মুখ্যমন্ত্রীর বাজার-অভিযান
এত আলুর বস্তা কার, উত্তর পেলেন না মমতা
লেজ স্ট্রিট বাজারের সামনে ফুটপাথে বসে পেঁয়াজ বিক্রি করেন ছোট দোকানি সিয়ারাম সাউ। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দোকানে এসে পেঁয়াজের দর জিজ্ঞেস করতে সিয়ারাম বললেন, “চল্লিশ রুপেয়া কিলো।” ঠিক তার আগেই শিয়ালদহের কোলে মার্কেটে পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মুখ্যমন্ত্রী জেনে এসেছেন, পেঁয়াজের এ দিনের পাইকারি দর ২০০ টাকা পাল্লা (পাঁচ কেজি) অর্থাৎ কেজি প্রতি ৪০ টাকা। স্বভাবতই, সিয়ারামের ব্যাখ্যায় ‘খুশি’ হলেন তিনি। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী চলে যেতেই সিয়ারাম বললেন, “ডরকে বাতায়া চল্লিশ রুপেয়া কিলো।” কেন? সিয়ারাম জানালেন, বেশ কিছু দিন আগে তিনি ওই পেঁয়াজ কিনেছিলেন বস্তা পিছু (৪০ কিলোগ্রাম) ২২০০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি কিলো ৫৫
টাকায়। ওই দামে কিনে লাভ রেখে বিক্রি করতে হলে পেঁয়াজের দাম হয় অন্তত ৬০ টাকা প্রতি কিলো। তা হলে কি এখন লোকসানে বেচছেন? সিয়ারামের কথায়, “আমার লোকসান হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যে আমার দোকানে এসেছিলেন সেটাও তো সৌভাগ্যের।”
শহরে আলু-পেঁয়াজের দাম কত, তা জানতে বুধবার মধ্য কলকাতার কোলে মার্কেট ও কলেজ স্ট্রিট বাজার ঘোরেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ। এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ কোলে মার্কেটে ঢোকার মুখে মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আসে, বাজারের এক কোণে গোটা পঁচিশেক আলুর বস্তা ডাঁই করে রাখা। সেগুলি কার, মুখ্যমন্ত্রী জানতে চাইলে কেউ কোনও জবাব দিতে পারেননি। তার পরেই পুলিশ ওই আলু বাজেয়াপ্ত করে।
সিয়ারামের সেই দোকান। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।
এর পরে মমতা চলে যান পেঁয়াজ পট্টিতে।
কোলে মার্কেটের পরে মুখ্যমন্ত্রী যান কলেজ স্ট্রিট বাজারে। তিনি অবশ্য বাজারের মধ্যে ঢোকেননি। যদিও মুখ্যমন্ত্রী সেখানে থাকাকালীন বেশি দামে আলু বিক্রির কারণে দু’জন খুচরো ব্যবসায়ীকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। অভিযোগ, তাঁরা ৪০-৫০ টাকা দরে আলু বিক্রি করছিলেন। যদিও ওই বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ওই দুই দোকানি নতুন আলু বেচছিলেন, জ্যোতি আলু নয়। নতুন আলুর দাম ওরকমই।
বুধবারও কলকাতা পুরসভা শহরের কয়েকটি বাজারে আলু সরবরাহ করে। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় তা ছিল অত্যন্ত কম, মাত্র ৪০ টন। ফলে সকাল থেকেই শহরের অধিকাংশ বাজারে জ্যোতি আলু বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে। দক্ষিণ কলকাতার এক কাউন্সিলর জানান, হালতু বাজারে ৩৫ টাকা দরে আলু বিক্রি হচ্ছিল।
খবর পেয়ে তা রোখা হয়। পূর্ব কলকাতার বেলেঘাটা ও কাদাপাড়ায় ২২ থেকে ২৫ টাকা দরে জ্যোতি আলু বিক্রি হয়েছে।
এ ছাড়া, আজাদগড়, যাদবপুর, বিজয়গড়, গড়িয়াহাট এবং লেক মার্কেটের আলুর দোকানগুলিতে বিক্রি হয়েছে শুধু পেঁয়াজ, আদা এবং রসুন। আলু মেলেনি। এরই মধ্যে খবর আসে, রানিকুঠিতে পুরসভা ১৩ টাকা দরে আলু দিচ্ছে। তা কেনার জন্য ক্রেতাদের লম্বা লাইন পড়ে যায়। স্থানীয় এক বাসিন্দা রমেন রায় বলেন, “সকাল থেকে আলুর খোঁজে তিনটি বাজার ঘুরেছি। কোথাও পাইনি। বাধ্য হয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছি।”
যাদবপুর, গড়িয়াহাট এবং লেক মার্কেটে এই দিন দুপুর পর্যন্ত সরকারি আলুর গাড়ি ঢোকেনি বলে ব্যবসায়ীরা জানান। কলেজ স্ট্রিট বাজারের এক ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ মণ্ডল বলেন, “এ দিনও জানবাজার থেকে এক প্যাকেট (৫০ কেজি) জ্যোতি আলু ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমরা বাজারের দোকান বলে কিনতে সাহস পায়নি। যাঁরা রাস্তায় বিক্রি করছেন, তাঁরাই মুনাফা করছেন।” তবে পুর-প্রশাসন জানিয়েছে, আজ, বৃহস্পতিবার থেকে পুরসভার প্রতিটি নিজস্ব বাজারে ১৩ টাকা কেজি দরে আলু পাওয়া যাবে।
বুধবার একই ছবি দেখা গিয়েছে বাগুইআটি, কেষ্টপুর ও নাগেরবাজারেও। বাগুইআটি বাজারের বেশিরভাগ আলুর দোকানেই আলু নেই। যে দু’টি দোকানে আলু পাওয়া গিয়েছে, তার দামও ছিল ২৫ টাকা। এক ক্রেতার কথায়, “সরকার বেছে বেছে কয়েকটা মাত্র বাজারে ১৩ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করছে। তাতে আমাদের কী লাভ? আমরা কি বাসে চেপে বা অটো ভাড়া করে ওই বাজারগুলোতে আলু কিনতে যাব?”
পুর প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার থেকে আলুর সরবরাহ বাড়ানো হবে। হাওড়ার জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে প্রতি আড়তদারকে হিমঘর থেকে ১০০ বস্তা করে আলু সরকারি দরে বিক্রি করা হবে।
বাজারে ওই আলু ১৩ টাকা দরে পাওয়া যাবে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.