ভাইফোঁটার দিনেও পুরুলিয়া জেলার বেশির ভাগ বাজারে দেখা মিলল না জ্যোতি আলুর। কার্যত এ দিন ভাইয়ের জন্য তরিতরকারি রান্না করতে গিয়ে দুর্ভাবনায় পড়ে যান দিদিরা। কেউ কেউ আলুরদম বাতিল করে লুচির সঙ্গে বেগুনভাজা তৈরি করে দিলেন। সেই আলু দিলেন খাসির ঝোলে।
পুরুলিয়া জেলা আলু ব্যবসায়ী সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরুলিয়ায় দৈনিক আলুর চাহিদার (কমবেশি ৫০ টন) সিংহ ভাগই জোগান দেয় পাশের জেলা বাঁকুড়া, খানিকটা পশ্চিম মেদিনীপুর। ফলে জ্যোতি আলুর দাম নিয়ে কড়াকড়ি শুরু হতেই কার্যত রবিবার থেকে পুরুলিয়ার হাট-বাজার থেকে জ্যোতি আলুর জোগান কমতে থাকে। সোমবার সকালে পুরুলিয়া, আদ্রা, রঘুনাথপুর, কাশীপুর-সহ বিভিন্ন বাজার থেকে আলু উধাও হয়ে যায়। মঙ্গলবারও বাজারে-বাজারে আলুর দেখা ছিল না।
কলকাতা থেকে ভাইফোঁটা উপলক্ষ্যে পুরুলিয়ায় এসেছেন সুজাতা কর সাহা। আলুর সঙ্কট হতাশ করেছে তাঁকেও। তাঁর কথায়, “আলু ছাড়া কী বাঙালির পঞ্চব্যঞ্জন হয়! হিসেব নিকেশ করে আলু খরচ করতে হচ্ছে। এমন অবস্থা কোনও দিন হয়নি।” এ দিন পুরুলিয়ার বড়হাটে সাত সকালে গিয়েও বেশির ভাগ ক্রেতাই আলু পাননি। সব্জি বিক্রেতাদের পসরায় আলু ছিল না। পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা রুদ্রজিৎ দাস বলেন, “সারা বাজার চষেও আলু পেলাম না!।” একই অবস্থা রেলশহর আদ্রা বা রঘুনাথপুর বাজারেরও। সোমবার যদিও বা গুটিকয়েক দোকানে আলু মিলেছিল চড়া দামে, এ দিন এখানে তাও পাওয়া যায়নি। রঘুনাথপুরের গোবিন্দপুরের বাসিন্দা ভক্তি মাঝি বলেন, “হন্যে হয়ে আলু খুঁজেছি, পাইনি।” ঝালদা বাজারেরও একই অবস্থা। ঝালদার পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকার বলেন, “সোমবার আলুর জোগান ছিল খুবই কম। মঙ্গলবার কোনও বিক্রেতার কাছেই আলু পাওয়া যায়নি। ব্যবসায়ীরা জানালেন যেখান থেকে তাঁরা আলু নিয়ে আসেন, সেখানে আলুর যা দাম, তাতে ওই আলু এনে তাঁরা সরকারি দামে বিক্রি করতে পারবেন না।” তিনি জানান, এমন অবস্থায় প্রশাসন যদি এখানে আলু পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে পুরসভা থেকে বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।
জেলা আলু ব্যবসায়ী সংগঠনের এক মুখপাত্র গৌরহরি সেন বলেন, “বাঁকুড়ার যে এলাকা থেকে পুরুলিয়ায় আলু আসে সেখানেই মাল পাওয়া যাচ্ছে না। কোথাও আবার দাম বেশি হাঁকছে।” তিনি জানান, সোমবারের মতো মঙ্গলবার তাঁরা এক ট্রাক আলু এনে পুরুলিয়া শহরে বিক্রির ব্যবস্থা করেন। কিন্তু যা পরিস্থিতি তাতে আজ বুধবার ট্রাকে আলু ঢুকবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চতা তৈরি হয়েছে।
কাশীপুর, হুড়া, বলরামপুর বাজারেও এ দিন আলু ছিল অধরা। কাশীপুর বাজারের ব্যবসায়ী জয়ন্ত করের কথায়, “আমরা যে আড়ত থেকে মাল তুলি সেখানে দু’দিন ধরে আলু নেই। শুধু মানবাজারের বাজারে কিছু বিক্রেতার কাছে ছোট আকারের আলু মিলেছে।” বেশির ভাগ ক্রেতাই জানিয়েছেন, সরকার আলুর দাম বেঁধে দিয়েছে ভাল কথা। কিন্তু আলু তো বাজারে পাওয়াই যাচ্ছে না। সরকার যদি আলু আনার ব্যবস্থা করে তাহলে সবাই আলু পাবেন। জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “যেহেতু আমাদের আলুর জন্য বাঁকুড়া বা পশ্চিম মেদিনীপুরের উপর নির্ভর করতে হয়। আলুর জোগান দেওয়ার জন্য ওই দুই জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলছি।” |