সম্পাদকীয় ১...
মোদী ও পটেল
মদাবাদের জাদুঘরটি নূতন ভাবে সাজাইয়া নামাঙ্কিত হইল তাঁহার নামে। ১৩৮তম বার্ষিকী সাধারণত খুব উল্লেখযোগ্য বিবেচিত না হইলেও ৩১ অক্টোবর তাঁহার ১৩৮ জন্মবার্ষিকী আবিষ্কার করিয়া ঘটা সহকারে মূর্তি উন্মোচিত হইল। নির্বাচনী প্রচারে ‘আধুনিক ভারতের রূপকার’ হিসাবে তাঁহার নাম ঘোষিত হইল। তাঁহারই দেখাইয়া যাওয়া পথে ভারতের ঐক্য ও উন্নতির দিশা বিজ্ঞাপিত হইল। প্রধান বিরোধী দলের এ হেন কাজকর্ম দেখিয়া তীব্র প্রতিক্রিয়ায় শাসক দল বলিয়া উঠিল, কে না জানে, বল্লভভাই পটেলই কিন্তু গাঁধী-হত্যার প্রেক্ষিতে তৎপর সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘকে নিষিদ্ধ করিয়াছিলেন।
ভারত-রাজনীতিতে ইতিহাসের নূতন যুদ্ধক্ষেত্র প্রস্তুত। ‘লৌহপুরুষ’ বল্লভভাই পটেলকে নূতন ভাবে ‘উদ্ধার’ করিতে নেতারা ভয়ঙ্কর মাতিয়া উঠিয়াছেন। কেন নূতন প্রতীক হিসাবে পটেলকে নির্বাচন, বুঝিতে বেগ পাইতে হয় না। কংগ্রেসের অন্দর হইতেই নেহরুর তথাকথিত প্রতিদ্বন্দ্বী নেতাকে এই ভাবে বিকল্প জাতীয়তাবাদের মুখ হিসাবে তুলিয়া ধরিবার প্রয়াসটির মধ্যে নিশ্চিত ভাবেই উর্বর-মস্তিষ্কের ছাপ রহিয়াছে। নরেন্দ্র মোদী যে দক্ষ মস্তকে প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী হইতে দেশের প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবির দিকে যাত্রা শুরু করিয়াছেন, সন্দেহ নাই। ‘ছোটে সর্দার’ কংগ্রেসের নেহরু-গাঁধী পরিবারতান্ত্রিকতার মূলে কুঠার হানিতে চাহিয়াছেন। অনুমান, তাঁহার প্রয়াস অনেকাংশে সার্থকও হইবে। অবশ্যই, নরেন্দ্র মোদীর দল সে ভাবে বল্লভভাই পটেলের ভাবাদর্শ ব্যাখ্যা করিতে উঠিয়া-পড়িয়া লাগিয়াছে, যাহা তাহাদের স্বার্থের অনুপন্থী। ঐতিহাসিক সত্যের অপলাপ ঘটিতেছে, হাত-পা ছুড়িয়া ক্ষীণকণ্ঠে কংগ্রেস সে সকল অপলাপের দিকে নির্দেশ করিতে ব্যস্ত। সমালোচকরাও খেয়াল করাইতেছেন যে, পটেল ও নেহরু বাস্তবিক পরস্পরের প্রতি বিশেষ আস্থাবান ছিলেন। অর্থাৎ ‘নেহরু-ভারত’ বনাম ‘পটেল-ভারত’-এর তত্ত্বটি নেহাতই ছেঁদো। কিংবা বলিতেছেন যে, পটেল কোনও কালে হিন্দুত্ববাদী শক্তিকে সমর্থন করেন নাই, বরং আজীবন নিবিড় ও গভীর অর্থে কংগ্রেসিই থাকিয়াছিলেন। এ সকল সমালোচনাই যথার্থ। তবে রাজনৈতিক প্রতীকসমূহ কোন কালেই-বা সঙ্গতির ধার ধারিয়াছে।
তবে কিনা, বিস্ময়ের কাণ্ড যে এত সমালোচনার মধ্যে প্রধান সমস্যাটির দিকে কেহ অঙ্গুলিনির্দেশ করিতেছেন না। স্বাধীনতার সময়ে দেশীয় রাজ্যগুলির অন্তর্ভুক্তিকরণে বল্লভভাই পটেলের যে কিংবদন্তি ভূমিকার কথা শুনা যায়, তাহা হইতে দৃঢ়-কেন্দ্রিক একীভূত জাতীয়তায় তাঁহার বিশ্বাসের অনুমান টানা সম্ভব। ভারতের জন্মমূহূর্তে পটেলের এই অবিচলিত কেন্দ্রীকরণ নাকি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা লইয়াছিল। নরেন্দ্র মোদী কিন্তু এ যাবৎ গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে অতিকেন্দ্রিকতার বিরোধিতা ও যুক্তরাষ্ট্রীয়তার জয়গান করিয়াছেন, কেন্দ্রের আর্থিক সহায়তা বিতরণের লঙ্গরখানায় কেন কোনও সচ্ছল প্রদেশ আত্মদান করিবে সেই প্রশ্ন তুলিয়াছেন, প্রাদেশিক সম্পদে প্রদেশের অধিকার দাবি করিয়াছেন। যে যুক্তরাষ্ট্রীয়তার যুক্তি অর্থনীতি হইতে জলনীতি অবধি বিভিন্ন প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারকে সমস্যাদীর্ণ রাখে, তাহার প্রধান মুখপাত্রের শিরোপাটি নরেন্দ্র মোদীরই প্রাপ্য। কী ভাবে পটেল-অনুমোদিত কেন্দ্রিকতার সহিত মোদী-ঘোষিত কেন্দ্রাতিগতার সমন্বয় সাধন সম্ভব, ছোট সর্দার ভাবিয়াছেন কি? মুখ্যমন্ত্রী হইতে প্রধানমন্ত্রিত্বের অভিমুখে তাঁহার অগ্রগতি কেবল প্রায়োগিক রাজনীতির কৃৎকৌশলেই পোষাইবে না, রাজনৈতিক ভাবাদর্শের স্তরেও তাঁহাকে যথেষ্ট সৃষ্টিশীল হইতে হইবে। ভারতীয় গণতন্ত্র ও যুক্তরাষ্ট্রীয়তার সঙ্গে তাহার জাতীয়তাবাদী স্বরূপটির যে টানাপড়েন, তাহা এই পরিস্থিতির মধ্যে নূতন ভাবে প্রকাশিত হইল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.