বছর চারেক আগে বাম আমলে পর্যটনের প্রসার ও ঝড়ে বিপর্যস্ত মানুষদের জন্য ত্রাণশিবির গড়ার কাজ শুরু হয়েছিল সুন্দরবনের গোসাবার বালি-২ নম্বর পঞ্চায়েত এলাকায়। রাজ্য যুব কল্যাণ দফতরের আর্থিক সহাতায় সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের অধীনে ওই কাজের পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের পরে ওই নির্মাণ কাজ এখন বিশ বাঁও জলে।
রাজ্য যুব কল্যাণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, যুব আবাস ও ত্রাণশিবির তৈরির জন্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছিল তদানীন্তন রাজ্য সরকার। যুব আবাস ও ত্রাণ শিবির নির্মাণের জন্য প্রাথমিক ভাবে পাঁচ দফায় টাকা মঞ্জুর করার সিদ্ধান্ত হয়। সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের এক কর্তা বলেন, “জমি কিনে তারপর যুব আবাস ও ত্রাণশিবির তৈরি জন্য টেন্ডারের মাধ্যেমে ঠিকাদার নির্বাচন করা হয়। প্রায় ২০ বিঘা জমির উপর ওই যুব আবাস নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছিল। প্রথম পর্যায় যুব কল্যাণ দফতর দেড় কোটি টাকা মঞ্জুর করে। ওই টাকা সুন্দরবন পরিকাঠামো উন্নয়ন পর্ষদকে দেওয়া হয়। ২০ লক্ষ টাকায় গোসাবায় জমি কেনা হয়। তারপর শুরু হয় নির্মাণকাজ। |
এ ভাবেই অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে গোসাবায় যুব আবাসের নির্মাণকাজ। ছবি: সামসুল হুদা।
|
সুন্দরবন উন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী ৭০টি শয্যা বিশিষ্ট যুব আবাস এবং যুব আবাসের লাগোয়া ত্রাণ শিবির তৈরির কাজ শুরু হয়। ঠিকাদার সংস্থাকে প্রাথমিক ভাবে ৪০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। ঠিকাদার সংস্থার দাবি প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার নির্মাণকাজ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পরবর্তী ধাপের কোনও টাকা সুন্দরবন পরিকাঠামো উন্নয়ন দফতর দিচ্ছে না বলে ঠিকাদার সংস্থার অভিযোগ। ফলে বাধ্য হয়েই ঠিকাদার সংস্থা নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছে। পাওনা টাকা না পাওয়ার জন্য সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ ও যুব কল্যাণ দফতরকে লিখিত ভাবে জানানোও হয়েছে বলে দাবি ঠিকাদার সংস্থার।
সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের বাস্তুকারদের একাংশের মতে, রাজ্য সরকারে পালা বদলের পর সুন্দরবন পরিকাঠামো উন্নয়ন পর্ষদ বাম আমলে পরিকল্পিত ওই যুব আবাস নির্মাণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। পালা বদলের পর বর্তমান সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ আগের পরিকল্পনা মতো যুব আবাস ও ত্রাণ শিবির রূপায়ণের কাজের ধরনও বদল করার চেষ্টা করছে বলে তাঁদের মত। সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ সূত্রের খবর, আপাতত শুধু যুব আবাস নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ত্রাণ শিবির তৈরির পূর্ব পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে বলে পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে।
এ দিকে যুব আবাস নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যুব কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। যুব কল্যাণ দফতরের অনুমোদিত টাকায় যুব আবাসের নির্মাণ কাজ কোন পর্যায় রয়েছে, সেই বিষয় বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরকে চিঠিও দিয়েছেন তিনি। এমনকী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও যুব আবাস তৈরি বিষয়টি গতি হারিয়েছে বলে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন অরূপবাবু।
অরূপবাবুর চিঠির ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই কয়েক বার সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠক হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত যুব আবাস তৈরির বিষয়ে সুনিদিষ্ট কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে পর্ষদ সূত্রের খবর। যুব আবাস ও ত্রাণশিবির নির্মাণের প্রথম পযার্য়ের প্রায় দেড় কোটি টাকার মধ্যে ৬০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের তহবিলে চার বছর ৯০ লক্ষ টাকা পড়ে রয়েছে।
ঠিকাদার সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০ লক্ষ টাকায় কুড়ি বিঘা জমি কেনা হয়েছে। বাকি ৪০ লক্ষ টাকা নির্মাণকাজে খরচ হয়েছে। এর পরে নির্মাণকাজে আরও প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত খরচ করা হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় দফার টাকা আর পাওয়া যায়নি। ফলে টাকার অভাবে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। ঠিকাদার সংস্থার দাবি, নিজেদের টাকায় দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ করা হয়েছে। তৃতীয় দফার কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় দফার নির্মাণকাজের টাকা না পাওয়ায় কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে তারা। যুব আবাস নির্মাণে অচলাবস্থার বিষয়ে সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলেন, “আমরা ওই যুব আবাস নির্মাণের পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন করেছি। পর্যটকদের টানতে ওখানে নানা অত্যাধুনিক ব্যবস্থা করা হবে। মুম্বই থেকে বাস্তুকাররা এসে সব দেখে গিয়েছেন। যুব কল্যাণ মন্ত্রী এ জন্য অতিরিক্ত অর্থের অনুমোদন দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।” ঠিকাদার সংস্থার পাওনার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, “খুব শীঘ্রই আমরা ওই ঠিকাদারের সঙ্গে অলোচনা করব। ঠিকাদার সংস্থা ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হবেন না।” যদিও আগের পরিকল্পনায় ত্রাণ শিবির তৈরির বিষয়টি থাকলেও পরিকল্পনা পরিবর্তনের পরে কেন সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হল না সেই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর মেলেনি মণ্টুবাবুর কাছে। |