উৎসবের মরশুমে উপহারের পসরা সাজিয়ে অভিমানী সীমান্ধ্রের মন রাখতে তৎপর হল কেন্দ্র।
তেলঙ্গানা গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই কংগ্রেস নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ বাকি অন্ধ্রের মানুষ। এ দিকে সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে সীমান্ধ্র ও রায়লসীমা এলাকার মানুষের জন্য একাধিক উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা নিয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্ব। লক্ষ্য, সীমান্ধ্রের মানুষকে বার্তা দেওয়া যে কংগ্রেস তাদের পাশেই। সেই লক্ষ্যেই আজ প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নির্দেশে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রক সীমান্ধ্র ও রয়ালমীসা এলাকায় একটি করে আইআইটি, আইআইএম, ট্রিপল-আই টি এই তিনটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের দাবিতে সবুজ সঙ্কেত দেয়। মন্ত্রক জানিয়েছে, মন্ত্রিগোষ্ঠীর থেকে ওই প্রস্তাব এসেছিল। প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও যোজনা কমিশন ছাড়পত্র দেওয়ার পর আজ মন্ত্রক তাতে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। এর ফলে ওই এলাকায় শিক্ষা খাতে প্রায় পাচ থেকে ছয় হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে।
কেন্দ্র তেলঙ্গানা রাজ্য গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে সীমান্ধ্র ও রায়লসীমার মানুষ। বর্তমানে তেলঙ্গানা ছাড়া বাকি রাজ্যের যা পরিস্থিতি, তাতে সেখানে নিজেদের রাজ্যপাট ধরে রাখা যে মুশকিল তা ইতিমধ্যেই কংগ্রেস হাইকম্যান্ডকে জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কিরণ রেড্ডিও।
এই পরিস্থিতিতে বাকি অন্ধ্রের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র যে দায়বদ্ধ তা বোঝাতেই বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ও শিক্ষা-স্বাস্থ্য-সড়কের মতো পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রগুলিতে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
তেলঙ্গানা ভাগের পর সীমান্তবর্তী অন্ধ্র ও রায়লসীমা এলাকার উন্নয়নে কী কী প্রয়োজন রয়েছে তা খতিয়ে দেখতে চলতি মাসেই একটি মন্ত্রী গোষ্ঠী গঠন করেছে কেন্দ্র। যার নেতৃত্বে রয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্দে। গত মাসে ওই মন্ত্রিগোষ্ঠী এক বৈঠকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সড়ক, জলমন্ত্রকের কাছে ওই এলাকার উন্নয়নে কী কী পরিকল্পনা নেওয়া সম্ভব সে বিষয়ে পরামর্শ চেয়ে পাঠায়। এলাকার উন্নয়নে যে দাবিগুলি উঠেছে, তা বাস্তবায়িত করা সম্ভব কী না তা-ও খতিয়ে দেখতে বলে কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্যমন্ত্রক সীমান্ধ্র এলাকায় একটি এইমসের মতো হাসপাতালের প্রয়োজন রয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছে। বিদ্যুৎ বা সড়কের মতো ক্ষেত্রগুলিতেও শিক্ষার মতো দাবি মেনে নেওয়া হবে বলেই মনে করছে কংগ্রেস নেতৃত্ব।
আজ শিক্ষা সংক্রান্ত দাবি মেনে নেওয়া হলেও খোদ মন্ত্রকের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এম এম পল্লম রাজু তেলঙ্গানা রাজ্য গঠনের প্রতিবাদে ইস্তফা দিয়ে বসে রয়েছেন। প্রায় এক মাস হয়ে গেলেও ইস্তফা গ্রহণ করেননি প্রধানমন্ত্রী। রায়লসীমার ওই নেতার দাবি ছিল, তেলঙ্গানা গঠনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করে নেওয়া পর্যন্ত তিনিও ইস্তফা ফিরিয়ে নেবেন না। যদিও আজ রাজুর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে বলা হয়েছে, যে ভাবে প্রধানমন্ত্রীর দফতর বাকি অন্ধ্রের জন্য উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার দাবি মেনে নিয়েছে, তা আসলে বরফ গলার ইঙ্গিত। সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী খুব দ্রুত সমস্ত মন্ত্রীকে নিজেদের দফতরে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে পল্লম রাজুকে। কেননা শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি দফতর এত দিন ধরে মন্ত্রীহীন হয়ে থাকায় নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে। তাই পল্লম রাজুর এলাকার জন্য সমস্ত দাবি মেনে নেওয়ার মধ্যে দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি বার্তা দিল বলেই মনে করছে মন্ত্রক কর্তারা। কাল দিল্লিতে আইআইটির একটি বৈঠক রয়েছে। মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, এ যাবৎ সমস্ত অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকলেও আগামিকালের অনুষ্ঠানে থাকতে পারেন পল্লম রাজু।
|