এ যেন অনেকটা সিগারেটের প্যাকেটের বিধিসম্মত সতর্কীকরণের মতো। জ্বলজ্বলে অক্ষরে লেখা, ‘বাসের ছাদে ওঠা নিষেধ’, অথচ, প্রতিদিনই বাসের ছাদে ভিড় করে এক শহর থেকে আরেক শহর, এক জেলা থেকে অন্য জেলাতে চলেছেন যাত্রীরা।
সরকারি আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাসের ছাদে যাতায়াতের এই ছবি নতুন নয়। মাঝেমধ্যে পরিবহণ দফতরের নজরদারিতে বন্ধ থাকলেও যেই কড়াকড়ি শিথিল হয়ে যায়, তেমনি শুরু হয় বিপজ্জনক ভাবে বাসের ছাদে লোক তোলা। দুর্গাপুরে আবার সরকারি নিষেধাজ্ঞার ফাঁক দিয়ে গলে যাওয়ার নতুন পন্থা নিয়েছে বাসগুলি। শহরে ঢোকার কিছুটা আগেই যাত্রীদের ছাদ থেকে নামিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে শহরে ঢুকছে বাসগুলি।
পরিবহণ দফতরের নিয়মে বাসের ছাদ একমাত্র পণ্য পরিবহণ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। |
বেপরোয়া। বুদবুদের রাস্তায় বিশ্বনাথ মশানের তোলা ছবি। |
কোনওমতেই লোক যাতায়াতে নয়। কিন্তু বেসরকারি বাসগুলি বেশি মুনাফা লাভের চেষ্টায় দিনের পর দিন ছাদের উপর লোকবোঝাই করে যাতায়াত করছে বলে অভিযোগ। এর ফলে বিপদও হচ্ছে প্রায়ই। অনেক সময়েই রাস্তার পাশে থাকা গাছের ডালে লেগে আহত হচ্ছেন যাত্রীরা। আবার রাস্তায় বাঁক নেওয়ার সময় অন্যমনস্ক থাকলেও যে কোনও মুহূর্তে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবু প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করছেন অসংখ্য যাত্রী। পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় সড়কে প্রায়ই অভিযান চালানো হয়। দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ডেও ইদানিং প্রায় অভিযান চালাচ্ছে পরিবহণ দফতর। কিন্তু দফতরের কর্মীদের চোখ এড়াতে দুর্গাপুর ঢোকার আগের কোনও স্টপেজেই ছাদ থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছেন বাসের কর্মীরা।
দেখা গিয়েছে, বোলপুর, সিউড়ি, বা বীরভূমের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দুর্গাপুর বা আসানসোলগামী বাসগুলি পানাগড় বা রাজবাঁধে এসে ছাদের যাত্রীদের নীচে নামিয়ে দিচ্ছে। আবার উল্টোদিক থেকে আসা বাসগুলি দুর্গাপুর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরে মুচিপাড়া বা রাজবাঁধে এসে ছাদে যাত্রী চাপাতে শুরু করছে। বোলপুরগামী একটি বাসের কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অনেকসময় বাসের ভিতরে ভিড় থাকলে ছাদে যাত্রী চাপানো হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে বাসের কর্মীরা নিষেধ করলেও যাত্রীরা জোর করে ছাদে উঠে পড়েন। তবে ছাদে উঠলে যে বিপদ যে হতে পারে তা ওই কর্মী স্বীকার করেছেন। ওই কর্মী আরও জানান, বেশ কয়েকবছর আগে পরিবহণ দফতরের তরফে বাসের ছাদে ওঠার সিঁড়িগুলি খুলে দেওয়া হয়েছিল। কোনও বাসের ছাদে যাত্রী থাকলে তার বেশ বড় অঙ্কের জরিমানাও করা হত। ফলে বছর খানেক বাসের ছাদে যাত্রী তোলা অনেকটাই বন্ধ ছিল। কিন্তু অভিযান একটু শিথিল হতেই পুরনো পদ্ধতি চালু হয়ে গিয়েছে। জাতীয় সড়কের উপর যাতায়াতকারী বাসগুলির ছাদে সেভাবে যাত্রী দেখা না গেলেও বীরভূম বা মুর্শিদাবাদগামী বাসগুলি এখনও দেদার ছাদে যাত্রী চাপিয়ে চলেছে। এমনকী ছাদে ওঠার সিঁড়িতেও বিপজ্জনক ভাবে যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
দুর্গাপুরের এআরটিও অনিমেষ সিংহ রায় বলেন, “আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। এখনও তেমন কিছু চোখে পড়েনি। শুনেছি, অভিযানের খবর আগে পেয়ে যাওয়ায় বাসকর্মী ও যাত্রীরা সতর্ক হয়ে যাচ্ছেন। তবে বাসের ছাদে যাত্রী পরিবহণের বিষয়টি চোখে পড়লেই বাসমালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সঙ্গে যে ছাদে চড়বেন তাঁকেও শাস্তির মুখে পড়তে হবে।” |