|
|
|
|
গ্রেফতারি নিয়ে সংশয় |
অনুব্রত ও কথা বলতে চায়নি, মন্তব্য মমতার |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
অনুব্রত মণ্ডল ‘ও কথা’ (প্রকাশ্যে নির্দল প্রার্থীদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া এবং পুলিশের উপরে বোমা মারার উস্কানি) বলতে চাননি। তা হলে এ বিষয়ে এত চেঁচানোর কী আছে? পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে বিধানসভায় বলতে গিয়ে শনিবার এমন মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর এই কথার পরে অনুব্রতকে আদৌ গ্রেফতার করা হবে কি না, তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়ে গেল।
এ দিন বিধানসভায় পঞ্চায়েত ভোট সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “অনুব্রতকে নিয়ে যারা রাজনীতি করছে তাদের বলছি, ও তো ইতিমধ্যেই চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে। ও তো বলেছে যে, এ কথা ও বলতে চায়নি। পুরনো একটা খবর নিয়ে মিডিয়া বারবার দেখাচ্ছে। যে অন্যায় করে, আমি তাঁকে ক্ষমা করি না। আমার দলেরও যারা খুন করেছে, অপরাধ করেছে, তাদের গ্রেফতার করিয়েছি। কাউকে ছাড়িনি।” তিনি এ অভিযোগও তোলেন, “সিপিএম কী করেছে? সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, আনন্দমার্গী সমস্ত খুনি, ধর্ষণকারীদের কেন ছেড়ে রেখেছে? তাপসী মালিকের ধর্ষণকারীদের কেন ছেড়ে রাখা হয়েছে?” বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য পরে জানান, যাঁরা বিধানসভার সভ্য নন, তাঁদের নাম বাদ দেওয়া হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরে পুলিশ তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রতকে গ্রেফতার করবে কি না, তা নিয়ে নতুন করে সংশয় তৈরি হয়েছে। ঘটনা হল, শুক্রবারই সিউড়ি আদালত জামিন-অযোগ্য এবং আদালত-গ্রাহ্য ধারায় মামলা করার নির্দেশ দিলেও শনিবারেও মুক্তই ছিলেন অনুব্রত। তবে নানুরের বাসাপাড়ায় সুচপুর গণহত্যার ‘শহিদ স্মরণে’ তৃণমূলের অনুষ্ঠানে এ দিন তাঁকে দেখা যায়নি। |
|
দলীয় কার্যালয়ের পথে অনুব্রত মণ্ডল। শনিবার বোলপুরে বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি। |
পরে অনুব্রত জানান, ব্যস্ত থাকায় তিনি যেতে পারেননি। আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও এ দিন কেন তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না, সেই প্রশ্নের সামনে এ দিন মুখে কুলুপ এঁটেছিল বীরভূম জেলা পুলিশ। রাত পর্যন্ত একাধিক বার ফোন করা হলেও ধরেননি জেলার পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা। এসএমএস পাঠানোর পরে এক বার ফোন ধরে বলেন, “ওই ব্যাপারে আর কিছু বলব না।” এর পরেই ফোন কেটে দেন।
সব দেখেশুনে কংগ্রেস নেতা মানস ভুইয়াঁ বলেছেন, “যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দলের নেতাকে ‘ক্লিনচিট’ দিলেন, তার পরে পুলিশ আর কী করে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করবে? কী করেই বা তাঁকে শাস্তি দেবে?” রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “অনুব্রতকে নিয়ে কী করতে হবে, আদালতই সে কথা বলে দিয়েছে।” একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “উনি (মমতা) আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন। বিধানসভায় মন্ত্রী হিসেবে কী বলতে হয় আর তৃণমূল নেত্রী হিসেবে কী বলতে হয়, দুর্ভাগ্যবশত তা নিয়ে ওঁর বোধোদয় হল না।” সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, “কিছু হলেই আমাদের কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। কিন্তু এত কিছুর পরে, আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও অনুব্রত গ্রেফতার হচ্ছেন না!” |
|
বিধানসভা থেকে ওয়াকআউটের পর। সূর্যকান্ত মিশ্র এবং মানস ভুঁইঞা। শনিবার। |
