ভাইফোঁটায় আশীর্বাদটুকুই নিত বরুণ, বললেন দিদি
ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় মঙ্গলবার যখন ঘরে ঘরে দিদিরা বলছেন, ‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা’, তখন এ দিন আড়ালে চোখের জল ফেলেছেন তিন বোন।
২০১১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি দিদির সম্ভ্রম বাঁচাতে গিয়ে খুন হন রাজীব দাস। ২০১২ সালের ৫ জুলাই দুষ্কৃতীদের গুলি কেড়ে নেয় বনগাঁর এক দিদির ভাইকে। অন্যদিকে, চলতি বছরের ১৩ জুন অন্য এক দিদির ভাইকেও ছিনিয়ে নেয় মাওবাদীরা। এ দিন নিহত তিনজনের দিদির বেদনাকে এক সূত্রে গেঁথে দিয়েছিল ভাইফোঁটা প্রথম জন রিঙ্কু দাস, রাজীব দাসের দিদি। দ্বিতীয় জন প্রমীলা রায়, সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী নিহত বরুণ বিশ্বাসের দিদি এবং তৃতীয় জন সুমনা দেবনাথ। ট্রেনে মাওবাদী হামলায় নিহত আরপিএফ জওয়ান সুকান্ত দেবনাথের দিদি। মঙ্গলবার কোথাও যেন তিন দিদির যন্ত্রণা মিলিয়ে দিল তিন হৃদয়কে।
কাকে ফোঁটা দেব, কান্নায় ভেঙে পড়লেন বরুণের দিদি প্রমীলাদেবী।
২০১১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বারাসতে স্টেশনের কাছে তিন মদ্যপ যুবকের হাত থেকে দিদির সম্ভ্রম বাঁচাতে খুন হয়েছিলেন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রাজীব দাস। একমাত্র ভাইকে সেবারই শেষ ভাইফোঁটা দিয়েছিলেন রিঙ্কু। গত দু’বছরে আর কাউকে ভাইফোঁটা দেননি তিনি। দিতে পারেননি। ভাইয়ের শোক তাঁকে এতটাই আঘাত দিয়েছে যে ঘটনার পর দিন থেকে নেহাত প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে খুব একটা বেরোন না। যে কাজ করতেন, ছেড়ে দিয়েছেন সেটাও। শুধু রাখিপূর্ণিমার দিন বারাসতের একটি সংগঠনের জোরাজুরিতে এলাকায় দুঃস্থ বাচ্চাদের হাতে রাখি পরিয়েছিলেন। আজকের দিনে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানার জন্য সকাল থেকেই তাঁর বাড়ির সামনে ছিল বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের ভিড়। প্রথমে কারোর সঙ্গে কথা বলতে চাননি রিঙ্কু। ঘরের এককোণে চুপ করে বসেছিলেন। টলটলে চোখে মাঝে মাঝে ভাইয়ের ছবি বের করে দেখছিলেন। রাজীব-হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বারাসতে মোমবাতি মিছিলের পর মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ডে যে ছবিটা বড় করে বাঁধিয়ে দিয়েছিল রাজীবের বন্ধুরা। একটু পরে উঠে সংবাদমাধ্যমের সামনে এলেন। ভেসে কান্নাভেজা গলার স্বর, “এতদিন হয়ে গেল, বিচার চলছে। অপরাধীরা এখনও কোনও সাজা পেল না। পরপর ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে চলেছেই। একদিন ঘটা করে ভাইফোঁটা বা রাখি পালনের থেকেও বেশি দরকার সারা বছর ভাই-বোনের সম্পর্কের সেই ভাবনাকে মাথায় রাখা।”
গাইঘাটার সুটিয়া প্রতিবাদী মঞ্চের সম্পাদক তথা সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী বরুণ বিশ্বাস খুন হন ২০১২ সালের ৫ জুলাই। বড়দির বিয়ে হয়েছে পাশের উত্তর বিষ্ণুপুর গ্রামে। ভাইয়ের মৃত্যুর পর প্রমীলা দেবী সুটিয়ার বাড়িতেই চলে এসেছেন। বরুণের আরও দুই দাদা থাকেন কলকাতায়। এবার তাঁরা আসেননি। সকাল ভাইয়ের ছবির সামনে ভারাক্রান্ত মনে বসে প্রমীলাদেবী। বললেন, “মৃত্যুর আগের বছরও ওকে ফোঁটা দিয়েছি। মিষ্টিমুখ করে শুধু আশীর্বাদটুকুই নিত।” বলতে বলতেই ভিজে গেল চোখ। সামলে নিয়ে ফের বলেন, “ভাইয়ের হত্যাকারীরা আজও সাজা পাননি। তাই যন্ত্রণা যেন আরও বেড়ে গিয়েছে।”
যমের দুয়ার থেকে ভাইকে ফিরিয়ে আনতে পারলাম কই, ভাইয়ের ছবি বুকে সুমনাদেবী।
এই বছরের ১৩ জুন ধানবাদ থেকে পটনাগামী ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসে মাওবাদী হামলায় মারা যান গোপালনগর থানার চক চৌবেড়িয়ার বাসিন্দা আরপিএফ জওয়ান সুকান্ত দেবনাথ। প্রতি বছরই ভাইকে ফোঁটা দিতেন দিদি সুমনা। ট্রেনিংয়ে থাকায় গত বছর আসতে পারেনি ভাই। কথা দিয়েছিল এ বার অবশ্যই আসবে। কিন্তু তার আগেই শেষ হয়ে গেল সব। এদিন সারাক্ষণই ভাইয়ের ছবি আঁকড়ে চোখের জল ফেলেছেন। বললেন, “এত বছর ধরে ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়েও যমের দুয়ারে কাঁটা দিতে পারলাম কই? বলেছিল চাকরি পেলে এবার ফোঁটায় উপহার দেবে। এই কষ্টই কী আমার উপহার?” কথা শেষ করতে পারলেন না। চোখের জলে অস্পষ্ট হয়ে গেল ভাইয়ের ছবি।
নীল আকাশে এই ভাবেই যেন ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে তিন দিদির আদরের প্রিয় ভাইয়েরা।

ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

পুরনো খবর





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.