কিছুটা রাশ, কিন্তু সরকারি সীমায় বেঁধে রাখা যাচ্ছে না দাম
মুখ্যমন্ত্রীর কড়া অবস্থান এবং পুলিশি ধরপাকড়ের জেরে কিছুটা হলেও নামল আলুর দাম। কিন্তু রাজ্য সরকার এখনও আড়তদারদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় ছোট ব্যবসায়ীরা কার্যত অসহায় হয়ে পড়ছেন।
শনিবার কলকাতা বা রাজ্যের বেশ কিছু বড় বাজারেই রাজ্য সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে আলু বিক্রি হয়েছে। তবে বাছাবাছি না করার শর্তে। বেশির ভাগ মাঝারি ও ছোট বাজারে কিন্তু দাম ততটা নামেনি। বরং ব্যবসায়ীদের একাংশ হাত গুটিয়ে নেওয়ায় আলুর জোগানে টান পড়েছে। এর মধ্যেই তিন দিনের কর্মবিরতি শুরু করেছে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি।
রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতরের একাধিক কর্তার দাবি, সরকারি নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগে পাঁচ ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের পরেই আলুর দাম অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পাইকারি বাজারে ১১ টাকা এবং খুচরো বাজারে ১৩ টাকা কেজির বেশি দরে জ্যোতি আলু বিক্রি করতে সাহস পাচ্ছেন না দোকানিরা। এ দিন থেকেই সখেরবাজার, কালীঘাট, শ্যামবাজার ও লেক মার্কেট-সহ কলকাতার ছ’টি ব্যস্ত এলাকায় কৃষি বিপণন দফতরের উদ্যোগে ছোট লরিতে আলু বিক্রি শুরু হয়েছে। অন্য কিছু শহরেও আলু বিক্রি করার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মেদিনীপুর, খড়্গপুর ও ঝাড়গ্রাম শহরে আলু বিক্রির কাউন্টার খোলার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার এ দিন বলেন, “আলু বিক্রি করা সরকারের কাজ নয়। তা-ও আমরা ২০০ টন আলু বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাজারে দাম কমলেই সরকার আলু বিক্রি বন্ধ করে দেবে।” তিনি জানান, উত্তরবঙ্গে আলুর দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় ওখানে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হুগলির শেওড়াফুলিতে শনিবার এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই নিয়ে শুধু হুগলিতেই পাঁচ জনকে গ্রেফতার হল। কৃষি উপদেষ্টা বলেন, “বর্ধমানে আলু ব্যবসায়ীরা সরকারি দরে আলু বিক্রি করছেন। আরামবাগ এবং বাঁকুড়াতেও রবিবার থেকে সরকারি দরে আলু বিক্রি হবে।” জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার আলু ব্যবসায়ীরা সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা সরকার নির্ধারিত দামেই আলু বিক্রি করবেন।
এ দিন শ্যামবাজার মার্কেটে দেখা যায়, কৃষি বিপণন দফতরের ব্যানার লাগানো একটি ছোট লরিতে আলু বিক্রি হচ্ছে। সস্তায় পেয়ে অনেকেই বেশি-বেশি করে আলু কিনছেন। রাজারহাটের নারায়ণপুরের এক বাসিন্দা বলেন, “আমাদের বাজারে ১৮ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। এখানে সস্তা পেয়ে পাঁচ কিলো কিনে নিলাম।” আলুর গাড়ি লেগেছিল কালীঘাট থানার সামনেও। সেখানেও লম্বা লাইন। কিছুটা দূরেই লেক মার্কেটে অবশ্য ১৮ টাকা কেজিতে জ্যোতি আলু বিক্রি হয়েছে। এক দোকানদারের কাছে ১৩ টাকা দরে আলু চাইলে তিনি বলেন, “ওই আলু খেতে পারবেন না। ১৪ টাকারটা নিন, খারাপ হবে না। তবে ১৫ টাকারটাই নেওয়া ভাল।” ভবানীপুরের যদুবাবুর বাজারেও ১৬ টাকা কেজি দরে জ্যোতি আলু বিক্রি হয়। হাতিবাগান মার্কেটের আলু বিক্রেতা বাপি দে বলেন, “আমরা ১৩ টাকা কেজি দরে আলু দিচ্ছি ঠিকই, কিন্তু বেছে নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। ১৪ টাকায় নিলে তবেই বেছে নেওয়া যাবে।” হাতিবাগান বাজারের এক আলু বিক্রেতা বলেন, “আমরা অনেক আগে থেকেই আলু তুলে রাখি। যে দামে তখন আলু কিনেছি, এখন তা সরকারি নির্ধারিত দামে বেচতে গেলে ঘটি-বাটি বিক্রি করতে হবে।” গড়িয়াহাট মার্কেটের আলু ব্যবসায়ী মনোরঞ্জন সাহা বলেন, “শুক্রবারই আড়ত থেকে ৭০০ টাকায় ৫০ কিলো আলু