অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজ চাষে ঘাটতির ফলে বাজারে অমিল পেঁয়াজ। শুধু তাই নয়, আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় এই বছর যদি ভাল শীত না পড়ে তাহলে কমতে পারে পেঁয়াজের আকৃতিও।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কালনা মহকুমায় মূলত সুখসাগর প্রজাতির পেঁয়াজের চাষ হয়। চাষিরা জানিয়েছেন, এই প্রজাতির পেঁয়াজে জলীয় ভাব বেশি থাকলেও এর মিষ্টি ও ঝাঁঝালো স্বাদের কারণে এই পেঁয়াজ খেতে ভাল। এ বছর মূলত পূর্বস্থলী ১, পূর্বস্থলী ২ ও কালনা ১ ব্লকের প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর এলাকা জুড়ে এই প্রজাতির পেঁয়াজ চাষ হওয়ার কথা থাকলেও দুর্গাপুজোর আগের টানা বৃষ্টিতে সব হিসেব গিয়েছে উল্টে।
চাষিরা জানিয়েছেন, এ বছরের শুরু থেকেই সমস্যা দেখা গিয়েছে পেঁয়াজ চাষে। পুজোর আগে টানা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গিয়েছে পেঁয়াজের বীজ। কারণ, চাষের জমিতে জমে গিয়েছিল জল। ফলে পচে গিয়েছে চারাগাছ। অনেক জমিতে এখনও জমে রয়েছে জল। ফলে নতুন করে বীজ ফেলাও সম্ভব নয়। নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে বেড়েছে বীজের দাম।
পূর্বস্থলী ২ ব্লকের লক্ষ্নীপুর এলাকার চাষি আকবর শেখের কথায়, “এই সময় যেখানে পেঁয়াজের বীজের দাম থাকে কেজি প্রতি সাতশো থেকে আটশো টাকা, সেখানে এখন বীজ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায়। প্রয়োজন থাকায় চড়া দামেই কিনতে হচ্ছে বীজ।” তাঁর দাবি, চাষের শুরুতে এই ধরনের বিপর্যয় গত সাত-আট বছরে ঘটেনি। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের সিংহজুলি গ্রামের পেঁয়াজ চাষি মহসিন মণ্ডল বলেন, “বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার পর যে চারাগুলি বেঁচে রয়েছে সেগুলি নানা রোগে আক্রান্ত। জানিনা শেষ পর্যন্ত কী ভাবে চাষ হবে।” মন্তেশ্বর ব্লক কৃষি আধিকারিক রঙ্গন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ব্লকে বিকল্প চাষ হিসেবে পেঁয়াজ উঠে আসছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে এ বছর সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে কিছুটা সময় লাগলেও চাষিরা বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন।” |
রোদ উঠতেই শুরু হয়েছে নতুন করে বীজতলা তৈরির কাজ। —নিজস্ব চিত্র। |
স্থানীয় ও কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নাদনঘাট, বনপুরের মতো এলাকায় যেখানে উঁচু জমিতে সুখসাগর পেঁয়াজের চাষ হয় সেখানেও তৈরি হয়েছে সমস্যা। দেখা যাচ্ছে নানা রোগ। চাষিরা জানাচ্ছেন, টানা বৃষ্টির পর রোদ উঠতেই পেঁয়াজ চারার উপরের অংশ হলুদ হয়ে যাচ্ছে। তারপর গোটা গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ কীটনাশক প্রয়োগ করেও ফল মিলছে না। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বীজের নীচে ছত্রাক জনিত পচা রোগের কারণেই এই সমস্যা। তবে সঠিক ওষুধ প্রয়োগ করলে এই সমস্যা মিটতে পারে বলে জানিয়েছেন তাঁঁরা।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রতি লিটার জলে ৪ গ্রাম ব্লাইটক্স জাতীয় ওষুধ অথবা মেটালক্সিন-ম্যাঙ্কোজেবের মিশ্রণ প্রতি লিটার জলে ২ গ্রাম প্রয়োগ করে স্প্রে করলেই উপকার মিলবে। তাঁরা আরও জানান, এই রোগের জীবাণু থাকে মাটির গোড়াতে। তাই ওষুধ স্প্রে করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে মাটি ও চারা গাছের গোড়া ভাল ভাবে ভেজানো হয়। জমিতে স্প্রে করার সময় অসংখ্য ছিদ্র যুক্ত মেশিন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। কৃষি কর্তাদের আক্ষেপ, চাষিরা শুরুতেই পলিশেড পদ্ধতিতে চাষ করলে সমস্যা হত না।
কালনা মহকুমা কৃষি দফতরের সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “বৃষ্টির কারণে কালনা মহকুমায় পেঁয়াজের উৎপাদন পিছিয়ে গিয়েছে। অন্যান্য বছর এই সময়ে পেঁয়াজের চাষ শুরু হলেও এ বার বীজতলার কাজই শুরু হয়নি অনেক জায়গায়।” তাঁর সংযোজন, “দেরিতে শুরু হওয়া চাষের ফলন নির্ভর করবে শেষ দিকের শীতের উপর। এ ক্ষেত্রে শীত কমে গেলেই পেঁয়াজের আকার ছোট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” |
কী সমস্যা |
• টানা বৃষ্টিতে বেশির ভাগ জমিতে নষ্ট হয়ে গিয়েছে পেঁয়াজের বীজ।
• অনেক জমিতে এখনও জমে রয়েছে জল।
• বেড়েছে বীজের দাম।
• চারার উপরের অংশ হলুদ হয়ে যাচ্ছে।
• গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। |
প্রতিকারের উপায় |
• প্রতি লিটার জলে ৪ গ্রাম ব্লাইটক্স জাতীয় ওষুধ অথবা প্রতি লিটার জলে ২ গ্রাম মেটালক্সিন-ম্যাঙ্কোজেবের মিশ্রণ জমিতে স্প্রে করলে উপকার পাওয়া যাবে।
• অসংখ্য ছিদ্র যুক্ত মেশিন ব্যবহার করতে হবে। |
|