|
|
|
|
বিস্ফোরণের আগেই ঘুরে যান শীর্ষ নেতা
কৌশিক চৌধুরী • শিলিগুড়ি |
নেপালের ধূলাবাড়ি এলাকার গোপন ডেরায় গত জুন মাসে বৈঠক করে একযোগে রাজ্যের আলিপুরদুয়ার ও অসমের বঙ্গাইগাঁও শহরে সাইকেল বোমা বিস্ফোরণের পরিকল্পনা তৈরি করেছিল কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন। বিস্ফোরণের এক দিন আগে এলাকাগুলি ঘুরে দেখে যান কেএলও-র অন্যতম শীর্ষ নেতা লাল সিংহ ডেকা বলে পুলিশ ও গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। শনিবার শিলিগুড়ি ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কের দাগাপুর থেকে কেএলও জঙ্গি ধনঞ্জয় রায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনই তথ্য জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ১৯৪৯ সালের ২৮ অগস্ট কোচবিহার ভারতভুক্তির দাবিতে কেএলও তাঁদের প্রস্তাবিত কামতাপুর এলাকায় এ বছরের ২৮ অগস্ট কালা দিবস এবং ২৪ ঘণ্টা বন্ধ ডাকে। নিম্ব অসমের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গেও বন্ধ-র কথা সংগঠনের তরফে সংবাদমাধ্যমের চিঠি দিয়ে জানানো হয়। কিন্তু বন্ধে সাড়া মিলবে না ধরে নিয়েই নিজেদের অস্তিত্বের প্রমাণ দিতেই ২৯ অগস্ট ওই দুটি এলাকাতেই একই ধরনের বিস্ফোরণ করার ছক করা হয়।
বঙ্গাইগাঁও বাজারে গোপন ঘাঁটি থেকে সাইকেল, টাইমার বোমা রাখার বন্দোবস্ত করা হয়। আর আলিপুরদুয়ারে অসম থেকে টাইমার, বিস্ফোরক-সহ বোমাটি পাঠানো হয়। দুই জায়গাতেই সকাল ১০টা ১০ মিনিট বিস্ফোরণের সময় রাখা হয়েছিল। বঙ্গাইগাঁওতে বিস্ফোরণ হলেও আলিপুরদুয়ারে আগে পুলিশ বোমাটি উদ্ধার করে। পরে স্থানীয় বিএম ক্লাব মাঠে নিস্ক্রিয় করতে গিয়ে সিআইডি বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডের কর্মী লালবাহাদুর লোহার মারা যান। তদন্তে নেমে পুলিশ দুই জনকে ধরে। ঘটনার আগের রাতে অর্থাৎ ২৮ অগস্ট মাঝরাতে সাইকেল বোমাগুলি ঘটনাস্থলে রাখা হয়।
গত শনিবার ধরা পড়ার পর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তরফে ধৃত ধনঞ্জয়কে জেরা করা শুরু হয়। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ধৃত ধনঞ্জয় জানায়, নেপালের ধূলাবাড়ি লাগোয়া এলাকায় কেএলও-র নেতারা সক্রিয়। জুন মাসের বিভিন্ন সময়ে সেখানে সংগঠনের শীর্ষ নেতারা আসেন। এলাকার একটি বাড়িতে গোপনে বৈঠক হয়। সেখানেই ওই নাশকতার ছক চূড়ান্ত হয়েছিল। এর পুরো দায়িত্ব দেওয়া সংগঠনের সংগঠনের কমান্ডর ইন চিফ শ্যাম রাইকে। তিনি সঙ্গী হিসাবে টম অধিকারি এবং লাল সিংহ ডেকাকে বেছে নেন। বৈঠকে মঞ্চুলাল সিংহ, প্রদীপ সিংহ ছাড়াও সংগঠনের তিন জন শীর্ষ নেতাও উপস্থিত ছিলেন। বিস্ফোরণের এলাকা হিসাবে বাজার এবং সময় সকাল বেছে নেওয়া হয়।
রাজ্য ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, দুটি শহরে ঘুরে জায়গা নির্বাচন করার ভার দেওয়া হয়েছিল সংগঠনের অ্যাসিস্ট্যান্ট অর্গানাইজিং সেক্রেটারি লাল সিংহ ডেকাকে। এর জন্য তিনি ২৭ অগস্ট এলাকাগুলি ঘুরেও দেখে যান। পাশাপাশি, সমস্ত কিছু সমন্বয়ের দায়িত্ব বর্তায় টম অধিকারির উপরে। তিনি বিস্ফোরণ-কান্ডে লিঙ্কম্যান যুক্ত সন্দেহে গ্রেফতার ধূপগুড়ির মেনকা এবং গৌরাঙ্গ রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন বলে তদন্তকারীদের দাবি। বিস্ফোরক উদ্ধার, পুলিশ কর্মীর মৃত্যু সবই তাঁরাই টমকে জানিয়ে দিয়েছিলেন বলে ওই অফিসারেরা দাবি করেছেন। উল্লেখ্য, ধৃত ধনঞ্জয় এই দুই ঘটনায় জড়িত না থাকলেও মালদহের বিজেপি নেতা খুন, গাজল থানার পাশে বিস্ফোরণ-সহ অন্য একাধিক মামলা জড়িত বলে পুলিশ অফিসারেরা জানিয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী অফিসারদের অনুমান, ধনঞ্জয়কে জেরা করে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে ২০১২ সাল থেকে ধনঞ্জয় নেপালেই ঘাঁটি গেড়ে সংগঠনের কাজ করছিল। আর নেপাল থেকেই কেএলও সাম্প্রতিক গতিবিধির খবর মিলেছে। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বলেন, “ধনঞ্জয়কে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হচ্ছে।” ১৯৯৩-এ গজিয়ে ওঠা কেএলও ২০০৩ সালে ভুটানের অপারেশন ফ্লাশ আউটের পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সংগঠনের শীর্ষ নেতারা বাংলাদেশে গা ঢাকা দেন। দীর্ঘদিন পর এ বছরের এপ্রিল মাসে সংগঠনের ১৫ জনের কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা করে কেএলও। এর পরেই অগস্ট মাসে ওই দুটি বিস্ফোরণের ছক কষা হয়।
|
পুরনো খবর: একই ভুল, বোমা নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে ছিন্নভিন্ন পুলিশকর্মী |
|
|
|
|
|