আতঙ্কের দিনলিপি নিয়ে প্রকাশ্যে নির্যাতিতা
থেকে ঠিক ছ’মাস আগে শিউরে উঠেছিলেন আমেরিকাবাসী। তাঁদেরই সহ-নাগরিকের কীর্তিতে। এগারো বছর ধরে তিন তরুণীকে বন্দি করে, একটানা ধর্ষণ করেছিলেন ক্লিভল্যান্ডের বাসিন্দা এরিয়াল কাস্ত্রো। নজিরবিহীন অপরাধে বেনজির শাস্তিও হয়েছিল এই ধর্ষকের। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সঙ্গে হাজার বছরের কারাবাস। তবে সাজা অবশ্য ভোগ করতে হয়নি কাস্ত্রোকে। সাজা শোনার এক মাসের মধ্যেই জেলের কুঠুরিতে উদ্ধার হয় তার ঝুলন্ত দেহ। কাস্ত্রোর মৃত্যুর দু’মাস পর দীর্ঘ বন্দিনী জীবন নিয়ে অবশেষে প্রকাশ্যে মুখ খুললেন তিন নির্যাতিতার এক জন।
গত কাল এক টক-শো তে এসেছিলেন মিশেল নাইট। এরিয়াল কাস্ত্রোর প্রথম শিকার ছিলেন তিনই। ২০০২ এ রাস্তা থেকে যে কুড়ি বছরের কিশোরী অপহৃতা হয়েছিলেন আজ তিনি যুবতী। প্রশ্নের মুখে অকপটেই জানালেন তাঁর আতঙ্কের দিন-রাত্রির কথা।
“কাস্ত্রো যখন আমায় তুলে নিয়ে যায়, ভেবেছিল আমি বোধহয় বছর তেরোর যৌনকর্মী। পরে যখন আসল বয়স জানে, রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে যায়। তার পর সেই যে অত্যাচার শুরু হল, তা আর থামেনি এক দিনের জন্যও” জানিয়েছেন মিশেল। অল্প বয়সী মেয়েদের প্রতিই বরাবরই দুর্বলতা ছিল এরিয়ালের। ফলে এক বছর পরই সে ধরে আনে ষোড়শী আমান্দা বেরিকে। ২০০৪ সালে কাস্ত্রোর জালে শেষ শিকার ছিল চোদ্দো বছরের গিনা ডিজেসাস।
ঘরে জামাকাপড় না পরিয়ে, হাত-পায়ে ভারী চেন দিয়ে বেঁধে রাখা হত তাঁদের সকলকে। আধপেটা খাওয়া, লাগাতার যৌন নিগ্রহ তো ছিলই উপরি পাওনা হিসেবে জুটত মারধরও। মিশেলই যে হেতু সব চেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছিলেন কাস্ত্রোর বাড়িতে তাই ঝড়-ঝাপটাও বেশি সইতে হয়েছিল তাঁকেই। এগারো বছরে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিলেন মোট পাঁচ বার। কিন্তু কোনও সন্তানকেই বাঁচতে দেয়নি কাস্ত্রো। কখনও পেটের উপর ভারী লোহার চাকতি ফেলে আবার কখনও বা খেতে না দিয়ে পাঁচটি বাচ্চাই নষ্ট করে সে। সন্তান অবশ্য শেষমেশ হয় কাস্ত্রোর। তবে মিশেলের নয় আমান্দা বেরির। মায়ের সঙ্গে মেয়েটিকেও ওই বাড়িতেই আটকে রেখে দেয় সে।
মিশেল নাইটের কথায়, “প্রতিদিনই ঘুমোতে যেতাম কাঁদতে কাঁদতে। প্রত্যেকটা দিনই মরতাম একটু একটু করে। আর ওই পিশাচটা হাসত আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে। ভাবখানা ছিল, ওর রূপকথার দুনিয়ায় তিন নায়িকাই দিব্য আছে।” এরিয়ালের ক্লিভল্যান্ডের বাড়িতে বেশ কয়েক বার অচেনা গলা শুনেছেন নাইট-বেরিরা। কিন্তু কেউ যাতে টুঁ শব্দটা না করতে পারে তাই তাঁদের মুখে ময়লা মোজা গুঁজে, টেপ দিয়ে তা আটকে তবেই নীচে নামত এরিয়াল।
যে সুযোগের জন্য এগারোটা বছর অপেক্ষা করেছিলেন এই তিন তরুণী, আচমকাই তা আসে এক দিন। বাড়ি ফাঁকা পেয়ে সদর দরজা ভেঙে মেয়েকে নিয়ে পালান আমান্দা বেরি। তাঁর চিৎকারে ছুটে আসে প্রতিবেশীরা। আসে পুলিশও। বাড়ির দোতলায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার হন বাকি দু’জন। মিশেল আর গিনা ছাড়াও ঘুপচি অন্ধকার, নোংরা ঘরটা থেকে পাওয়া যায় প্রায় ৪২ কেজি ওজনের চেনও।
আতঙ্কের প্রহর শেষ হয়েছে, এখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় মিশেলের। কথা বলতে বলতে তাই মাঝেমাঝেই জলে ভরে যাচ্ছিল দু’চোখ। ছোটখাটো চেহারার মিশেল কিন্তু সমানতালে যুঝে গিয়েছেন নিজের সঙ্গেই। মনের জোরটাই যে শেষ সম্বল তাঁর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.