কিনেছি। ঝাড়াই-বাছাই করে পাঁচ কেজি মতো বাদ যায়। এর পরে রয়েছে আনার খরচ। ফলে সরকারি দরে আলু দিতে গেলে প্রতি কিলোয় দু’-তিন টাকা ক্ষতি হবে।” আলুর দোকানি বাপি সাউ বলেন, “সরকার কম দামে আলুর জোগান দিলে তবেই আমরা কম দামে বেচতে পারব।” কৃষি দফতরের হিসেবে, রাজ্যের হিমঘরগুলিতে এখনও ১৮ থেকে ২০ লক্ষ মেট্রিক টন আলু মজুত রয়েছে। নিয়ম অনুয়ায়ী, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পরের মরসুমের জন্য হিমঘরগুলি ফাঁকা করে দেওয়ার কথা। অর্থাৎ তার মধ্যে ওই পরিমাণ আলু বের করে বাজারে নিয়ে আসতে হবে। তা সত্ত্বেও দাম চড়ায় এক শ্রেণির পাইকারদের দায়ী করছেন অধিকাংশ ছোট ব্যবসায়ী। তাঁদের দাবি, রাজ্যের প্রয়োজনের তুলনায় অন্তত চার গুণ বেশি আলু এখনও হিমঘরে রয়ে গিয়েছে। তার উপরে আড়াই-তিন মাসের মধ্যে ফের নতুন আলু উঠতে শুরু করবে। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে সব্জি আড়তদার সমিতির বক্তব্য, জ্যোতি আলুর দাম বাঁধতে হলে আগে বর্ধমানের আড়তে দাম বাঁধতে হবে। উত্তর দিনাজপুরের দুর্নীতিদমন শাখার ডিএসপি জ্যোতিষ রায়ও বলেন, “পাইকারি বাজারে আলুর দাম না কমলে সত্যিই খুচরো বাজারে আলুর দাম কমা সম্ভব নয়। তবে অভিযান চলবে।”
সরকার ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানো বন্ধ করায় গত কয়েক দিন ধরেই ক্ষুব্ধ আলু ব্যবসায়ীরা। এ দিনও অসমের গুয়াহাটিতে আলু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সন্দেহে কোচবিহারের দিনহাটায় ২০ টন আলু বোঝাই ট্রাক আটকানো হয়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বরেন মণ্ডল বলেন, “সরকারি কাউন্টার থেকে আলু বিক্রির ব্যবস্থা আমরাই করে দেব। কিন্তু ভিন্ রাজ্যেও আলু পাঠাতে দিতে হবে সরকারকে। নতুবা ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।”
রাজ্য সরকার অন্য রাজ্যে আলু পাঠাতে বাধা দেওয়ায় শনিবার থেকেই তিন দিন ব্যবসা বন্ধের ডাক দিয়েছে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক দিলীপ প্রতিহার জানান, আপাতত সোমবার পর্যন্ত ব্যবসা বন্ধ চলবে। এ দিনও ফের তিনি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি জানান। আলু ব্যবসায়ীরা পশ্চিম মেদিনীপুরে চন্দ্রকোনা রোডে পথ অবরোধও করেন। তবে সব ব্যবসায়ী তাঁদের সঙ্গে নেই। যেমন বর্ধমান শহরের ম্যান্ডেলা পার্কে এ দিন বর্ধমান সদর আলু ব্যবসায়ী সমিতিই সরকারি দরে আলু বিক্রি করে। বারবার আলু আনা হলেও তা প্রায় নিমেষে শেষ হয়ে যায়। সমিতির সভাপতি সুনীল সাহা বলেন, “আমাদের হাতে প্রচুর আলু রয়েছে। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আমরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রি করব।”
এ দিন দুর্গাপুরের চণ্ডীদাস বাজারে জ্যোতি আলু ১৪-১৫ এবং চন্দ্রমুখী ১৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। কৃষ্ণনগর, বাঁকুড়া, তমলুক, ডায়মন্ড হারবার, মালদহ সর্বত্রই একই চিত্র। জরিমানার ভয়ে অনেকে আপাতত ব্যবসা বন্ধ রাখার কথাও ভাবতে শুরু করেছেন। শিলিগুড়ির কয়েকটি বাজারে একশ্রণির ব্যবসায়ী ইতিমধ্যে আলু বিক্রি বন্ধও করে দিয়েছেন। কলকাতার মানিকতলা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক প্রভাতকুমার দাস বলেন, “আলুর দাম বেঁধে দেওয়া নিয়ে ক’দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে আমিও ছিলাম। কিন্তু যাঁরা বেশি দরে জ্যোতি আলু কিনেছেন, তাঁরা কি এখন লোকসানে বিক্রি করবেন?”
উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের আলুর আড়তদারেরা আবার দাবি করেন, “আমরা আগে থেকে দাম নির্ধারণের ব্যাপারটা জানতাম না।
তাই প্রচুর আলু হিমঘরজাত করা হয়েছে। আশা করা যায়, দু’এক দিনের মধ্যে তার বেশির ভাগই বিক্রি হয়ে যাবে। তখন নির্ধারিত দামেরও কমে আমরা আলু বিক্রি করতে পারব।”

এই সংক্রান্ত অন্য খবর:

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.