ক্রিকেট সূর্যের বিদায়লগ্নে শুরু উত্তরাধিকার-যুদ্ধ
পঁচিশ বছরের জন্মদিনের কেকের প্রথম টুকরোটা মঙ্গলবার ইডেনে যাঁর মুখে গুঁজে দিলেন বিরাট কোহলি, সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে বিশেষ সখ্য দেখা যাচ্ছে দিল্লি যুবকের।
নেট সেশনের ফাঁকে তাঁর সঙ্গে নিয়ম করে বিরাট কথাবার্তা বলছেন। মিনিট পাঁচ-দশ নয়, দীর্ঘক্ষণ ধরে। টেকনিক, শট সিলেকশনে ন্যূনতম গণ্ডগোল দেখলে সোজা গিয়ে নাকি ভদ্রলোককে বলে আসছেন, “পাজি, প্লিজ একটু দেখে দিন।” সর্বক্ষণ গায়ে গায়ে, এমনকী মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ ইডেনের টিম ইন্ডিয়া ড্রেসিংরুম থেকে শেষ যে দু’টো চেহারা বেরোল, তার একটা বিরাট কোহলির। একটা, সংশ্লিষ্ট ভদ্রলোকের।
‘দ্রোণাচার্য’-র নাম আন্দাজ করা সহজ, খুব সহজ। উনি সচিন রমেশ তেন্ডুলকর।
‘একলব্য’-র অবিরাম ছুটোছুটির কারণ জানলে সেটাও খুব সহজ, স্বাভাবিক লাগবে। সচিন রমেশ তেন্ডুলকরের উত্তরাধিকারের হাত বদলে তো বিরাটকে বেছে নেওয়ার ইঙ্গিত!
যেমন?
যেমন দিল্লি থেকে ফোনে বিরাটের কোচ রাজকুমার শর্মার কথাবার্তা। জানা গেল, ‘আমার পরে তুমি’ এমন কথা বিরাটকে সরাসরি কোথাও বলেননি সচিন। তবে নাকি বলেছেন তোমার উপর আমার অনেক আশা আছে। ভারতীয় ক্রিকেটকে এর পর তুমি টানবে। সেটা ভেবে নিজেকে তৈরি করো।
যা এক দিক থেকে প্রাসঙ্গিকই মনে হবে। পঁচিশে পা দিতে না দিতে যাঁর ওয়ান ডে ক্রিকেটে সতেরোটা সেঞ্চুরি হয়ে যায়, সুনীল গাওস্কর থেকে ইয়ান চ্যাপেল পর্যন্ত যাঁকে সচিন-পরবর্তী যুগের ভাবী সম্রাট বলে গণ্য করতে শুরু করেন, সচিনের উত্তরাধিকারের মুকুট তাঁর মাথায় উঠবে না তো কার মাথায় উঠবে? কিন্তু ঘটনা হল, নাম আরও একটা আছে। বিরাটের মতো জোরালো না হলেও খুব হালকাও আবার নয়। সদ্য সমাপ্ত ওয়ান ডে সিরিজ শেষে যাঁর নাম সরাসরি ভারতীয় টেস্ট ব্যাটিংয়ের চার নম্বরে তুলে দিয়েছেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক জর্জ বেইলি।
তিনি রোহিত শর্মা।
কোহলি, রোহিত। দুই দাবিদার।
শোনা গেল, বিরাট এবং রোহিত, দু’জনের বর্তমান উত্থান কোনও না কোনও ভাবে মরাঠি কিংবদন্তি মাধ্যমে প্রভাবিত। বছর দেড়েক আগে যখন জঘন্য ফর্মের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন রোহিত, ছোটবেলার কোচ দীনেশ লাড তাঁকে পাঠিয়েছিলেন মুম্বইয়ের রঞ্জি নেটে। যেখানে ছিলেন সচিন। এবং সেখান থেকেই ভারতের বর্তমান ওয়ান ডে ওপেনার শিখে আসেন কী ভাবে কেরিয়ারের কঠিন সময়ে স্কোরিং শট ছেঁটে