এক দিকে ক্ষতির মুখে পড়েছে সংস্থা। অন্য দিকে আবার মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মিটারে কারচুপি করে লাগামছাড়া বিদ্যুৎ চুরি। গত সপ্তাহখানেকে এই রকম চারটি চুরি ধরেছেন রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার আধিকারিকেরা। চুরি রুখতে গড়া হয়েছে টাস্ক ফোর্সও। চুরি ধরার পাশাপাশি গ্রাহকদের সচেতন করার কাজও টাস্ক ফোর্স করবে বলে সংস্থা সূত্রে জানানো হয়েছে।
আসানসোল ডিভিশনের বরাকর ও আসানসোল শাখায় ক্ষতির মুখে পড়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। এর কারণ খুঁজতে সম্প্রতি আসানসোলে আসেন সংস্থার চেয়ারম্যান কাম ম্যানেজিং ডিরেক্টর (সিএমডি) নারায়ণস্বরূপ নিগম। কী ভাবে লাভের মুখ দেখা যাবে, তিনি তা জানতে চাইলে এলাকায় বিদ্যুৎ চুরির প্রসঙ্গটি তোলেন এই ডিভিশনের আধিকারিকেরা। বৈঠকে ঠিক হয়, একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স গড়ে এই চুরি রুখতে হবে। সিএমডি বলেন, “আমি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করে এই চুরি রোখার নির্দেশ দিয়েছি। সেই কাজ শুরু হয়েছে। মিটারে কারচুপি করে বিদ্যুৎ চুরিতে অভিযুক্ত চার জনকে ধরা হয়েছে। থানায় অভিযোগ হয়েছে। পুলিশকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” তিনি আরও জানান, এই শিল্পাঞ্চলে একটি অপরাধচক্র গজিয়ে উঠেছে। তারা গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পয়সার বিনিময়ে মিটারে কারচুপি করে দিচ্ছে। তাদের কথার মারপ্যাঁচে ভুলে গ্রাহকেরা এই অপকর্ম করে চুরির দায়ে ধরা পড়ছে। নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “আমাদের অফিসারেরা এই চক্রটিকে ধরার চেষ্টা করছে।”
পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সাত দিনে ধরা পড়া চারটি জালিয়াতিই পর্ষদের বরাকর শাখা এলাকায়। প্রথমটি ধরা পড়ে কুলটির নিউ রোড এলাকায় একটি মিষ্টির দোকান ও একটি রেস্তোঁরায়। দুই গ্রাহক শুভাশিস চট্টোপাধ্যায় ও মিতালি চট্টোপাধ্যায় এ জন্য কয়েক লক্ষ টাকা জরিমানাও দেন। এর পরেই কুলটির বহাল, নিউ রোড ও থানা মোড় এলাকার তিন জনের মিটারে কারচুপি ধরা পড়ে। এ সব ক্ষেত্রেও পর্ষদ গ্রাহকদের মোটা টাকা জরিমানা করেছে। সংস্থার আসানসোল ডিভিশনের প্রধান মিতেশ দাশগুপ্ত বলেন, “পর্ষদের নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কী ভাবে মিটারে কারচুপি হচ্ছে? মিতেশবাবু জানান, সব ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, একটি বিশেষ রেসিস্ট্যান্স যন্ত্র মিটারে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। সেটি মিটারের গতি অনেক কমিয়ে দেয়। ফলে, বিদ্যুতের খরচ অনেক কম হয়। মিতেশবাবু বলেন, “এই যন্ত্রটি লাগানো সহজ নয়। পর্ষদ যে ভাবে মিটার সিল করে, ওই যন্ত্র প্রতিস্থাপন করে হুবহু এক ভাবেই মিটার সিল করে দিচ্ছে অপরাধীরা। রীতিমতো পারদর্শী লোকজন যে এই কাজ করছে, তা এর থেকেই পরিষ্কার।” মিতেশবাবু জানান, একটি চক্র শিল্পাঞ্চলের নানা জায়গায় এই অপকর্ম করছে।
বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এক কর্তা জানান, আসানসোল মহকুমায় বছরে প্রায় ৩০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। অথচ মহকুমায় গত দশ বছরের তুলনায় গ্রাহকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আসানসোলের রেলপাড়, ধ্রুবডাঙা, বার্নপুরের রহমতনগর, কুলটির কেন্দুয়া বাজার, বরাকরের একাংশ ও রানিগঞ্জের একাংশে নিয়মিত বিদ্যুৎ চুরি হচ্ছে বলে জেনেছে সংস্থা। এ সব অঞ্চলে মূলত হুকিং করে বিদ্যুৎ চুরি হয়। পর্ষদের কর্তারা জানান, বেশ কিছু অঞ্চলে ঢাকা তারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে হুকিং কিছুটা কমানো গেলেও চুরি না কমায় চিন্তায় পড়েন তাঁরা। সবিস্তার অনুসন্ধানের পরে মিটারে কারচুপির বিষয়টি চলে আসে। পর্ষদের কাছে খবর, মিটারে কারচুপির ঘটনায় বরাকর শাখার পরেই রয়েছে আসানসোল ও রানিগঞ্জ। সংস্থার সিএমডি নারায়ণস্বরূপ নিগম জানান, আগামি দু’মাস মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে টাস্কফোর্স অভিযান জারি রাখবে। দু’মাস পরে তিনি আসানসোলে এসে পরিস্থিতির পর্যালোচনা করবেন। |