হাওড়ায় সরকারি আলু নেই মন্ত্রীর পাড়ার বাজারেও
সোমনাথ চক্রবর্তী • কলকাতা |
প্রদীপের নীচেই অন্ধকার! খোদ কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়ের পাড়ার বাজারই এখন আলুর বিরহে মুহ্যমান। আলু-সমস্যার মোকাবিলায় রাজ্য সরকার কলকাতার বিভিন্ন পুর বাজারে আলু পৌঁছে দিতে কোমর বেঁধে নামলেও হাওড়ার কালীবাবুর বাজারের বরাতে শিকে ছেঁড়েনি।
মঙ্গলবার দুপুরে মুখ চুন করে বাজারে বসে ছিলেন আলু বিক্রেতা অজিত ঘড়ুই, সন্তোষ জানা, ক্ষুদিরাম মণ্ডলেরা। আলু ডাঁই করার প্রকাণ্ড চাতাল ফাঁকা। আলুর ঝুড়ি উল্টো করে রাখা। পাশেই বেগুন, টম্যাটো, কপির পসরা সাজিয়ে হাজির অন্য আনাজ কারবারিরা। সে-দিকে সতৃষ্ণ চোখে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন অজিতবাবু। ক্ষণিকের জন্য আলুর দেখা মিলেছিল সকাল ৯টা নাগাদ। হরির লুঠের মতো সব উবে গিয়েছে আধ ঘণ্টায়। সরকারি উদ্যোগে কালীবাবুর বাজারে চার
বস্তা জ্যোতি আলু ছাড়া কাছেই সিদ্ধেশ্বরীতলায় আরও চার বস্তা আলু বিকিয়েছে হুহু করে। তার পরে আর আলুর দেখা নেই।
মধ্য হাওড়ার বিধায়ক তথা রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপবাবুর পরিচয় এ তল্লাটে ‘পাড়ার ছেলে’ বলেই। বনেদি ঘরের সন্তান অরূপবাবুকে অবশ্য বাজার করতে বড় একটা দেখেননি কেউই। তবু কালীবাবুর বাজারের সম্পাদক তথা মুদিখানার মালিক প্রভাস সামন্তের দাবি, অরূপবাবুর পরিবারের সব্জিও ওই বাজার থেকেই যায়। দিনে অন্তত এক বার মন্ত্রীকে যাতায়াত করতে দেখাটাও বাজারের ব্যবসায়ীদের রোজনামচার অঙ্গ। সেই বাজারেই মন্ত্রীর সাধের আলুর দেখা নেই!
প্রভাসবাবু বললেন, “আলু গেল তো গেল একেবারে ভাইঁফোঁটার ভরা মরসুমেই! রবিবার সকাল থেকেই বাজার আলুহীন। সরকারের একটি পদস্থ সূত্র জানাচ্ছে, কালীপুজোর ছুটি উপলক্ষে হিমঘরের মজুরেরা না-থাকাতেও আলু সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে। তাঁদের আশা, বৃহস্পতিবার থেকে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
মন্ত্রী অরূপবাবুর দাবি, কালীবাবুর বাজারে এবং শিবপুরে সরকার ২৫ কুইন্টাল আলু বিক্রি করেছে। কিন্তু ইতিমধ্যেই বিরোধী বিজেপি-র তরফে খোদ মন্ত্রীর বাড়ির সামনেই আলুর দাবিতে মিছিল হয়েছে। ২২ নভেম্বর হাওড়া শহরে পুরভোট। আলুর আকাল ঝাঁঝালো ফোড়ন দিচ্ছে সেই ভোটযুদ্ধের উত্তাপে। বিজেপি-র পোস্টারে স্পষ্ট কটাক্ষ, ‘আলু নেই সরকার
আর নেই দরকার’।
অর্থাৎ আলুর অভাবই হাওড়ায় পুরভোটের মেজাজটাকে আর আলুনি থাকতে দিচ্ছে না। |