ফেলার মানসিকতা তৈরি করতে হয়। কী ভাবে খারাপ বলে বাউন্ডারি মারার লোভ সামলে আয়ত্তে আনতে হয় ধৈর্য ধরার মানসিকতা। যা নাকি ইদানীং নিয়ম হয়ে গিয়েছে রোহিতের ক্রিকেট জীবনে। খারাপ সময়ে যেমন, ভাল সময়েও তেমন। বাড়িয়ে দিয়েছে ‘পারফেকশন রেট’। রোহিতের ছোটবেলার কোচ ফোনে বলে রাখলেন, “বেঙ্গালুরুর ডাবল সেঞ্চুরিটাকে ভাঙুন। বুঝতে পারবেন। প্রথম একশো করার সময় রান আ বল ছিল। ঝুঁকি ছিল না। পরের একশো রানে সব স্কোরিং শট। আগে ভাল এগোতে এগোতে হঠাৎ অ্যাক্রস খেলতে গিয়ে আউট হয়ে যেত। এখন সেটা গিয়েছে। চারে ও মন্দ হবে না।”
বিরাটের উপর সচিনের পরোক্ষ প্রভাবের কাহিনি আবার কয়েকগুণ রোমান্টিক। জীবনের প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলতে যে দিন নেমেছিলেন বিরাট, যখন উনিশের কম বয়স ছিল কিন্তু ঘাড়ে ছিল অনূর্ধ্ব-উনিশ বিশ্বকাপ ফাইনালে দেশকে জেতানোর চাপ, অস্ট্রেলিয়া থেকে সচিন তেন্ডুলকর নামক একজনের ফোন পেয়েছিলেন তিনি। যেখানে তাঁকে নাকি বলা হয়, ‘তোমার হাতেই কিন্তু বিশ্বকাপটা দেখছি!’ উত্তরে প্রথমে কথা বলতে পারেননি বিরাট। স্বাভাবিক হতেই সময় লেগে যায় কিছুক্ষণ। পরের ফোনটা যায় কোচ রাজকুমার শর্মার কাছে। দিল্লি থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে রাজকুমার বলছিলেন, “ওর উত্থানের দিনগুলো থেকে সচিন ওকে নিয়মিত ফোন করত। আইপিএলেও মনে আছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ভাল একটা ইনিংস খেলার পর সচিন ওকে আলাদা করে বাহবা দিয়েছে। বিরাটকে বলেওছে যে, ওর কাছ থেকে সচিন অনেক কিছু আশা করে।” সঙ্গে পরবর্তী সংযোজন, “সচিনের উত্তরাধিকার ও নিতে পারবে কি না, বলতে পারব না। শুধু জানি সচিনের পঁচাত্তর শতাংশ হতে পারলেও যথেষ্ট।”
এক কোচ ধন্ধে। এক কোচ সিংহাসনে ছাত্রের দাবিতে প্রবল আশাবাদী।
বিরাট কোহলি ইতিমধ্যে খেলেছেন আঠারো টেস্ট। রোহিত শর্মার এখনও টেস্ট অভিষেক বাকি।
তা হলে কী দাঁড়াল?
আজ থেকে সচিন তেন্ডুলকর নিয়ে পাঁচ দিন ব্যাপী উৎসব যেমন ইডেন দেখবে, তেমনই এই দুই টিমমেট একসঙ্গে নামলে ইডেন পাবে এক ‘অদৃশ্য’ প্রতিদ্বন্দ্বিতার খোঁজ। চব্বিশ বছরের এক ক্রিকেট-সূর্যের বিদায়বেলায় মিশে থাকবে নতুন সূর্যোদয়ের ইঙ্গিত। উত্তর দিয়ে যাবে ভাবীকালের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের, বলে যাবে আঠারো নভেম্বরের পর ভারতের টেস্ট ব্যাটিং লাইন আপে চারে এর পর থেকে কে?

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.