নজির গড়ার জন্য মুম্বই সূচককে দেওয়ালি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি। দালাল পথে আলোর রোশনাই দেখা গিয়েছে শুক্রবারই, যে-দিন সেনসেক্স ভেঙে দিয়েছে ২০০৮-এ গড়া নজির। তপ্ত বাজারে ওই দিন সূচক সর্বোচ্চ ২১,২৯৪ অঙ্ক ছুঁয়েছিল। ২০০৮-এর ১০ জানুয়ারি সেনসেক্সের সর্বোচ্চ অবস্থান ছিল ২১,২০৭ পয়েন্ট।
তবে সে বারের এবং এ বারের এই বড় উত্থানের মধ্যে এক বিরাট পার্থক্য আছে। সে বারের উত্থান ছিল সর্বাত্মক। এ বারে খুবই আংশিক। কারণ উত্থানে অংশ নেয়নি বেশির ভাগ শেয়ার। কম-বেশি অর্ধেক সেনসেক্স-শেয়ারই ম্রিয়মাণ ছিল। বেশ কিছু ভাল শেয়ারই তাদের রেকর্ড উচ্চতা থেকে এখনও অনেক পিছিয়ে। যেমন: স্টেট ব্যাঙ্ক, রিলায়্যান্স, বিএইচইএল ইত্যাদি। অন্য দিকে মিড ক্যাপ এবং স্মল ক্যাপ শেয়ারগুলি প্রায় ৫০% পিছিয়ে। সূচক রেকর্ড ভেঙেছে হাতে গোনা কয়েকটি শেয়ারে ভর করে। যেমন: ইনফোসিস, টিসিএস, সান ফার্মা, ড. রেড্ডিজ ল্যাব, হিরো মোটোকর্প, আইটিসি, হিন্দুস্তান- ইউনিলিভার, মারুতি-সুজুকি ইত্যাদি।
উত্থানের হাওয়া সারা বাজারে ছড়িয়ে না-পড়ার কারণে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়নি গোটা লগ্নির বাজারে। বিদেশি লগ্নিকারীরা গুটিকতক প্রথম সারির শেয়ারকে নিশানা করায় সূচক এতটা উঠেছে। সাধারণ লগ্নিকারীরা আদৌ সামিল হননি এই তেজী বাজারে।
অর্থনীতির দিক থেকে দেখলে তেমন কোনও যুক্তি পাওয়া যায় না এই উত্থানের পিছনে। পণ্যমূল্য লাগামছাড়া। সুদের হার ঊর্ধ্বমুখী। কমার আশঙ্কা আর্থিক বৃদ্ধিরও। এই পরিস্থিতিতে শেয়ার বাজারের তুঙ্গে থাকার কথা নয়। মূলত তা উঠেছে ভবিষ্যতের আশায় ভর করে।
অর্থনীতিতে অনেক মুকুল দেখা দিয়েছে। তা থেকে কিছু ফল ফলবে বলে আশা করা হচ্ছে। রফতানি বাড়ছে। কৃষি উৎপাদন বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল। প্রাণ ফিরেছে পরিকাঠামো শিল্পে। আশার তুলনায় কোম্পানি ফলাফল অনেকটাই ভাল। রঘুরাম রাজনের ঋণনীতি পছন্দ হয়েছে বাজারের। ফলে রেপো রেট বাড়া সত্ত্বেও তেতে উঠেছে ব্যাঙ্ক শেয়ার। সব মিলিয়ে অপেক্ষাকৃত ভাল সময়ের আশা করছে বাজার।
সুসময় অবশ্য রাতারাতি আসবে না। ভাল-মন্দের মিশ্রণ থাকায় এই উচ্চতা থেকে বাজার নামতেও পারে। অর্থাৎ পা ফেলতে হবে বেশ সাবধানে। উপযুক্ত দাম পেলে শেয়ার বিক্রি করার এটি বড় সুযোগ। ভাল শেয়ার চড়া দামে বিক্রি করে ওই শেয়ারই আবার কম দামে ধরার সুযোগ দেবে এই বাজার। যে-সব ভাল শেয়ার এই উত্থানে চাঙ্গা হয়নি, বাছাই করে এমন সব শেয়ারেও লগ্নির কথা ভাবা যেতে পারে এই সময়ে।
সুদের হার আকর্ষণীয় হওয়ায় বাজার থেকে মোটা লগ্নি টানছে করমুক্ত বন্ড ইস্যুগুলি। ৪০,০০০ কোটি টাকা লগ্নি হয়ে যেতে পারে এই পথে। ফলে টাকায় টান পড়তে পারে ইক্যুইটির বাজারে। অল্প হলেও সুদ বাড়াতে শুরু করেছে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি। অনিশ্চিত শেয়ার বাজারে বহু মানুষ ঝুঁকবেন ব্যাঙ্ক জমার প্রতিও। বাজারে সুদের হার বেড়ে ওঠায় ভাল মন্দা চলছে বন্ডের বাজারে। এর ফলে খারাপ সময় শুরু হয়েছে ঋণপত্র-নির্ভর মিউচুয়াল প্রকল্পগুলির। এই অবস্থায় চড়া সুদে নতুন বন্ড কেনা ভবিষ্যতের জন্য লাভজনক হতে পারে, যখন বাজারে সুদের হার কমতে শুরু করবে।
অর্থনীতির আগামী দিনে যদি প্রকৃত উন্নতি ঘটে, তবে হয়তো আমরা তেজী ভাব গোটা বাজারেই দেখতে পাব, এ কথা মাথায় রেখে অল্প অল্প করে ভাল শেয়ারে এখন থেকেই লগ্নি করা যেতে পারে। অথবা টাকা ব্যাঙ্কে ছোট মেয়াদে গচ্ছিত রেখে অপেক্ষা করা যেতে পারে সুদিনের জন্য। ভাল পোর্টফোলিও-যুক্ত সুবিন্যস্ত মিউচুয়াল প্রকল্পেও অল্প অল্প করে লগ্নির কথা ভাবা যেতে পারে এই সময়ে। আশা করা যাক, বাজারময় রংমশাল জ্বলবে এবং বাজারের প্রকৃত উত্থান হবে নতুন সম্বতে।
|