ওদের কারও নাম পুণে, কেউ ব্রোচ বা লোনার বা ভোর! কিন্তু ওরা ভারতের নয়, এ পৃথিবীরও নয়। ওরা মঙ্গলের।
লাল গ্রহের মাটিতে অন্তত আটটি গহ্বরের নামকরণ ভারতীয় শহরের নামে। অথচ মঙ্গল-অভিযাত্রী দেশের তালিকায় ভারতের নাম নেই এখনও। সব কিছু ঠিকঠাক চললে এ বার হয়তো সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের পরে চতুর্থ অভিযাত্রী হিসেবে ভারত তার নাম তুলতে পারবে।
কিন্তু ভারতীয় নাম ইতিমধ্যেই মঙ্গলে পৌঁছল কী করে?
বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স-এর বিজ্ঞানী সুজন সেনগুপ্ত জানালেন, ভিন্ গ্রহের মাটিতে কোনও গহ্বর আবিষ্কার হলে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থা (ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিকাল ইউনিয়ন) তার নামকরণ করে। ১ কিলোমিটার থেকে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত ব্যাসের গহ্বরের নাম দেওয়া হয় জায়গা বা শহরের নামে। ৬০ কিলোমিটারের বেশি ব্যাসের গহ্বরের নাম দেওয়া হয় প্রয়াত বিজ্ঞানী বা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে। সে ভাবেই ব্রোচ, কাকোরি, লোনার, ভোর কিংবা পুণের মতো ভারতীয় শহরের নামে গহ্বরের নামকরণ হয়েছে। এ বার জন্মের সাড়ে চার দশক পরে সেই সব গহ্বরের ছবি ক্যামেরায় তুলবে ইসরো। আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে গন্তব্যে পৌঁছনোর কথা মঙ্গলযানের। |
উৎক্ষেপণ |
মঙ্গলবার দুপুর ২:৩৮
শ্রীহরিকোটা, অন্ধ্রপ্রদেশ |
|
গহ্বর নামা |
|
নাম |
নামকরণের বছর |
• কাকোরি |
১৯৭৬ |
• ব্রোচ |
১৯৭৬ |
• সান্ডিলা |
১৯৭৬ |
• ভের |
১৯৭৬ |
• ভোর |
১৯৭৯ |
• পুণে |
১৯৮৬ |
• রায়দুর্গ |
১৯৯১ |
• লোনার |
২০০৭ |
মঙ্গলের মাটিতে |
|
মঙ্গলবার দুপুর ২টো ৩৮ মিনিটে চেন্নাই থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র থেকে লাল গ্রহে পাড়ি দেবে ভারতের মঙ্গলযান। সোমবার ইসরোর মুখপাত্র বি আর গুরুপ্রসাদ জানালেন, পিএসএলভি-সি২৫ রকেটে জ্বালানি ভরার কাজ শেষ। শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ কেন্দ্র ও বেঙ্গালুরুতে ইসরোর সদর দফতরের কন্ট্রোল রুম সমন্বয় ব্যবস্থা খুঁটিয়ে দেখে নিয়েছে। পোর্ট ব্লেয়ার ও ব্রুনেইয়ের গভীর সমুদ্র যোগাযোগ ব্যবস্থা কেন্দ্রের (ডিপ সি নেটওয়ার্ক সেন্টার) সঙ্গেও সমন্বয় সাধন হয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে নালন্দা ও যমুনা নামে দু’টি ভারতীয় জাহাজ দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেখান থেকে এক দল বিজ্ঞানী উৎক্ষেপণ ও তার পরের গতিপথ পর্যবেক্ষণ করবেন।
