বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বরাতজোরেই প্রাণের
কড়াই, দাবি শঙ্করের

নেহাতই কাকতালীয় বা বরাতজোর!
প্রাণের জন্মকে এই ভাবেই ব্যাখ্যা করছেন বিজ্ঞানী শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। টেক্সাস টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সম্প্রতি প্রাণের জন্মরহস্যকে ব্যাখ্যা করে হইচই ফেলে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, প্রায় ৪০০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর বুকে লাগাতার বৃষ্টির মতো আছড়ে পড়ছিল সব ধূমকেতুর টুকরো আর উল্কা। তৈরি হচ্ছিল বিশাল বিশাল গহ্বর। ওই সব ধূমকেতুর টুকরো আর উল্কার গায়ে লেগে ছিল বরফ। গহ্বরের মধ্যে ওই সব বরফই সূর্যের আলোয় গলে গিয়ে জল তৈরি করে। তার মধ্যেই লুকিয়ে ছিল প্রাণকণার বীজ।
কিন্তু প্রশ্ন হল, ধূমকেতু আর উল্কার বৃষ্টি তো পৃথিবী একা পায়নি! অন্যান্য গ্রহেও একই ধরনের ঘটনা ঘটছিল। বরফের মোড়ক তাদের মাটিতেও গিয়ে পৌঁছেছিল। তা হলে শুধু পৃথিবীই কেন পেল প্রাণ? সোমবার শঙ্করবাবু আনন্দবাজারকে এর উত্তরে বলেন, “এটা নিছকই একটা চান্স বা লাক বলতে পারেন।” অর্থাৎ? কাকতালীয় ঘটনা! পৃথিবীর বরাতজোর!
৩০ অক্টোবর ডেনভারে জিওলজিক্যাল সোসাইটি অফ আমেরিকার ১২৫তম বার্ষিক সভায় তাঁর এই তত্ত্ব প্রথম পেশ করেছিলেন শঙ্করবাবু। জানিয়েছিলেন, ধূমকেতু আর উল্কার খোলসের আড়ালে নিশ্চিন্তে লুকিয়ে ছিল যে সব কণা, তারাই পৃথিবীতে এসে খোলস ছেড়ে বের হয়ে নিজেদের মধ্যে বিক্রিয়া করতে শুরু করে। আর এ কাজে সাহায্য করেছিল ওই সব মহাজাগতিক বস্তুরই সঙ্গে করে আনা বরফ। যা ধূমকেতুর আঘাতে পৃথিবীর বুকে তৈরি হওয়া বিশালাকার গর্তগুলোকে ভরে দিয়েছিল জলে। যা থেকেই তৈরি হয় সমুদ্র। আর সেই সমুদ্রের আড়ালেই আগ্নেয়গিরির তাপে নিজেদের মধ্যে বিক্রিয়া করতে থাকে মহাজাগতিক বস্তুর আনা কণাগুলো। শঙ্করবাবুর ভাষায়, প্রক্রিয়াটা অনেকটা কড়াইয়ে রান্না হওয়ার মতো। ধূমকেতুর আঘাতে তৈরি গহ্বরগুলোই সেই কড়াইয়ের কাজ করেছিল।
বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর বয়স মোটামুটি ৪৫০ কোটি বছর। জন্মের প্রথম ৫০ কোটি বছর পৃথিবী তার সবচেয়ে টালমাটাল প্রলয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে দিয়ে গিয়েছিল। তার পর সে কিছুটা ঠান্ডা হতে শুরু করে। যদিও তখনও বিষাক্ত সব গ্যাসে ভরে ছিল বায়ুমণ্ডল। থেকে থেকে পৃথিবীর বুকে বৃষ্টির মতো আছড়ে পড়ছিল উল্কা আর ধূমকেতুর টুকরো। তারই মধ্যে সবার অগোচরে সমুদ্রের গভীর খাতে তৈরি হচ্ছিল প্রাণ। আজ থেকে প্রায় ৪০০ কোটি বছর আগের ঘটনা।
জীবাশ্মবিদ শঙ্কর তাঁর এই তত্ত্বে উপনীত হয়েছেন জীবাশ্মের সূত্র ধরেই। পৃথিবীর তিনটে অঞ্চল অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা আর গ্রিনল্যান্ডে এখনও পর্যন্ত প্রাচীনতম এবং সব থেকে ভাল অবস্থায় থাকা বেশ কিছু জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করেন বিজ্ঞানীরা। শঙ্করবাবু ফোনে আনন্দবাজারকে বলেছেন, “এই অঞ্চলে অনেকে মিলেই গবেষণা চালাচ্ছিলেন। তাঁর মধ্যে আমিও ছিলাম। কিন্তু ধরা যাচ্ছিল না ঠিক কোথায় প্রাণ তৈরি হয়েছিল। সেই কড়াইটাই বোধহয় খুঁজে পেয়েছি। প্রাণের হোলি গ্রেলকে।” তবে শঙ্করবাবুর মতে, একাধারে যেমন প্রাণ দিয়েছে তেমনি এই উল্কা কেড়েছে বহু প্রাণ। উল্কার অভিঘাতেই ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছে কি না, এখন সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তিনি।
অন্য দিকে শঙ্করের তত্ত্ব নিয়ে আলোড়ন শুরু হয়ে গিয়েছে বিজ্ঞানী মহলে। মহারাষ্ট্রের বুল্দানার লোনার সরোবরই হোক বা মেক্সিকোর চিকসুলুব খাত পৃথিবীর বুকে ধূমকেতু বা উল্কাপাত কী প্রভাব তৈরি করতে পারে, তা নিয়ে এমনিতেই বিজ্ঞানীদের কৌতূহলের অন্ত নেই। অনেকের প্রশ্ন, কী করে নিশ্চিত হওয়া যাবে যে এই মহাজাগতিক বস্তুরা একেবারে বরফ আর প্রাণ সৃষ্টির জন্য দরকারি কণা নিয়ে এসেছিল পৃথিবীতে? পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকলেই তো সেই বরফ বাষ্প হয়ে উড়ে যাওয়ার কথা!
জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার প্রাক্তন ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল বিমলেন্দু দে যেমন বললেন, “তখন পৃথিবীর পরিস্থিতি ঠিক কী রকম ছিল তা এখন বসে বলা সম্ভব নয়। হয়তো উপযুক্ত পরিবেশ পেয়েছিল, তাই ধূমকেতু তার খোলসে মুড়ে বরফ নিয়ে আসতে পেরেছিল।” শঙ্করবাবুর তত্ত্ব মানলে মিষ্টি জলে প্রথম প্রাণ সৃষ্টি হওয়ার তত্ত্ব খারিজ করে দিতে হবে এমনটা মানতে রাজি নন বিমলেন্দুবাবুূ। তাঁর মতে, “শঙ্করবাবুর এই মত একটা তত্ত্ব। এখনও গবেষণার অবকাশ আছে।”
আবার জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার প্রাক্তন সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল বিজন সাহার মতে, প্রাণ সৃষ্টির এই তত্ত্ব মানতে গেলে জীবাশ্ম আর পাথরের বয়স পরীক্ষা করা একটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। কিন্তু সঠিক অবস্থায় জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়াটাই বেশ কঠিন কাজ বলে মনে করেন বিজনবাবু।
কিন্তু প্রাণের আঁতুড়ঘর হিসেবে পৃথিবীর কপালই শুধু খুলল কেন? বিমলেন্দুবাবু এবং বিজনবাবুর মতে, “পরিবেশটা হয়তো ভাল ছিল। যেটা অন্য কোনও গ্রহে পাওয়া যায়নি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.