ভরা উৎসব মরসুম। সঙ্গে ধনতেরস। এই সময়েও কপালে চিন্তার ভাঁজ যাচ্ছে না স্বর্ণশিল্পীদের। বেলডাঙার প্রবীণ ব্যবসায়ী ও স্বর্ণশিল্পীদের মতে, গত ৩০ বছরে এমন খারাপ দশা আসেনি। মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর থেকে রঘুনাথগঞ্জ বা জঙ্গিপুর থেকে বেলডাঙাসব জায়গায় অবস্থা একই।
বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক তথা বহরমপুর শাখার সম্পাদক গঙ্গাধর বসাক বলেন, “দৈনন্দিন বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে মধ্যবিত্ত বাঙালি। তাই ধনতেরসে সেই ধরনের ক্রেতা পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। তাই শিল্পীদের আর আগের মতো কাজ নেই।”
তবে গত বৃহস্পতিবার সোনার দাম (গহনা সোনা) প্রতি দশ গ্রাম ৩০ হাজার অতিক্রম করে। ফলে, মে মাসে যে ৩৪,০০০ টাকা দাম গিয়েছিল এখন তার অনেক কমেই সোনা পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু তাতেও ধনতেরসে সেভাবে পছন্দসই গয়না কিনতে পারছেন না ক্রেতারা। |
বহরমপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
বান্ধবী শবরী সেনকে সোনার আংটি দিতে চেয়েছিল সম্রাট বসু। কিন্তু সোনার দর বাড়ায় এ বছর আর বান্ধবীকে খুশি করতে পারছেন না তিনি। সম্রাট বলেন, “মাসখানেক আগে সোনার দামটা কমেছিল। কিন্তু এখন সোনার যা দাম, সব খরচ সামলে সোনা কেনা অসম্ভব।”
বহরমপুরের স্বর্ণব্যবসায়ী বিপ্রদাস চন্দ্র বলেন, “ এ বছর ধনতেরসে গহনার চাহিদা অন্য বারের তুলনায় কম ছিল।” জঙ্গিপুরের ব্যবসায়ী রেজাউল করিম বলেন, “মাস কয়েক আগে সোনার দাম বেশ কমেছিল। ভরি প্রতি প্রায় ৪-৫ হাজার টাকা কম। তখন মানুষ সোনা কিনেছে। ফলে এখন ক্রেতা নেই।”
বেলডাঙার বাসিন্দা রতন দাস অবশ্য পছন্দ মতোই সোনা কিনেছেন। তিনি বলেন, “কয়েক মাস আগে সোনার দাম অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। তার থেকে দাম এখন অনেকটাই কম। তাই ছোট একটা সোনার গয়না কিনলাম।” রতনবাবু মনে করেন, “অন্য খরচ তো থাকবেই। তবু তার থেকে মাসে মাসে টাকা জমিয়ে সোনা কিনি। এটাও তো এক ধরনের বিনিয়োগ।”
বেলডাঙার স্বর্ণকাররা জানান, বিক্রি কম হলেও প্রতি বছরের মতোই এ বছরও চাহিদা রয়েছে মকরমুখ বালা, বিছে হার, বাউটি, কানের দুলের। এ ছাড়াও সানিয়া মির্জা, জে বালি, সুজনসখী, সাতদানা, সানরাইজ, বেলপাতা, ওপেলা নাকছাবিরও চাহিদা রয়েছে।
বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির বেলডাঙা শাখার সম্পাদক কিশোর ভাস্কর বলেন, “৭০০ দোকান ছোট-বড় মিলিয়ে। সেখানে এক হাজারের বেশি শ্রমিক। তারা আজ অনেকেই বেকার। হাতের কাজ ভাল হলেও তা বাজারে বিকোচ্ছে না। উচ্চবিত্তদের কেউ কেউ আসলেও অন্যান্য বারের মতো চাহিদা নেই বাজারে।”
|