ভারতের মঙ্গল অভিযান নিয়ে শুধু বিজ্ঞানীরা নন, উত্তেজিত সারা বিশ্বের ভারতীয়রাও। তামিলনাড়ুর রাজধানীতে বসে ইসরোর এক মুখপাত্র বলছিলেন, “শুধু দেশ নয়, মঙ্গলযানের উৎক্ষেপণের দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা বিশ্ব। বিদেশ থেকেও উৎসাহিত আত্মীয়-বন্ধুদের ঘনঘন ফোন আসছে।” বিষয়টা যে মিথ্যা নয়, তার প্রমাণ অবশ্য গত কয়েক দিনেই পাওয়া গিয়েছে। ২২ নভেম্বর ফেসবুকে আত্মপ্রকাশ করে ইসরোর মঙ্গল অভিযান। সোমবার বিকেল অবধি সেই পাতায় ২৮ হাজারেরও বেশি লোক ‘লাইক’ করেছেন। অভিযানের তথ্য জানিয়ে এক-একটা পোস্টে উপচে পড়ছে মন্তব্য।
নাসার মঙ্গল অভিযানের চেয়ারম্যান বাঙালি বিজ্ঞানী অমিতাভ ঘোষ। ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়েছিলেন এ যাবৎ কালের সব থেকে চর্চিত অভিযান কিউরিওসিটি রোভার বা ‘কৌতূহলে’র সঙ্গেও। তিনি বলছেন, “নিজের দেশ এমন অভিযান করছে দেখে একটা আলাদা আনন্দ হচ্ছে।” ঘটনাচক্রে ভারতীয় যানের রওনা দেওয়ার ১৩ দিনের মাথায় ফের মঙ্গল অভিযান শুরু করছে নাসা-ও। মার্স অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যান্ড ভোলাটাইল ইভলিউশন (মাভেন) নামে ওই মহাকাশযানটিও ভারতীয় যানের মতো মঙ্গলের চারপাশে চক্কর কাটবে। পরীক্ষা চালাবে গ্রহের আবহাওয়ায়।
ভারত ও আমেরিকার এই পরপর মঙ্গলযাত্রা নিয়ে যথেষ্ট উচ্ছ্বসিত নাসার প্রধান চালর্স বলডেন-ও। একটি সর্বভারতীয় চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “ভারত ও আমেরিকা একই সঙ্গে মঙ্গল নিয়ে গবেষণা করবে, এটা তো খুবই আনন্দের।” ইসরোর মঙ্গল অভিযানেও অবশ্য জুড়ে রয়েছে নাসা। ইসরো জানিয়েছে, অভিযানে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা যোগাযোগ প্রযুক্তি দিয়ে সাহায্য করবে। গোটা অভিযানের উপরে নজর রাখবেন ইওরোপীয় ও জাপান মহাকাশ গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞানীরাও।
আশঙ্কার কিছু নেই তো? পৃথিবীর কোনও দেশই কিন্তু এ পর্যন্ত প্রথম চেষ্টায় মঙ্গল-অভিযানে সফল হয়নি। জাপান বা চিনের মতো দেশও তার মধ্যে পড়ে। সুজনবাবুও বলছেন, “সামান্য ভুল বা যান্ত্রিক ত্রুটির ফলে বিপর্যয় ঘটতে পারে।” মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে উৎক্ষেপণের পর থেকে লক্ষ্যে না পৌঁছনো পর্যন্ত যে কোনও সময়েই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যদিও ইসরোর বিজ্ঞানীরা পুরোমাত্রায় তৈরি বলেই দাবি করছেন। ইসরো জানিয়েছে, ৩১ অক্টোবর মহড়া সফল হয়েছে। তার পর থেকে যাবতীয় প্রযুক্তিগত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আবহাওয়া দফতর বলছে, মঙ্গলবার চেন্নাইয়ের আকাশও পরিষ্কার থাকবে।
তা হলে কি কাল ইতিহাসের পথে হাঁটা শুরু করবে ইসরো? চেন্নাইয়ের অতিথিশালার লনে দাঁড়িয়ে গুরুপ্রসাদ বললেন, “অল ইজ ওয়েল।” |