• আমরা কেন সঞ্চয়ের জন্য মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা রাখব?
দেখুন আপনি যেখানেই যান, আপনার কাছে একই ধরনের সঞ্চয়ের সুযোগ মিলবে। উদাহরণ পোস্ট অফিস বা ব্যাঙ্ক। মিউচুয়াল ফান্ডই একমাত্র মাধ্যম যেখানে নানা সঞ্চয়ের পথ এক জায়গায় এসে মিশে যায়। একই প্রকল্পে আপনি ঋণপত্র এবং শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারছেন, অথবা শুধুই শেয়ারে বা ঋণপত্রে। চাইলে প্রথাগত এই দুই পথের বাইরেও আপনি হাঁটতে পারেন। যেমন সোনা। আপনার বয়স ও ঝুঁকির খিদে অনুযায়ী আপনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনা আয়াসে বিনিয়োগ করতে চাইলে এই মুহূর্তে মিউচুয়াল ফান্ডই সেই সুযোগ দিতে পারে।
• কিন্তু সাধারণ মানুষ এই সিদ্ধান্ত নেবেন কী করে? তাঁরা তো এত কিছু বোঝার জন্য নিয়মিত যে-গবেষণার প্রয়োজন, তা করার জায়গায় নেই?
তাঁদের প্রয়োজন বুঝে বিনিয়োগের পরামর্শ দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত পরামর্শদাতা আছেন। আপনি জানালেই তাঁরা আপনার কাছে যাবেন। আপনার কাছ থেকে জেনে নেবেন আপনার প্রয়োজন। তার উপর ভিত্তি করেই আপানাকে সঞ্চয়ের পথ দেখাবেন তাঁরা। আপনার সঙ্গে পরামর্শ করে।
দেখুন সঞ্চয়ের বাজারে সাধারণ ভাবে চার-পাঁচটা রাস্তা আছে। তার মধ্যে রয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড, শেয়ার, ঋণপত্র, সোনা। তা ছাড়া, আমরা এখন ‘রিয়েল এস্টেট’-ও শুরু করেছি।
মিউচুয়াল ফান্ডের বাজার সাধারণ সঞ্চয়কারীদের নিয়েই। তবে আমাদের একটা শাখা আছে যাঁরা ধনীদের সঞ্চয় দেখাশোনা করেন। তবে এঁদের সেই অর্থে আমাদের পরামর্শের প্রয়োজন পড়ে না। কারণ এঁরা নিজেদের প্রয়োজন ও তা মেটানোর উপায় জানেন। তাই এঁদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের এবং সাধারণ সঞ্চয়কারীর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের অনেক ফারাক আছে।
সঞ্চয়ের সময়ে মাথায় রাখতে হয় যে, এই বাজারে সব বিনিয়োগের পথই এক সঙ্গে লাভজনক হয় না। তাই আপনার প্রয়োজন বুঝে ঠিক অনুপাতে বিভিন্ন ঝুঁকির সঞ্চয়ের পথে টাকা রাখাটাই শ্রেয়। আর এইখানেই প্রয়োজন মিউচুয়াল ফান্ডের। |
• শেয়ারে সরাসরি বিনিয়োগ করার ঝুঁকি আছে। কারণ, কোন সংস্থার শেয়ারে টাকা লাগাব, কবে তা তুলব এই সব অঙ্ক কষার অবস্থায় সাধারণ মানুষ নেই। তাই যদি হয়, তা হলে একই যুক্তিতে সাধারণ মানুষের তো মিউচুয়াল ফান্ডেও টাকা লাগানো উচিত নয়! সাধারণ মানুষ জানবেন কী করে যে, কোন ‘ফান্ড’ ঝুঁকি নিয়েও সব থেকে ভাল বিনিয়োগ করেছে?
ঠিকই বলেছেন। দেখুন সঞ্চয়ের জায়গায় প্রথমেই দেখা উচিত যে, লাভের অঙ্ক মূল্যবৃদ্ধির অঙ্ক ছাপিয়ে যাচ্ছে কি না। যদি তা না-হয়, তা হলে তো আপনার সঞ্চয়ের ডিম মূল্যবৃদ্ধির পেটে যাচ্ছে আর সম্পদ কমছে। ঐতিহাসিক ভাবে দেখা যাচ্ছে, শেয়ার বাজারই লম্বা দৌড়ের এই অঙ্কে লাভজনক। এটা অবশ্যই সত্যি যে, ভুল শেয়ারে টাকা ঢাললে অঙ্কটা একেবারেই বদলে যাবে। আর এই অঙ্কটা যাতে না-বদলায় সেটা দেখতেই তো আমরা আছি।
এ বার কোন ফান্ড বাছবেন? এখানে আপনি পরামর্শদাতার সাহায্য ছাড়াও নিজেই দেখে নিতে পারেন, একই ধরনের একাধিক ফান্ডের মধ্যে কারা ভাল করছে।
তবে আবারও বলছি নিজের প্রয়োজন ও ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা বুঝেই ফান্ডে লগ্নি করবেন।
• ই বাজারে সব থেকে খারাপ অবস্থায় সম্ভবত আছেন ৫০ পেরোনো কর্মীরা। বিশেষ করে যাঁদের পেনশন নেই। তাঁদের জন্য আপনাদের ভাবনা?
