কিছু দিন আগেই তিনি প্রকাশ্য সভায় দাঁড়িয়ে বোমা মারার, বাড়ি জ্বালানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন কর্মীদের। এ বার কংগ্রেস কর্মীদের হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দিলেন বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল।
বর্ধমানে কংগ্রেসের অন্যতম ঘাঁটি কাটোয়ার উপপুরপ্রধান-সহ কয়েক জন নেতার বৃহস্পতিবার কলকাতায় তৃণমূল ভবনে গিয়ে শাসকদলে যোগ দেওয়ার কথা। এর পরে শনিবার কাটোয়া স্টেশন বাজার লাগোয়া চৌরাস্তায় সভা করার কথা মুকুল রায়ের। কিন্তু গত ক’দিন ধরে দলবদলে আগ্রহীদের টাঙানো মুখ্যমন্ত্রীর ছবি-সহ ফ্লেক্স ছেঁড়ার অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেসের লোকজনের বিরুদ্ধে।
এই দলবদল ও মুকুলবাবুর সভার প্রস্তুতি দেখতে এসে বুধবার কাটোয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অনুব্রত সাংবাদিক বৈঠকে হুমকি দেন, “কংগ্রেস যদি মনে করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোস্টার ছিঁড়ে হিরো হবে, তা হলে হাতের কব্জি কেটে নেব।” যা শুনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, “এর বাইরে ওঁরা আর কী বলতে পারেন! বামেদের হাত ধরে আসা দুষ্কৃতী-রাজনীতি শেষ হয়নি। বরং তৃণমূলের হাত ধরে পরম্পরা জাঁকিয়ে বসেছে।”
তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত অবশ্য এমন কথা প্রথম বলছেন না। পঞ্চায়েত ভোটের আগে, ১৭ জুলাই বীরভূমের পাড়ুই থানার কসবা এলাকার এক কর্মিসভায় তিনি বলেছিলেন, “যদি কোনও নির্দল প্রার্থী কারও বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয়, তার বাড়িটা ভেঙে জ্বালিয়ে দিন।... যদি কোনও প্রশাসন ভাবে নির্দলকে সমর্থন করবে, সেই প্রশাসনের পুলিশের উপরে বোমা মারুন।” এর পরেই কসবায় একাধিক নির্দল প্রার্থীর (আসলে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) বাড়িতে হামলা-বোমাবাজি হয়। খুন হন নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বাবা সাগর ঘোষ।
এর পরেও কিন্তু অনুব্রতর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে নালিশের ক্ষেত্রে গড়িমসির অভিযোগ ওঠে বীরভূমের জেলাশাসক এবং এসপি-র বিরুদ্ধে। কমিশন পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেও কার্যত কিছুই হয়নি। সম্প্রতি কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী ‘মাথা গুঁড়িয়ে দিন’ বলার পরেই মুর্শিদাবাদের পুলিশ-প্রশাসন যে তৎপরতায় কমিশনে অভিযোগ জানায় এবং তার জেরে অধীরকে তিরস্কার করা হয়, সেই তুলনায় অনুব্রতর গায়ে প্রায় আঁচই লাগেনি।
কসবার ওই ঘটনার পরে অনুব্রত দাবি করেন, তিনি অসুস্থ। তাঁর ‘স্লিপ অফ টাং’ হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীও বলেছিলেন, “ও তো বলেছে, যে এ কথা ও বলতে চায়নি।” তা নিয়ে এত হইচই কেন, সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। এ দিনের হুমকি প্রসঙ্গেও মুকুলবাবু বলেন, “অনুব্রত ওই ভাবে বলতে চায়নি। রাজনৈতিক ভাবে হাত চিহ্নকে মোছার কথা বলতে চেয়েছে। কী প্রেক্ষিতে এ কথা এল, খোঁজ নিচ্ছি।”
১৯৯৫ সালে বামেদের হাত থেকে কাটোয়া পুরসভা দখল করে কংগ্রেস। সেই থেকে তারাই ক্ষমতায় রয়েছে। কিন্তু রাজ্যে পরিবর্তনের পরেই দলের সংগঠনে ফাটল ধরে। স্থানীয় সূত্রের খবর, দীর্ঘদিনের উপ-পুরপ্রধান অমর রাম, প্রাক্তন কাউন্সিলর শমীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, জনি চৌধুরি ও দাঁইহাট পুরসভার কাউন্সিলর সুদীপ্ত রায় স্থির করেছেন তৃণমূলে যোগ দেবেন। গোড়া থেকেই উপ-পুরপ্রধানের পদে রয়েছেন অমরবাবু। কিন্তু দলে গুরুত্ব পাচ্ছেন না অভিযোগ করে তিনি জানান, এ
বার দল বদলে পুরসভার ‘দুর্নীতি’র বিরুদ্ধে লড়বেন।
গত কয়েক দিন ধরেই অমরবাবুরা কাটোয়া শহর জুড়ে মমতা ও অন্য কিছু তৃণমূল নেতার ছবি দেওয়া ফ্লেক্স টাঙিয়েছিলেন। তৃণমূলের অভিযোগ, কাটোয়া শহরের পাঁচ জায়গায় তাঁদের ফ্লেক্স ছেঁড়া হয়েছে। তারই জেরে কাটোয়া শহরের ছোটলাইন পাড়ে ওই সাংবাদিক বৈঠকে সেরে বেরিয়ে দলীয় কর্মীদের অনুব্রত বলেন, “কংগ্রেস অশান্তি করলে আমরাও তৈরি।” কাটোয়া যাঁর খাসতালুক, সেই বিধায়ক তথা প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “আমাদের কর্মীরা পোস্টার ছেঁড়েননি। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।” জেলা প্রশাসনের দাবি, এমন কোনও হুমকির কথা তাদের জানা নেই। |