|
|
|
|
পাড়ার লজেই ডেরা জঙ্গির, সতর্ক হিন্দপিরি |
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় • রাঁচি |
ধুরুয়া, ডোরাণ্ডার পর এ বার হিন্দপিরি।
রাঁচি শহর যে কার্যত সন্ত্রাসের ‘আঁতুড়ঘর’ হয়ে উঠেছে, ফের তার প্রমাণ পেল পুলিশ-প্রশাসন। ঘিঞ্জি ওই এলাকার একটি লজের ঘর থেকে সোমবার রাতে বোমা, জিলেটিন স্টিক উদ্ধারের খবর পেয়ে হতবাক স্থানীয় বাসিন্দারা। বিস্মিত এবং উৎফুল্ল তদন্তকারীরাও। পটনা বিস্ফোরণের তদন্তে হিন্দপিরির লজে পাওয়া নথি থেকে বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মন্দিরের বিস্ফোরণে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের নিশ্চিত যোগের প্রমাণও পেলেন গোয়েন্দারা। দিল্লিতে এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, মহাবোধি মন্দিরের কোথায় কোথায় বোমা রেখে বিস্ফোরণ ঘটানো হবে তার নক্শা তদন্তকারীর দলের হাতে এসেছে ।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওরমান্ঝির চাকলার বাড়িতে আইএএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া সমস্যার আত্মীয়দের এমনই যুক্তি দেখিয়ে হিন্দপিরির ওই লজে ঘর ভাড়া নিয়েছিল মুজিবুল্লাহ আনসারি। আট মাস ধরে সেখানেই ছিল সে। তদন্তকারীদের সন্দেহ, পটনায় বিস্ফোরণের সপ্তাহখানেক আগে থেকে নিখোঁজ ওই যুবকের সঙ্গেও সম্পর্ক ছিল ‘ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন’-এর।
মুজিবুল্লাহের ঘর থেকে উদ্ধার হওয়া বোমাগুলি দেখে পুলিশের অনুমান, দক্ষ হাতে সেগুলি তৈরি করা হয়েছে। বোমাগুলি নিষ্ক্রিয় করতে মোরাবাদি ময়দানে নিয়ে গিয়েছিল রাজ্য পুলিশের ‘বম্ব ডিজপোজাল স্কোয়াড’। কিন্তু দেখা যায়, জটিল পদ্ধতিতে তৈরি হয়েছে ওই বিস্ফোরকগুলি। একটি সার্কিটের সঙ্গে তিনটি বোমা জুড়ে দেওয়া ছিল। বৈদ্যুতিক তার কেটে সে গুলি নষ্ট করা যাবে না। বিষয়টি বুঝতে পেরে
শেষে বিস্ফোরণ ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মাটিতে পুঁতে ফাটানো হয় বোমাগুলিকে।
হিন্দপিরির ‘ইরম লজ’-এর মালিক মনজর ইমামকে সোমবার রাতেই আটক করেছিল পুলিশ। আজ ভোর পর্যন্ত তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল রাজীব কুমার জানান, ভাড়াটে আট দিন ধরে নিখোঁজ থাকা সত্ত্বেও লজের মালিক পুলিশকে কেন তা জানাননি, তা জানার চেষ্টা করেছেন তদন্তকারীরা। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, “প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ওই লজে হায়দরের যাতায়াত ছিল। তার ছবি সংবাদমাধ্যমেও ছাপা হয়েছে। তা সত্ত্বেও লজের মালিক কেন পুলিশকে কিছু জানালেন না, তা নিয়ে ধন্ধ রয়েছে।” তবে, মনজর পুলিশকে জানিয়েছেন, মুজিবুল্লাহ মাঝেমধ্যেই ১০-১৫ দিন থাকত না। তা-ই কারও সন্দেহ হয়নি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই যুবক ঘরে না-থাকার সুযোগ নিয়ে কেউ বোমাগুলি সেখানে রেখেছিল কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে।
হিন্দপিরিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষই বেশি। আজ সেখানকার ২ নম্বর স্ট্রিটের ওই লজের সামনে শুধু থমথমে মুখের ভিড়। সকাল থেকেই এলাকা উত্তপ্ত। জঙ্গিদের কুশপুতুল পুড়িয়েছেন জনতা। কী ভাবে এ সব ঘটনা এড়ানো যায়, তা নিয়ে দু’টি বৈঠকও করেন এলাকাবাসী। তাঁরা ঘোষণা করেন, হিন্দপিরিতে সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করা হবে। জঙ্গি-বিরোধী বার্তা দিতে দু-এক দিনের মধ্যেই সেখানে পদযাত্রা বের করা হবে। এলাকার কোন লজ, হোটেলে কারা থাকছেন, বাড়ির নতুন ভাড়াটের পরিচয় এ সবের খোঁজও নিতে শুরু করেছেন স্থানীয় মানুষ। প্রয়োজনে পুলিশকে সে সব তথ্য দেবেন তাঁরা।
পটনায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণ-কাণ্ডে বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে গ্রেফতার বা পলাতকদের প্রত্যেকেই শিক্ষিত। তেহসিন আখতার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। ডোরাণ্ডার উজ্জয়ের আহমেদও ইঞ্জিনিয়ার। তাই আইএএস পরীক্ষার্থী মুজিবুল্লাহকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখছে না পুলিশ।
এ ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে চাকলা গ্রামে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, মুজিবুল্লাহর পরিবার গ্রামে যথেষ্টই পরিচিত। সে নিজেও ভালো ছাত্র। তার মা অনিশা খাতুন বলেন, “ছেলে আইএএস হতে চাইত। গ্রামে থেকে লেখাপড়ার অসুবিধা হচ্ছিল বলে লজে থাকত। ১৯ অক্টোবরও বাড়ি এসেছিল। পারিবারিক কারণে ওকে বকাঝকা করেছিলাম। কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যায়। তার পর থেকেই ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না।” মুজিবুল্লাহের বাবা স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্মী। ভাই কলকাতার একটি সংস্থায় সদ্য কাজ পেয়েছেন। একই কথা তাঁরা পুলিশকেও জানিয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে মুজিবের বাবা, ভাইকে আটক করেছে পুলিশ। |
|
|
|
|
|