এক দিকে, বেঁধে দেওয়া দরেই আলু বিক্রি করতে চাপ দিচ্ছে রাজ্য সরকার। অন্য দিকে, ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে তাঁরা যে দরে আলু পাচ্ছেন, তাতে ব্যবসায় ক্ষতি করে ওই দামে আলু বিক্রি করা সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে মজুত কম থাকায় রাজ্যের অন্য জায়গাগুলির মতোই আলু নিয়ে সঙ্কট জটিল আকার নিচ্ছে বীরভূমেও। মঙ্গলবার বীরভূম জেলা আলু ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক দীনবন্ধু মণ্ডল বলেন, “গত তিন দিন সাঁইথিয়া-সহ জেলার অন্যান্য হিমঘরগুলি থেকে আলু বোঝাই করার জন্য মজুর পাওয়া যায়নি। এর ফলে বিভিন্ন জায়গায় আলুর জোগান কমেছে।” বাজারগুলিতে আলুর যে অভাব দেখা দিয়েছে, তার জন্য বেশি লভ্যাংশ না মেলাকেও তাঁরা দায়ী করছেন। যদিও তাঁর আশ্বাস, আজ, বুধবার থেকেই সমস্যা অনেকটা মিটবে। মঙ্গলবার রাত থেকেই বিভিন্ন জায়গায় আলু পৌঁছে যাবে।
সংগঠন সূত্রে খবর, বীরভূমে এই মহূর্তে ৩৩ শতাংশ আলু মজুত আছে। যার ১০ শতাংশই বীজ হিসেবে রাখা। দীবনবন্ধুবাবুর আশঙ্কা, ওই আলুর কিছুটা যদি বিহার, ঝাড়খণ্ডে বিক্রি করতে দেওয়া না হলে আলু ব্যবসায়ীদের ব্যবসা মার খাবে। কারণ হিসেবে তাঁর যুক্তি, “হিমঘরগুলিতে নিম্নমানের আলু মজুত আছে। জেলার বিভিন্ন জায়গায় তার ক্রেতা কম থাকার জন্য প্রতি বছরই ওই আলুর একটা অংশ বিহার বা ঝাড়খণ্ডে বিক্রি করতে হয়। এ বছর রাজ্য সরকার রাজ্যের বাইরে আলু বিক্রি করতে না দেওয়ার জন্য আলু ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছেন।” তাঁর ক্ষোভ, “এরপরেও আমরা কিন্তু ক্রেতাদের ১৩ টাকা কিলো দরে আলু বিক্রি করার জন্য সরকারকে সব রকম সাহায্য করে চলেছি।”
এ দিকে ভাইফোঁটার দিন সকাল থেকেই আলুর খোঁজে রামপুরহাট শহরে হন্যে হয়ে ঘুরেছেন বহু ক্রেতাই। জোগান না থাকায় রামপুরহাট ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বড় বাজারে সোমবার থেকেই পাইকারি ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি করে দিয়েছেন। খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছে আলু থাকলেও কেউই সরকার নির্ধারিত ১৩ টাকা কেজি দরে তা বিক্রি করেননি। এ দিন সকালেও রামপুরহাট ডাকবাংলো পাড়া লাগোয়া বাজারে ১৬-১৮ টাকা দরে আলু বিক্রি হয়েছে। পরে পুলিশের সঙ্গে বাজারে পৌঁছন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুব্রত রায়, মহকুমা কৃষি আধিকারিক দিবানাথ মজুমদার, অ্যাসিন্ট্যান্ট এগ্রিকালচার মার্কেটিং অফিসার নৃপেন্দ্রকুমার দত্ত । ক্রেতাদের থেকে অভিযোগ পেয়ে এক বিক্রেতাকে বেশি মূল্য নেওয়ায় টাকা ফেরত দিতে বাধ্য করেন। পরে বড় বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন।
পরে সুব্রতবাবু বলেন, “পাইকারি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সাঁইথিয়া থেকে ৫০ কেজির জন্য ৬০০ টাকায় আলু কিনতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তাঁরা কেজি প্রতি ১১ টাকা দরে আলু বিক্রি করতে পারছেন না।” সুব্রতবাবু বলেন, “বিষয়টি জেলা মার্কেটিং আধিকারিককে দেখতে বলেছি। কারণ, বাজারে আলুর জোগান কম থাকলেও বেশি দামে কিনে এনে সরকার নির্ধারিত দাম থেকে বেশি দামে বিক্রি করতে আমরা তো কাউকে বলতে পারি না।” |