|
|
|
|
প্রধানমন্ত্রীর সমান নিরাপত্তার দাবি মোদীর, খারিজ করল কেন্দ্র |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
রাজনৈতিক নেতাদের কতখানি নিরাপত্তা থাকা উচিত, তা নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। লোকসভা নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদীর নিরাপত্তা নিয়ে ফের সেই বিতর্ক হাজির। পটনায় মোদীর সভায় বিস্ফোরণকে সামনে রেখে বিজেপি-র দাবি, তাদের প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থীর নিরাপত্তা বাড়ানো হোক। প্রধানমন্ত্রীর মতোই এসপিজি নিরাপত্তা দেওয়া হোক মোদীকে। মোদীর উপস্থিতিতেই বিজেপির সংসদীয় বোর্ড প্রস্তাবও পাশ করেছে। পত্রপাঠ প্রস্তাবটি খারিজ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
রেওয়াজ বলছে, বেশির ভাগ নেতাই বাড়তি নিরাপত্তা চান জঙ্গি হানার আশঙ্কার কথা বলে। ব্যতিক্রম প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া। এনডিএ জমানায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণীর কাছে তিনি এসপিজি-র নিরাপত্তা তুলে দেওয়ার অনুরোধ করেন। আডবাণী মেনে নেন। পরে দেবগৌড়া ফের জানান, তাঁর দল বলছে নিরাপত্তা থাকা দরকার।
মোদীর ব্যাপারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, কার উপরে কতখানি হামলার আশঙ্কা, সেই অনুযায়ীই তাঁর নিরাপত্তা ঠিক হয়। সন্দেহ নেই, মোদীর উপর হামলার আশঙ্কা রয়েছে। পটনায় বিস্ফোরণের পরে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, তিনি ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের খতম তালিকায় রয়েছেন। আইএসআই এবং বব্বর খালসাও হামলার ছক কষছে বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন। সম্প্রতি মোদীর সভার আগে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয়, বিশেষ নিরাপত্তা মহড়া ও নিরাপত্তা নিয়ে আগাম বৈঠকের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে বলছেন, মোদী এমনিতেই সর্বোচ্চ পর্যায়ের জেড-প্লাস নিরাপত্তা পান। এনএসজি-র ব্ল্যাক ক্যাট কম্যান্ডোরা তাঁকে ঘিরে থাকে। সেই নিরাপত্তা আরও আঁটসাট করা হচ্ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর মতো এসপিজি নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। সেটা আইনবিরুদ্ধ। ইন্দিরা গাঁধী হত্যার পর এই এসপিজি তৈরি হয়েছিল। প্রথমে শুধু প্রধানমন্ত্রীর জন্যই এসপিজি-র নিরাপত্তা থাকত। রাজীব গাঁধীর হত্যার পরে আইন বদলে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারকেও এসপিজি দেওয়া হয়। |
নিরাপত্তার ঠোকাঠুকি |
প্রধানমন্ত্রী |
• নিরাপত্তার দায়িত্বে এসপিজি (স্পেশ্যাল প্রোটেকশন গ্রুপ)
• ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা
• প্রধানমন্ত্রীর চার পাশে সব সময় এসপিজি বলয়
• দ্বিতীয় বলয়ে স্পেশ্যাল ডিউটি গ্রুপ
• তৃতীয় বলয়ে রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা
• কেউ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাইলে এসপিজি-র ওই বিশেষ দলের ছাড়পত্র প্রয়োজন |
নরেন্দ্র মোদী |
• নিরাপত্তার দায়িত্বে এনএসজি (ন্যাশনাল সিকিওরিটি গার্ড), গুজরাত পুলিশ
• প্রধানমন্ত্রীর মতোই ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা
• নিরাপত্তারক্ষীদের একটি দল হামলাকারীদের ঠেকাবে
• একটি দলের দায়িত্ব মোদীকে বাঁচানো
• তৃতীয় দলের দায়িত্ব তাঁকে সুরক্ষিত জায়গায় নিয়ে যাওয়া
• রাজ্যের বাইরে সফরে: গুজরাত পুলিশ, এনএসজি, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা, সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ডিজি-র বৈঠক |
বিজেপি-র দাবি: প্রধানমন্ত্রীর সমান নিরাপত্তা
এখন এসপিজি নিরাপত্তা পান: মনমোহন সিংহ, অটলবিহারী বাজপেয়ী, সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধী, প্রিয়ঙ্কা গাঁধী, রবার্ট বঢরা
(যখন তিনি স্ত্রীর সঙ্গে সফর করেন) |
সুশীলকুমার শিন্দে
‘এসপিজি নিরাপত্তা আইন মেনে দেওয়া হয়। কেউ দাবি করলেই তো এসপিজি নিরাপত্তা দেওয়া যায় না।’
|
|
মোদী একা নন, মায়াবতী থেকে শুরু করে অনেকেই আগে এসপিজি-র নিরাপত্তা চেয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, “এসপিজি ও এনএসজি কম্যান্ডোর মধ্যে বিশেষ ফারাক নেই। কিন্তু রাজনৈতিক নেতারা আসলে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক মর্যাদা হিসেবে দেখেন। যতটা না নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তার থেকে বেশি তাঁরা ভোগেন অস্তিত্ব সঙ্কটে।” অবশ্য এমনও রয়েছেন কেউ কেউ, যাঁরা নিরাপত্তা বলয়ের বাইরেই থাকতে চান। জর্জ ফার্নান্ডেজ যেমন রেলমন্ত্রী হওয়ার পরও ফিয়াট গাড়িতে ঘুরে বেড়াতেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও একই ছবি দেখা গিয়েছে।
কিন্তু বিজেপির কৌশল ভিন্ন। দলের এক শীর্ষ নেতার মতে, প্রতিটি সভাতেই মোদী সন্ত্রাস মোকাবিলায় কেন্দ্রের ব্যর্থতা নিয়ে সরব হন। এর মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের আবেগকেও উস্কে দেন। এখন মোদীর নিরাপত্তা প্রধানমন্ত্রীর সমান হলে তাঁকে মনমোহন সিংহের সঙ্গে এক সারিতে বসানো সম্ভব হবে। ইউপিএ তথা কংগ্রেস নেতৃত্ব বিজেপিকে সেই সুযোগ দিতে রাজি নন।
কংগ্রেসের মুখপাত্র রাজ বব্বরের কটাক্ষ, “কাসভ থেকে মোদী, নিরাপত্তা সবার দরকার।” স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আর পি এন সিংহের অভিযোগ, “মোদীর যথেষ্ট নিরাপত্তা আছে জেনেও বিজেপি তা নিয়ে রাজনীতি করছে।” এ প্রসঙ্গে তিনি একটি বেফাঁস মন্তব্যও করেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিজেপি সরকারই রাজীবকে নিরাপত্তা দেয়নি। সেই জন্যই ১৯৯১-এ তাঁকে প্রাণ হারাতে হয়। কিন্তু ঘটনা হল, সে সময় ক্ষমতায় ছিল চন্দ্রশেখর সরকার। বিজেপি সরকার আসে ১৯৯৬ সালে। |
|
|
|
|
|