দেখুন আমাদের ব্যক্তিগত সম্পদ বিনিয়োগ ও তা দেখাশোনা করার জন্য একটা বিভাগ রয়েছে। তবে এঁদের কাছে অন্তত ২৫ লক্ষ টাকা রাখতে হবে। অবসরপ্রাপ্তরা এর সুবিধা নিতে পারেন। এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, আমরা লাভের কোনও গ্যারান্টি দিই না। অর্থাৎ আমরা বলতে পারি না যে, ১০ শতাংশ লাভ দেবই। কিন্তু সাধারণ ভাবে লাভের অঙ্ক মূল্যবৃদ্ধির হারের উপরেই থাকছে।
আমাদের একটা ফান্ড আছে যেখানে আপনি কম টাকা রেখেও ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিটের তুলনায় প্রতিযোগিতামূলক হারে ডিভিডেন্ড তুলতে পারেন। এই ফান্ডে বিনিয়োগ এমন ভাবে করা হয়, যাতে ঝুঁকিটা ঋণপত্র এবং শেয়ারে ভাগ হয়ে যায়। তবে পরামর্শদাতাদের সাহায্য নিয়ে আপনি নিজেই বিভিন্ন ফান্ডে বিনিয়োগ করে এই লাভ ঘরে তুলতে পারেন।
আপনি যাঁদের কথা বললেন, তাঁদের শেষ মুহূর্তে সঞ্চয় খুব বেশি বাড়ানোর আর সময় নেই। যা আছে তার মধ্যেই খেলতে হবে। আর এটা ব্যক্তি ভেদে বদলে যাবে। ফলে আমার পরামর্শ হবে, অভিজ্ঞ কোনও পরামর্শদাতার শরণাপন্ন হওয়া।
• সঞ্চয়কারীদের এ সব নিয়ে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আপনারা শিল্পের দিক থেকে কী করছেন?
আমাদের এই ব্যাপারে অভিজ্ঞতা সীমাবদ্ধ। কিন্তু কাজ শুরু হয়েছে। কী ভাবে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছনো যায়, তা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কী আমরা এখনও অন্ধকারে। তবে আবারও বলছি, কাজ শুরু করেছি।
• বাজারে এত রকম ফান্ড আছে। মানুষ সিদ্ধান্তই নিতে পারছে না।
ঠিকই। আমরাও এটা বুঝেছি। তাই আপনি যদি খেয়াল করেন, বুঝতে পারবেন, নতুন ফান্ড যা আসছে তা খুব জটিল নয়। তা ছাড়া, গত কয়েক বছরে ফান্ডের বাজারে ভিড় বাড়ার হার কমেছে। এ ব্যাপারে সেবি-ও খুব যত্নশীল এবং কড়া হয়ে উঠেছে। আমি মনে করি, এটা ভাল। বিশেষত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য।
• আপনার মতে সঞ্চয়ের জন্য সাধারণ মানুষের কী কী বিষয় মাথায় রাখা উচিত?
• কম বয়স থেকেই সঞ্চয় করুন। সঞ্চয়ের প্রয়োজন মিটিয়েই খরচ করার অভ্যাস করুন।
• কম বয়সে সঞ্চয়ের বড় অংশ শেয়ারে রাখুন। মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করলে প্রতিটি শেয়ারের অবস্থার উপর চোখ রাখার দায় থাকে না।
• আমরা একটা ফান্ড বাজারে এনেছি, যা শেয়ারে বিনিয়োগ করবে। যাঁরা সেখানে টাকা রাখবেন, তাঁদের মাঝ রাস্তায় ফান্ড থেকে টাকা তোলার সুযোগ থাকবে না। বছরে ডিভিডেন্ড পাওয়া যাবে। তিন বছর বাদে মূল টাকা ফেরত পাওয়া যাবে, সঙ্গে আরও কিছু টাকা, যা সম্পদের দাম বাড়ার উপর নির্ভর করবে। এটা ভাবার পেছনে একটাই কারণ। সাধারণ মানুষ যাতে বাজারের ওঠা-নামার অঙ্কে ঘাবড়ে গিয়ে নিজের সঞ্চয়কে বলি না-দেন।
• শুধু একটাই সঞ্চয়ের রাস্তা খুঁজবেন না। বিকল্পের খোঁজ রাখুন।
• লোভের বলি হবেন না।
• অন্যের কথায় লগ্নি করবেন না।
• দীর্ঘকালীন লাভের কথা মাথায় রেখে এগোন। |