদ্ধে। সিপিএমের পক্ষ অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
জিনেটের সঙ্গে রাজ্য সরকারের চুক্তি হয় ২০০৪ সালের অক্টোবরে। সংস্থাটি রাজ্য ছেড়ে চলে যায় ২০০৯ সালে। রতনবাবু প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘অক্টোবরের শেষে করা এফআইআর-এ রাজ্য সরকার অভিযোগ এনেছে চুক্তির সময় থেকেই অর্থাৎ সংস্থাটি প্রতারণা করে চলেছে। জিনেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে এত দিন সময় লাগল কেন?’’ প্রাক্তন বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, ‘‘সিপিএমের যেসব নেতা, মন্ত্রী, সরকারি আমলা এই মেডিক্যাল কলেজ কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের এবং অভিযুক্ত সংস্থা জিনেট-কে আড়াল করতেই রাজ্য সরকার আইনি ব্যবস্থা নিতে পাঁচ বছর সময় নষ্ট করেছে।’’ জিনেট কেলেঙ্কারি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি করেন।
যে সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই জিনেটের চেয়ারম্যান কে বালচন্দ্রণ নায়ার বা অন্য কোনও কর্তার সঙ্গেই যোগাযোগ করা যায়নি। সরকারি এফআইআরে সরাসরি সংস্থার চেয়ারম্যান কে বালচন্দ্রণ নায়ার, কোম্পানি সেক্রেটারি টি কে হরিকুমার, এবং ট্রেজারার জি ই আম্মার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.