পাঁচ ট্রাক আলু আটকে বেচে দিলেন তৃণমূল কর্মীরা
লু নিয়ে এ বার অন্য জট। সরকারি নির্দেশ রূপায়ণে তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মীই পুলিশের দায়িত্ব হাতে তুলে নিলেন বাঁকুড়ায়। খাতড়ায় আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে আইন নিজেদের হাতে তুলে নিলেন তাঁরা। শুক্রবার রাতে আক্ষরিক অর্থেই শাসক দলের নেতা কর্মীরা পথে নেমে আলু বোঝাই পাঁচটি মিনি-ট্রাক আটক করলেন। শনিবার সকালে সেই আলু তাঁরা ১১ টাকা কেজি দরে, অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত পাইকারি দরে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রিও করে দেন। তৃণমূলের ওই নেতা-কর্মীদের দাবি, রাজ্য সরকারের নির্দেশ অমান্য করে ঝাড়খণ্ডে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ওই আলু। যদিও বাঁকুড়া জেলা প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির অভিযোগ, “এটা স্রেফ শাসক দলের গা-জোয়ারি।” ওই ব্যবসায়ী সমিতি ও পুলিশ-প্রশাসনের সূত্রে জানানো হয়েছে গাড়িগুলি সিমলাপালের বিক্রমপুর থেকে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে যাচ্ছিল। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ খাতড়ায় তৃণমূল কর্মীরা গাড়িগুলি আটকান।
প্রায় ৪০ টন আলু বিক্রির টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের দিয়ে দেওয়া হলেও এই ঘটনা শাসক দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। সেই সঙ্গে সামনে চলে এল তৃণমূলের অন্তর্বিরোধও। কারণ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যদের সিংহভাগই এখন শাসক দলেরই ছত্রছায়ায় রয়েছেন। তাঁদের একটা অংশ আলুর পাইকারি দর বাড়ানোর মূলে রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার বিকেলে রানিবাঁধের আখখুটায় মেদিনীপুর থেকে ওড়িশা ও ছত্তীসগঢ়ে আলু নিয়ে যাওয়ার সময় দু’টি ট্রাক আটকও করেছে পুলিশ।
খাতড়ার ঘটনা নিয়ে রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “অন্য রাজ্যে আলু রফতানির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও রাজ্যের বিভিন্ন জেলার মধ্যে আলু আনা-নেওয়ায় বাধা নেই। তবে কোনও রাজনৈতিক দল বা কোনও সংগঠন যদি ব্যবসায়ীদের আলুর গাড়ি আটকে চ্যালেঞ্জ করে এবং আইন নিজের হাতে তুলে নেয়, তা বরদাস্ত করা হবে না।” খাতড়ার ঘটনা সম্পর্কে জেলা প্রশাসন এবং জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী।
বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “ভবিষ্যতে এমন ঘটনা নজরে এলে সাধারণ মানুষ যাতে আগে প্রশাসনকে জানান, তা প্রচার করা হবে।” জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “পুলিশের কাছে ওই ঘটনার ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।” স্থানীয় সূত্রের দাবি, রাতে আলু ভর্তি মিনি-ট্রাকগুলি রাখা হয় খাতড়ায় পুলিশের সার্কেল ইনস্পেক্টরের অফিসের পাশে। খাতড়া থানার পুলিশকর্মীরাই ট্রাকগুলি নজরে রাখেন। যদিও পুলিশ সুপার তা মানতে চাননি।
খাতড়ার বাসিন্দা বাঁকুড়া জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূলের অন্যতম জেলা সাধারণ সম্পাদক শ্যামল সরকারের দাবি, “ওই পাঁচটি মিনি-ট্রাকে আলু ঝাড়খণ্ডে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। খবর পেয়ে আমাদের দলের কর্মীরা ট্রাকগুলি আটকান। পুলিশকে জানিয়ে এবং ওই আলু ব্যবসায়ীদের সম্মতি নিয়েই শনিবার সকালে স্থানীয় খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছে ১১ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করা হয়। বিক্রির টাকাও ব্যবসায়ীদের দেওয়া হয়েছে।”
তবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ স্বীকার করেছেন, “দলের যাঁরা এতে জড়িত, তাঁরা ঠিক করেননি। দলীয় ভাবে তাঁদের বোঝাব। এমন ব্যাপার কানে এলে সেটা প্রশাসনকেই জানানো উচিত।” বাঁকুড়া জেলা প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শান্তনু মান্নার ক্ষোভ, “ট্রাকগুলি বান্দোয়ানে যাচ্ছিল। তৃণমূলের লোকেরা গা-জোয়ারি করে ওই আলু বিক্রি করে দিতে বাধ্য করেছেন।” মহকুমাশাসক (খাতড়া) শুভেন্দু বসুও বলেন, “গাড়ি আটকানোর সময় আলু ব্যবসায়ীরা আমাদের অভিযোগ জানালে, যাঁরা আটকেছিলেন তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারত।”
খাতড়ার এই ঘটনায় অশনি-সঙ্কেত দেখছেন আলু ব্যবসায়ীরা। তাঁদের বক্তব্য, সরকারি সিদ্ধান্তের সুযোগ নিয়ে অন্য কেউ এ ভাবে আইন হাতে তুলে নিলে, সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। প্রশাসন এখনই কঠোর না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে। কৃষি বিপণনমন্ত্রীর আশ্বাস, “বাঁকুড়ার ওই ব্যবসায়ীরা গাড়ির নম্বর ও কাগজপত্র নিয়ে আমার কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন। আমি দেখছি, কী করা যায়।”

এই সংক্রান্ত অন্য খবর:


বাউল থিমে সাজছে মণ্ডপ
বাউল থিমের উপরে পুজো মণ্ডপ সাজিয়ে তুলেছে সিউড়ির কালীপুরের ঝঙ্কার সমিতি। খড়ের গোলঘর তৈরি করে সেখানে আলপনা ও বাঁশের কাজ দিয়ে অন্য রকম পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। রোজই বসছে বাউল গানের আসর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.