দীর্ঘ টানাপোড়েনের পরে বন্ধ হয়ে গেল বর্ধমানের তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ড। এ বার থেকে শহরের দু’প্রান্তে নবাবহাট ও আলিশার বাসস্ট্যান্ড দু’টিতেই সমস্ত বাস যাতায়াত করবে। শহরের মাঝখান থেকে এতদিনের বাসস্ট্যান্ড সরে যাওয়ায় কিছুটা অসুবিধা হলেও এতে যানজট অনেকটাই কমবে বলে শহরবাসীর একাংশের মত।
বুধবার অবশ্য নতুন বাসস্ট্যন্ডদু’টিতে তেমন ভিড় হয়নি। স্টা্যন্ডের বাইরেই যাত্রী ওঠানামা করেছে বাসগুলি। কারণ বাস মালিকদের দাবি, আলিশার বাসস্ট্যন্ডে বাস ঢোকানোর জন্য ৬০ টাকা ও নবাবহাটে বাস পিছু ২০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। তাঁরা আরও জানান, ওই টাকায় নবাবহাটি দীর্ঘক্ষণ স্ট্যান্ড ব্যবহার করা গেলেও আলিশায় বেশি টাকা দিয়েও কম সময় বাস রাখা যাচ্ছে। |
বাম আমল থেকেই তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ড সরানোর কথা চলছিল। তবে নতুন সরকারের আমলে শেষ পর্যন্ত তা রূপ পেল। বুধবার পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রও বলেন, “বর্ধমান শহরের এই বাসস্ট্যান্ড সরানোর প্রস্তাব দীর্ঘদিনের। আজ সেটা হল। এরপরে বাস যাত্রীদের কোথায় সমস্যা হচ্ছে, সেদিকে নজর রেখে সেগুলির সামাধান করা হবে।” এ দিন সকালেই তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে গিয়েছিলেন বর্ধমান পুরসভার জনা কুড়ি কাউন্সিলর। সেখানে বাসেদের তিনকোনিয়া বাসস্ট্যন্ডে ঢুকতে বারণ করেন তাঁরা। অবশ্য বাসগুলির পক্ষেও বাসস্ট্যন্ডে ঢোকা সম্ভব ছিল না। কারণ বাসস্ট্যন্ডে ঢোকার সবক’টি রাস্তাতেই গভীর গর্ত কেটে খুঁটি পুঁতে দেওয়া হয়েছিল মঙ্গলবার রাতে। তবে এ ভাবে গর্ত কেটে পথ আটকানোর ঘটনা তো রাজ্যের মানুষ দেখেছেন নন্দীগ্রামে বা বর্ধমানের রায়নার কিছু গ্রামে। সেখানে তৎকালীন সরকার বিরোধীরা মূলত পুলিশের ‘অনুপ্রবেশ’ রুখতেই রাস্তায় গর্ত কাটতেন। কিন্তু বাসস্ট্যান্ড বন্ধ করতেও একই কায়দা কেন? বর্ধমানের পুরপ্রধান স্বরূপ দত্তের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তিনি অবশ্য এড়িয়ে যান। তবে বাসস্ট্যান্ড সারানোর কাজের দায়িত্বে থাকা কাউন্সিলর খোকন দাস বলেন, “পাঁচিল গাঁথতে হলে তো গর্ত খুঁড়তেই হবে। সেটাই করা হয়েছে। পাঁচিলও গাঁথা হচ্ছে। ফাঁকা তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ডে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করে নজরদারি চালানো হবে। যাতে ফাঁকা জায়গা পেয়ে সামজবিরোধীরা কোনও অসামাজিক কাজ না করতে পারে।” |
ফাঁকা পড়ে রয়েছে তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ড। |
সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান আইনূল হকের অবশ্য দাবি, “যে ভাবে বাসস্ট্যান্ডটি সরানো হলো তা অগণতান্ত্রিক ও অপরিকল্পিত। কাউকে কিছু না জানিয়ে রাতারাতি বাসস্ট্যান্ড বন্ধ করে দেওয়ায় এ দিন মানুষের হয়রানির শেষ ছিল না। হাজার হাজার মানুষকে বাসের খোঁজে ছুটে বেড়াতে দেখা গিয়েছে। আর বাসগুলি এখানে ওখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমরা পরিকল্পনা করে বাসস্ট্যান্ড বন্ধ করতে চেয়েছিলাম। খড়গপুর আইআইটিকে দিয়ে একটা সমীক্ষাও করিয়েছিলাম। কিন্তু বুধবার রাতারাতি গর্ত কেটে বাসস্ট্যান্ডে বাস ঢোকা বন্ধ করিয়ে দেওয়া হল।” তাঁর অভিযোগ, “বাসগুলি নতুন দু’টি বাসস্ট্যান্ডে যাচ্ছে কী না, সেদিকে নজর রাখা হয়নি। এতে যানজট আরও বাড়বে। প্রতিদিনই শহরে প্রায় ২ লক্ষ মানুষ আসেন। তাঁরা কোথায় বাস ধরতে যাবেন বাস ধরতে, তা পরিস্কার নয়।”
সমস্যা দেখা গিয়েছে তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ডের একাংশে থাকা সরকারি বা এসবিএসটিসি বাসগুলিকে নিয়ে। এই স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি বাস কলকাতা যায়। কিন্তু এ দিন স্ট্যান্ডে তাদেরও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ফলে দূরপাল্লার যাত্রীরা সমস্যায় পড়েন। তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ডে থাকা এসবিএসটিসির টিকিট কাউন্টারও এ দিন খোলা সম্ভব হয়ে ওঠেনি বলে কর্মীদের অভিযোগ। তাঁদের দাবি, আগে বলা হয়েছিল, এসবিএসটিসির বাসগুলি এই স্ট্যান্ড ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু আজ সকালে বলা হয়, এই স্ট্যান্ড ব্যবহার করা যাবে না। এমনকী নবাবহাট থেকে ছেড়ে জিটি রোড বাইপাস দিয়ে কলকাতা যাওয়া-আসা করতে হবে বলেও জানানো হয়। অথচ শহরের ভেতর আমাদের বেশ কয়েকটি স্টপেজ রয়েছে। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরাও সকালের দিকে বাসের দেখা পাননি বলে জানা গিয়েছে।
জেলাশাসক সৌমিত্রমোহন বলেন, “এসবিএসটিসির বাসগুলিকে আপাতত একমাস শহরের ভেতর দিয়ে যেতে দেওয়া হচ্ছে। কারণ ওই বাসের কর্মীরা জানিয়েছেন, একমাস আগে থেকে অনেক যাত্রী কলকাতা যাওয়ার অগ্রিম টিকিট কেটে রেখেছেন। তবে এরপরে এসবিএসটিসি বাস ধরতে মানুষকে নবাবহাটে যেতে হবে।” এত দিন অনেকেই পুরনো জিটি রোডের নানা জায়গা থেকে কলকাতা যাওয়ার জন্য বাসে উঠতেন। এ বার মোটা টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে বাস ধরতে নবাবহাটে যেতে হবে শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। তবে শহরের অধিকাংশ মানুষেরই দাবি, যানজট মুক্ত শহর পেতে কিছু তো করতেই হবে। |
বুধবার ছবিগুলি তুলেছেন উদিত সিংহ। |