সোজা রাস্তায় না গিয়ে ঘুরপথে ভিন্ রাজ্যে যাচ্ছিল আলু বোঝাই লরি। খবর পেয়ে মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে সাতটি লরি ধরল পুলিশ-প্রশাসন। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, পরিবহণের বৈধ কাগজপত্র না থাকার জন্যই কুলটির চৌরঙ্গি মোড়ে ওই লরিগুলি আটকানো হয়েছে।
বুধবারও আসানসোল মহকুমার বিভিন্ন বাজারে আলু নিয়ে গিয়ে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করে প্রশাসন। যদিও মহকুমার ছোট-বড় বাজারগুলিতে আলুর জোগানের অভাবের অভিযোগ উঠেছে। নানা জায়গায় বিক্ষোভও করেছেন ক্রেতারা।
এ দিন দুপুরে বাজেয়াপ্ত করা আলু কুলটির একটি তৃণমূল অফিস থেকে বিক্রির উদ্যোগের অভিযোগ নিয়ে চাপান-উতোর তৈরি হয়। |
কুলটিতে তৃণমূলের অফিসে মজুত হচ্ছে আলু। —নিজস্ব চিত্র। |
নিয়ম অনুযায়ী এই আলু সরকারি শিবির থেকে বিক্রি হওয়ার কথা বলে জানিয়েছেন আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস। তিনি বলেন, “আমার কাছে এ বিষয়ে কোনও অভিযোগ আসেনি। তবে এ রকম একেবারে হওয়ার কথা নয়।” এ দিন দুপুরে লছিপুর সংলগ্ন ওই তৃণমূল কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক বস্তা আলু মজুত রয়েছে। তবে তা কেনাবেচা হচ্ছে না। তৃণমূলের অফিসটির দায়িত্বে রয়েছেন স্থানীয় নেতা শিবদাস রায়। তিনি বলেন, “আমি আলুর পাইকারি ব্যবসায়ী। মঙ্গলবার রাতে পুলিশ যে আলু আটকেছে তার কিছুটা মালিকের সঙ্গে কথা বলে আমি কিনেছি। এত আলু রাখার জায়গা না থাকায় দলীয় কার্যালয়ে তুলেছি। বৃহস্পতিবার সকালে এখান থেকে বের করে বাজারে বিক্রি করব।” এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় জানান, বাজেয়াপ্ত করা আলু এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে খোলাবাজারে বিক্রির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রেও ওই পাইকর ব্যবসায়ী আলু কিনেছেন। সুব্রতবাবু আরও বলেন, “তৃণমূল অফিসে তা মজুতের অভিযোগ উঠতেই আমরা এলাকায় খোঁজখবর করি। ওই আলু খোলাবাজারে বিক্রির ব্যবস্থা হচ্ছে।” |
আটক ট্রাক, আলুর খোঁজে হন্যে বাজার। |
দু’নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বস্তা বোঝাই আলুর লরি রাতের অন্ধকারে ভিন্ রাজ্যে পাঠানো হচ্ছে বলে খবর পায় প্রশাসন। বরাকরের কাছে ডুবুরডিহি চেকপোস্টে পুলিশের কড়া পাহাড়াও বসানো হয়। কিন্তু গত তিন দিন যাবৎ নজরদারি চালানো হলেও আলু বোঝাই লরি পেরোতে দেখেনি পুলিশ। কিন্তু ২ নম্বর জাতীয় সড়কে রাতে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা লক্ষ করেন, একাধিক পণ্য বোঝাই লরি দু’নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে কুলটির চৌরঙ্গি হয়ে চিত্তরঞ্জন রোড দিয়ে যাচ্ছে। মহকুমাশাসক জানান, মঙ্গলবার রাতে কুলটির চৌরঙ্গি মোড়ের কাছে লরি আটকানোর ব্যবস্থা হয়। সাতটি লরি ধরা হয়। ডুবুরডিহি চেকপোস্টে কড়া নজরদারি এড়ানো সম্ভব নয় বুঝেই রূপরানায়ণপুরের কাছে পিঠাইকেয়ারি, জামতাড়া সীমানা দিয়ে এই আলু বোঝাই লরি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল বলে প্রশাসনের কর্তাদের অনুমান। মহকুমাশাসক বলেন, “এই আলু মহকুমার বিভিন্ন ছোট-বড় বাজারে পাঠানো হয়েছে। পরিবহণের বৈধ কাগজ না থাকায় সেগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।”
পাকড়াও করা এই আলু বুধবার সকাল থেকে বারাবনির দোমহানি হাটতলায় সরকারি শিবির করে বিক্রি হয়েছে। বারাবনির যুগ্ম বিডিও রবিকান্ত গুপ্ত তার তত্ত্বাবধান করেন। সকালের দিকে এই সরকারি মূল্যে আলু বিক্রির উদ্যোগ হতেই স্থানীয় কিছু বিক্রেতা বিরোধিতা করেন। তাঁদের দাবি, আলু তাঁদের কাছে ১১ টাকা কেজি দরে বিক্রি করুক প্রশাসন। তাঁরা তা ক্রেতাদের ১৩ টাকা দরে বিক্রি করবেন। কিন্তু প্রশাসন এই দাবি মানেনি। পরে পুলিশ গিয়ে গোলমাল বন্ধ করে।
সরকারি মূল্যে ক্রেতারা আলু না পাওয়ায় এ দিন বিক্ষোভ হয় সালানপুর, রূপনারায়ণপুরে। মহকুমা প্রশাসনের উদ্যোগে অন্য নানা এলাকায় অস্থায়ী শিবির করে আলু বিক্রির খবর পেলেও তাঁদের ব্লকে কেন এমন কোনও সরকারি উদ্যোগ হয়নি, সে প্রশ্ন তোলেন সালানপুরের বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, প্রায় তিন দিন ধরে এলাকার বাজারগুলিতে আলুর আকাল চলছে। যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে, তা-ও চড়া দরে বিকোচ্ছে। এ বিষয়ে মহকুমাশাসক অমিতাভবাবু বলেন, “সালানপুরের বিডিও-কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।” |