উদ্বোধনই সার, দেখভাল হয় না মূর্তির
কারও গায়ে জমেছে পুরু ধুলো। কারও গলায় আবার পচছে কয়েক মাসের পুরনো ফুলের মালা। এক দিকে মণীষিদের নতুন নতুন মূর্তি বসানো হচ্ছে, কিন্তু পুরনো মূর্তিগুলির রক্ষণাবেক্ষণে নজর নেই কারও।
আসানসোল পুর এলাকায় নানা মণীষির ডজনখানেক মূর্তি রয়েছে। সম্প্রতি শ্রীচৈতন্যের দু’টি পূর্ণাবয়ব মূর্তি আনা হয়েছে শহরে। পুরসভা সূত্রে খবর, কিছু দিন পরেই সেগুলি বসানো হবে। এ ছাড়াও সিধো-কানহু, মহাত্মা গাঁধী, সুভাষচন্দ্র বসুর পূর্ণাবয়ব মূর্তি তৈরির বায়না দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। পরিকল্পনা রয়েছে তিলকা মুর্মু, মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তি আনারও। পুরসভার এমন উদ্যগের কথা জেনে শহরবাসী খুশি। কিন্তু তার পাশাপাশি তাঁদের দাবি, ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা হোক পুরনো মূর্তিগুলিরও।
শহরের অনেক বাসিন্দারই অভিযোগ, জন্ম ও মৃত্যুদিন ছাড়া কোনও মণীষির মূর্তিতেই সারা বছর হাত পড়ে না। অথচ, মূর্তিগুলি যেখানে যেখানে রয়েছে সেগুলি শহরের যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। আসানসোলের নুরউদ্দিন রোড ও এসবি গড়াই রোডের সংযোগস্থলে রয়েছে সুভাষচন্দ্র বসুর পূর্ণাবয়ব মূর্তি। পুর ভবনের সামনে রয়েছে মুন্সী প্রেমচন্দের আবক্ষ মূর্তি।
বার্নপুরে অনাদরে পড়ে গাঁধী মূর্তি। —নিজস্ব চিত্র।
জিটি রোডের পুরনো আশ্রম মোড় থেকে চুরুলিয়া যাওয়ার প্রধান রাস্তার সংযোগস্থলে কাজী নজরুল ইসলাম, ওই রাস্তার বার্নপুর মোড়ে ভগৎ সিংহ, দেওয়ানি আদালতের সামনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ট্রাফিক মোড়ে জওহরলাল নেহরু, পুরানিয়াতলায় প্রেমচন্দ আবক্ষ, কল্যাণপুরে বিধানচন্দ্র রায়, এসবি গরাই রোডে কবি সুকান্ত, মহিশীলায় ইন্দিরা গাঁধী, ডামরা হাটতলায় রঘুনাথ মুর্মু, আদালত মোড়ে মহাত্মা গাঁধী, রবীন্দ্রভবনের সামনে কবির মূর্তি রয়েছে। আসানসোল দক্ষিণ থানার পাশে ও মহিশীলায় ক্ষুদিরামের এবং স্টেশন রোডে একটি বি আর অম্বেডকরের মূর্তি রয়েছে। পুরসভা ছাড়াও এর মধ্যে পুলিশ বা স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগেও দু’একটি মূর্তি বসানো হয়েছে। বার্নপুরে স্কব গেটে ইন্দিরা গাঁধী, ত্রিবেণী মোড়ে মহাত্মা গাঁধী ও ১০ নম্বর গেটের কাছে সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি রয়েছে।
ঢাকঢোল পিটিয়ে অনুষ্ঠান করে এ সব মূর্তি বসানো হলেও পরবর্তী কালে আর সেগুলির দিকে কর্তৃপক্ষ ফিরে তাকান না বলে অভিযোগ শহরের অনেকেরই। থানার সামনে ধুলো জমে ক্ষুদিরামের ব্রোঞ্জের মূর্তির এমন অবস্থা যে সেটি ব্রোঞ্জের তৈরি বলে বোঝা দায়। পুর ভবনের সামনে প্রেমচন্দের মূর্তি থেকে ব্যস্ত রাস্তায় ভগৎ সিংহ, মহাত্মা গাঁধী বা বিদ্যাসাগর, সব মূর্তিতেই নোংরা জমেছে। ধুলো জমে সেগুলির গায়ের কারুকাজেরও ক্ষতি হচ্ছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ।
আসানসোলের আপকার গার্ডেনের বাসিন্দা দেবব্রত ঘোষের অভিযোগ, “কবি সুকান্তের মূর্তি কয়েক বার দুষ্কৃতীরা ভেঙেও দিয়েছে।” তাঁর মতে, মূর্তি বসানোর আগে রক্ষাণাবেক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থার পরিকল্পনা করা উচিত। প্রত্যেকটি মূর্তি ঘিরে উদ্যান তৈরি, প্রয়োজনে বিভিন্ন সংস্থাকে বিঞ্জাপনের অনুমতির বিনিময়ে নিয়মিত সাফাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া উচিত। আর এক বাসিন্দা বিকাশ গায়েনের বক্তব্য, “মূর্তি বসিয়ে যে কোনও মণীষিকে স্মরণ করা যেতে পারে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে শুধু জন্ম বা মৃত্যুদিনে মালা পরানোয় সব সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে। বছরের নানা সময়ে এই মণীষিদের জীবন নিয়ে অনুষ্ঠান হওয়া জরুরি। সেক্ষেত্রে হয়তো মূর্তি দেখভালের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবেন কর্তারা।”
আসানসোলের মেয়র পারিষদ তথা হিরাপুরের বাসিন্দা লক্ষ্মণ ঠাকুর জানান, বার্নপুরে সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি দুর্গাপুজোর আগে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছে সেল-আইএসপি। সেখানকার বাকি দু’টি মূর্তি রক্ষণাবেক্ষণের দাবিও সেল-আইএসপি-র কাছে জানানো হয়েছে বলে লক্ষ্মণবাবু জানান। তবে মণীষিদের মূর্তি রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলার অভিযোগ মানতে চাননি পুরসভার মেয়র পারিষদ (তথ্য ও সংস্কৃতি) রবিউল ইসলাম। তবে তাঁর আশ্বাস, “নতুন যে সব মূর্তি তৈরি হচ্ছে, প্রতিটির মাথায় ছাউনি থাকবে। পুরনো যে সব মূর্তিতে ছাউনি নেই, সেগুলিতে তা বসানোর পরিকল্পনা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.