গত ১৭ জুলাই অনুব্রতর সেই বক্তৃতার পরে কসবা অঞ্চলে একাধিক নির্দল প্রার্থীর (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) বাড়িতে হামলা, বোমাবাজি হয়। নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বৃদ্ধ বাবা সাগর ঘোষকে গুলি করে মারা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের মন্তব্য শুনে হৃদয়বাবু বলেন, “উনি সাধারণ মানুষের মুখ্যমন্ত্রী নন। অনুব্রত মণ্ডলের মুখ্যমন্ত্রী। একতরফা মন্তব্য করেছেন।” একই সঙ্গে তাঁর দাবি, “আমার স্ত্রী-ও মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছিল বাবার খুনের ঘটনা বিশদে জানিয়ে। সে বিষয়টি দেখে উনি মন্তব্য করতে পারতেন। আমার বাবাকে কেন হত্যা করা হল, মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় তার জবাব দিন।” তবে অনুব্রতর সাজা নিয়ে আশাবাদী হৃদয়বাবু। বলেছেন, “চেয়ার পাঁচ বছরের জন্য। মুখ্যমন্ত্রী অনুব্রত মণ্ডলের পাশে দাঁড়ালেও সত্যিটা সত্যিই থাকবে। উনি (অনুব্রত) সাজা পাবেনই।”
কমিশনের সচিব তাপস রায় বলেন, “উনি (মুখ্যমন্ত্রী) কী বলেছেন, তা নিয়ে মন্তব্য করব না। তবে এটা বলতে পারি, বিষয়টি নিয়ে যতটা গুরুত্ব দেখিয়েছি তা বিচার করেই আদালত নতুন ধারা যুক্ত করেছেন।”
সে দিন পাড়ুই থানার কসবা এলাকার সভায় কী বলেছিলেন অনুব্রত? বলেছিলেন, “কসবায় যদি কোনও নির্দল প্রার্থী কারও বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয়, তার বাড়িটা ভেঙে জ্বালিয়ে দিন।” “যদি প্রশাসন ভাবে, নির্দলকে সমর্থন করবে, সেই প্রশাসনের পুলিশের উপরে বোমা মারুন। আমি বলছি, বোমা মারতে”, এমনও বলতে শোনা যায় ওই নেতাকে। |
অনুব্রতকে নিয়ে যারা রাজনীতি করছে তাদের বলছি, ও তো ইতিমধ্যেই চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে। ও তো বলেছে যে, এ কথা ও বলতে চায়নি। তা হলে এত চেঁচানোর কী আছে?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
বিধানসভার অধিবেশনে |
উনি সাধারণ মানুষের মুখ্যমন্ত্রী নন। অনুব্রত মণ্ডলের মুখ্যমন্ত্রী। হৃদয় ঘোষ
নিহত সাগর ঘোষের ছেলে |
|
উস্কানিমূলক বক্তৃতা এবং তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে এর পরে অনুব্রতর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তার পরেও কিছু হয়নি বলেই অভিযোগ। এমনকী, শুক্রবার সিউড়ির মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চক্রবর্তী অনুব্রতর বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা করার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি কোন কোন ধারায় পুলিশ মামলা করবে, তা জানিয়ে দেওয়ার পরেও এ দিন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতিকে প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছে। তিনি সকালে বোলপুরে বাড়ির বৈঠকখানায় দলের কর্মী-সমর্থকদের মনে করালেন, “নির্বাচন-পর্ব শান্তিতে মিটেছে। গণনার সময় উচ্ছৃঙ্খল আচরণ যেন কেউ করবেন না।”
এ দিনই নানুরের বাসাপাড়ায় ‘শহিদ-স্মরণে’ তৃণমূলের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে মঙ্গলকোটের বটতলার কাছে এক নির্দল প্রার্থী (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) ও তাঁর সঙ্গীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে অনুব্রতর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। এক জন হাসপাতার্লে। অনুব্রত অবশ্য বলেছেন, “ওই হামলা সম্পর্কে কিছু জানি না।” ১৭ জুলাইয়ের মন্তব্য সম্পর্কে এ দিন অনুব্রতর বক্তব্য, “আমি অসুস্থ। ওটা ‘স্লিপ অফ টাং’ ছিল। তবে আগেই বলেছি, ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার উপর সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে। বিচারক নির্দেশ দিয়েছেন, পুলিশও তদন্ত করবে।”
|
পুরনো খবর: চার জামিন অযোগ্য ধারা দিলেন বিচারকই
|
নিহতদের স্মরণে ‘শহিদ দিবস’ |
|
সভামঞ্চে নিহতদের পরিবারের ছবিটি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি। |
সুচপুরে নিহত ১১ জন খেতমজুরের স্মরণে ‘শহিদ দিবস’ অনুষ্ঠানেও প্রকাশ্যে এল তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব। শনিবার নানুরে বাসাপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকার ওই অনুষ্ঠান থেকে নিজেদের দূরেই সরিয়ে রাখলেন দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামীরা। ছিলেন না অনুব্রতও। তাঁদের অভিযোগ, সিপিএমকে সঙ্গে নিয়ে ওই অনুষ্ঠান করা হয়েছে। যদিও দলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি অশোক ঘোষ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। অনুব্রতর দাবি, ভোট নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সভায় যোগ দিতে পারেননি। |
পুরনো খবর: সুচপুর-কাণ্ডে ধরা পড়ল এক ফেরার |
|
|
|
|
|