উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার জন্য রওনা হয়েও ফের জলপাইগুড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অনশনরত গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতা বিনয় তামাঙ্গকে। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুনি জেলা হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, সেখান থেকে বিনয়বাবুকে ‘রেফার’ করা হয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অ্যাম্বুল্যান্সে তাঁকে নিয়ে রওনা হন হাসপাতাল কর্মীরা। কিন্তু, প্রায় ৫ কিলোমিটার যাওয়ার পরে ফের বিনয়বাবুকে আচমকা জলপাইগুড়ি হাসপাতালে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই ঘটনার পরে অসুস্থ জেলবন্দি নেতাকে চিকিৎসা করানোর নামে হেনস্থার অভিযোগ তুলেছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেছেন, “একজন অসুস্থ ব্যক্তিকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা হাসপাতালের মধ্যে যে ভাবে টানাটানি করা হয়েছে। তা দুর্ভাগ্যজনক। এদিন জলপাইগুড়িতে এক প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়। এই হেনস্থার বিরুদ্ধে আলোচনা করে পদক্ষেপ করা হবে।” মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা জানান, গোটা ঘটনার কথা রাজ্য মানবাধিকার কমিশনে জানানো হবে।
কেন এই সিদ্ধান্ত? প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, মেডিক্যাল কলেজের থাকা যাবতীয় পরিকাঠামো জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে থাকায়, রাতের বেলায় অসুস্থ বিনয় তামাঙ্গকে খানাখন্দে ভরা জাতীয় সড়ক দিয়ে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নেওয়া হয়নি। জেলা স্বাস্থ্য দফতরও জানিয়েছে, জলপাইগুড়ি হাসপাতালেই অনশনরত বন্দি নেতার চিকিৎসা সম্ভব। প্রয়োজন হলে তাঁকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হতে পারে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, ভর্তির পর থেকে বিনয় তামাঙ্গ স্যালাইনের নল লাগাতে দেননি। কোনও ওষুধও খাচ্ছেন না। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকার বলেন, “জেলা হাসপাতালেই বিনয় তামাঙ্গের চিকিৎসা সম্ভব। ভর্তির পরে উনি চিকিৎসা নিতে অস্বীকার করায় চিকিৎসকরা তাঁকে রেফার করে দেন। তবে প্রথমেই কেন রেফার লেখা হল তাও খতিয়ে দেখব। উনি স্যালাইন নিচ্ছেন না। উদ্বেগে রয়েছি। ওঁর প্রস্রাবেও সংক্রমণ ধরা পড়েছে।”
সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, রেফার লেখার পরে, অসুস্থ নেতার চিকিৎসা রিপোর্ট জেলা স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে যায়, এবং জলপাইগুড়িতেই চিকিৎসা সম্ভব বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। ততক্ষণে অবশ্য বিনয় তামাঙ্গকে নিয়ে জেলা পুলিশের দল জলপাইগুড়ি শহর ছেড়ে চলে গিয়েছেন। জেলা পুলিশের এক শীর্ষকর্তার কথায়, “খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিনয় তামাঙ্গকে নিয়ে রওনা হওয়া দলটি সবে শহর ছেড়ে বেরিয়েছে। সে কারণেই তাঁদের ফিরিয়ে আনা হয়।” জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “স্বাস্থ্য দফতরের সিদ্ধান্ত মতোই পদক্ষেপ করা হয়েছে। জেলা হাসপাতালেই উপযুক্ত পরিকাঠামো থাকায় চিকিৎসার কোনও সমস্যা হবে না বলে জানানো হয়েছে।”
তবে সরকারি সূত্রের খবর, প্রথমে বিনয় তামাঙ্গকে শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও, পরে রাজ্য সরকারের শীর্ষ স্তরের নির্দেশে সেই সিদ্ধান্ত রদবদল করা হয়। পাহাড় লাগোয়া শিলিগুড়িতে রেখে বিনয় তামাঙ্গের চিকিৎসা করা ঠিক নয় বলে সরকারের একটি অংশ মনে করছে। সেই মতো সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়।
এদিন সকালে মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি রামপ্রসাদ ওয়াইবার নেতৃত্বে তিন জনের একটি প্রতিনিধি দল জেলা হাসপাতালের পুলিশ সেলে গেলেও তাঁদের বিনয় তামাঙ্গের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। রামপ্রসাদ ওয়াইবা বলেন, “বিনয় তামাঙ্গের চিকিৎসা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার যা ঘটেছে তাও দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের সঙ্গেও তাঁর দেখা করতে দেওয়া হয়নি।” গত ২২ অগস্ট একাধিক মামলায় কালিম্পং থানার পুলিশ বিনয় তামাঙ্গকে গ্রেফতার করে। বিভিন্ন মামলায় ধৃত সব মোর্চা নেতা কর্মীদের নিঃর্শত মুক্তির দাবিতে গত বুধবার থেকে জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে অনশন শুরু করেন তিনি।
|