প্রায় হাতছাড়া লগ্নি ফিরে পেতে চলেছে রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প মানচিত্র। যার হাত ধরে ফিরতে চলেছে ৫০০০ কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাও। কারণ, বানতলা বিশেষ আর্থিক অঞ্চলে (সেজ) কার্যত হিমঘরে চলে যাওয়া প্রকল্প শুরু করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে টেক মহীন্দ্রা ও আইগেট। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রকের কাছে বিশেষ আর্থিক অঞ্চলে প্রকল্প গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় ছাড়পত্রের মেয়াদ বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছে ওই দুই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা।
ইনফোসিস এবং উইপ্রোর সেজ-জট। বিশ্বজোড়া মন্দা। এই সমস্ত কিছু মিলিয়ে রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে নতুন লগ্নির প্রস্তাবে খরা অনেক দিন থেকেই। এই পরিস্থিতিতে টেক মহীন্দ্রা এবং আই-গেটের লগ্নি বাস্তবায়িত করতে মরিয়া রাজ্য। গত সপ্তাহে তথ্যপ্রযুক্তি সচিব ও সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন টেক মহীন্দ্রার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শিবানন্দ রাজা। রাজ্যের আই টি প্রমোশন সেল-এর ডিজিএম স্বরূপ রায় বলেন, “বানতলায় কগনিজ্যান্টের মতো আরও ক্যাম্পাস তৈরির জন্য রাজ্য সরকার সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছে। সংস্থাগুলির পক্ষ থেকেও ইতিবাচক সাড়া মিলেছে।”
বানতলা বিশেষ আর্থিক অঞ্চলে ১২ একর জমি বাজার দরে (একর-পিছু ৮০ লক্ষ টাকা) কিনেছিল টেক মহীন্দ্রা। ২০০৯ সালেই সেখানে ক্যাম্পাস শুরু করে দেওয়ার কথা ছিল তাদের। প্রায় ৩০০০ কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করার কথা ছিল। নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু দূষণের দরুন পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে, সেই নির্মাণ কাজ মাঝ পথেই বন্ধ হয়ে যায়। সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ কোটি টাকা খরচ হওয়ার পরেও প্রকল্প আর এগোয়নি।
পরে ওই প্রকল্প নিয়ে আগ্রহ এতটাই তলানিতে ঠেকে যে, অর্ধেক জমি ছেড়েই দিতে চেয়েছিল সংস্থা। গত বছর বিষয়টি রাজ্যকে মৌখিক ভাবে জানিয়েওছিল তারা। রাজি ছিল কেনা দামেই জমি ফেরত দিতে। কিন্তু সেই ভাবনা থেকে তারা সরে এসেছে বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের খবর। রাজারহাট এবং সল্টলেকে অফিস থাকলেও সম্প্রসারণের জন্য নিজেদের ক্যাম্পাস তৈরিতে আগ্রহী তারা। তবে এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি সংস্থা কর্তৃপক্ষ।
এ রাজ্যে অন্তত এই মুহূর্তে নতুন করে সেজ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ শাসক দল স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা সেজ-নীতির বিরোধী। এই পরিস্থিতিতে বানতলা সেজ-এ জমির সদ্ব্যবহার করলে সংস্থা লাভবান হবে বলেই মনে করছে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। কারণ ৫০ হাজারের বেশি কর্মীর সংস্থা টেক মহীন্দ্রার নজরে রয়েছে এ রাজ্যের দক্ষ মানবসম্পদ।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সত্যম কম্পিউটার কেনার পরে অন্য দিকে ঘুরে গিয়েছিল টেক মহীন্দ্রার নজর। যে কারণে গত বছরের মার্চ মাসে সংস্থা জানিয়েও দিয়েছিল যে, বানতলা নিয়ে কোনও পরিকল্পনা আপাতত নেই। সংস্থা সূত্রে খবর, দূষণের সমস্যা তৈরি না-হলে প্রকল্প শুরু হয়ে যেত অনেক আগেই। আবার সেই সমস্যা যখন কিছুটা মিটল, তখন বেশ কিছুটা বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি। ফলে তখন টেক মহীন্দ্রার বাণিজ্য মানচিত্র থেকে সরে যায় এ রাজ্যের সম্প্রসারণ পরিকল্পনা।
১২০ একর জমির উপর তৈরি কলকাতা আইটি পার্কে ১৮টি সংস্থা জমি নিয়েছিল। এই তালিকায় রয়েছে কগনিজ্যান্ট, আইগেট, টেক মহীন্দ্রাও। দূষণ সমস্যা ও পরিকাঠামোর অভাব সামলে দেরিতে হলেও ক্যাম্পাস চালু করেছে কগনিজ্যান্ট। কিন্তু জমি কেনার পরেও বাকি দুই সংস্থার পরিকল্পনা থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিল বানতলা। সেই লগ্নিই অবশেষে ফিরছে বলে খুশি রাজ্যের শিল্পমহল। |